একদিকে বাজারে ধানের দাম কম অন্যদিকে পাবনায় ধান ক্ষেতে বাদামী গাছ ফড়িং ও লেদা পোকার আক্রমনে কোন কীটনাশকেও কাজ না হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রোপা আমন ধান ক্ষেত। এতে ফলন বিপর্যয়ে দিশেহারা কৃষক। তবে রোগ ঠেকাতে পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ।
পাবনার ৯ উপজেলায় বেশী লাভের আশায় অধিক জমিতে রোপা আমন ধান রোপন করেছিলেন চাষিরা। কিন্তু ধানের শীর্ষ বের হতেই দেখা দেয় বাদামী গাছ ফড়িং আর লেদা পোকার আক্রমন। কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগের পরামর্শে বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করেও কাজে আসেনি। শেষ পর্যন্ত চিটা হয়ে গেছে ধান। এতে চরম লোকশানে পড়েছেন তারা।
চাষিরা জানান, ধানের ফলন এবার ৭ থেকে ৮ মণ করে হচ্ছে। কারেন্ট পোকা লেগেছে। গত বছর ১৪ থেকে ১৫ মণ করে আমরা কেটেছি। এবার কৃষকেরও লাভ হচ্ছে না আবার লেবারদেও লাভ হচ্ছে না।
আটঘরিয়ার ধলেশ^র গ্রামের কৃষক আক্তারুজ্জামান জানান, এবার ধান গাছে কারেন্ট পোকা লেগে ধান নষ্ট করে দিয়েছে। গত বছর তার এই জমিতে ফলন হয়েছে ২০ থেকে ২২ মণ এবার ৫ থেকে ৬ মণ হওয়াই কঠিন।
চাষিরা জানায়, এবার পোকার আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় বিঘায় ফলন হচ্ছে ৭ থেকে ৮মণ বলছেন চাষিরা। অন্যদিকে বাজারে দাম না থাকায় চরম লোকশানে তারা।
কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি অফিসের কোন সহযোগীতা পায়নি তারা। বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করেও তারা ফসল রক্ষা করতে পারেননি। এতে এবার ধানের চিটার পরিমাণই বেশী। ফলে ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা।
কন্দপপুর গ্রামের কৃষক আবু মুসা বলেন, আমরা ডিলারদের কাছ থেকে যে কীটনাশক নিয়ে জমিতে প্রয়োগ করেছি এ কীটনাশকেও কাজ হয়নি। কারেন্ট পোকা, লেদা পোকাগুলো থর ধান গাছ হয় তখনই লাগে। কৃষি অফিসারা ্এসে আমাদের ভালো পরামর্শও দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রামনগর গ্রামের কৃষক আবদুস সালাম বলেন, এমনিতেই ধান চাষে লাভ নাই তারপর আবার পোকার আক্রমণ এবার তার জমির ধানের ফলন না হওয়ায় ব্যাপক লোকশান গুনতে হচ্ছে। আগামীতে ধান চাষে না করে অন্য ফসলের দিকে ঝুকবেন বলছেন এই চাষি।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালনক মো: আজাহার আলী বলেন, আমাদের এই সময় আবহাওয়া জনীত কারণে কিছু পোকামাকড়ের আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। আমরা ইতোমধ্যেই বিপিএইচ নামের একটি পোকা (স্থানীয়রা এটাকে কারেন্ট পোকা বলে) এটা কোন কোন জায়গায় আক্রমণ লক্ষ করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা একযোগে প্রত্যেকটা এলাকায় আলোক ফাঁদ তৈরি করে, আলোক ফাঁদের মাধ্যমে এই সকল পোকা সনাক্ত করার চেষ্টা করেছি। কোন কোন জায়গায় যদি এমন পোকার আক্রমণ লক্ষ করা যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যে, বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করবে। জমিতে পানি থাকলে পানিটা জমি থেকে বের করে দেবে। আর এটা যতি তাৎক্ষণিক করা যায় তাহলে কৃষকদের ক্ষতি হবে না। এসব রোপ প্রতিরোধে আমাদের ২২৮জন উপ-সহকারী কৃষিকর্মকতা সার্বক্ষনিক মাঠে থেকে পরামর্শ দিচ্ছেন। এবং তাদের তিন দিনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কৃষকরা যেন রোগ বালাই মুক্তভাবে ধান ঘরে তুলতে পারে)
পাবনা জেলার ৯টি উপজেলায় এবার ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সোয়া লক্ষ্য মে:টন।