হলি আর্টিজানে হামলার রায়ে গোটা জাতির প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। সেদিনের সন্ত্রাসী হামলায় নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে। জঙ্গিবাদ উপড়ে ফেলতে জনগণের যে প্রত্যাশা, এই রায়ের মাধ্যমে তার একধাপ অগ্রগতি ঘটল। এই রায় আসতে কিছুটা বিলম্ব হলেও আমরা মনে করি, যেনতেন একটি রায় ন্যায়বিচারকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সে হিসাবে এই রায় আগামী দিনে জঙ্গিবাদ দমনে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। হামলার ৩ বছর ৪ মাস পর গত বুধবার যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশেই জঙ্গিবাদ উত্থানের মূলে দুটি কারণ চিহ্নিত করা যায়। ১. বিশ্বরাজনীতি, ২. জাতীয় রাজনীতি। এ দুটির মধ্যেই সাধারণত জঙ্গিবাদের জন্ম ও উত্থান হয়ে থাকে। বিশ্ব জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে নানা মুনির নানা কথা থাকলেও সর্বশেষ আমরা দেখেছি, নাইন-ইলেভেনকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে সারা পৃথিবীতে এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ ছড়িয়ে পরে। অথচ নাইন-ইলেভেনের ঘটনায় আজও সুনির্দিষ্টভাবে কোন তদন্তেই মুসলমানকে দায়ি করা যায়নি। নাইন-ইলেভেনের পরবর্তী সময় মুসলমানদের ওপর নানা ধরনের লাঞ্ছনা, অপমান বা গ্লানি এসেছে। যা আঞ্চলিক ও বিশ্বশান্তির জন্য সহায়ক হয়নি। সেগুলো মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীকে তাদের জিহাদি রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। হলি আর্টিজানের বারতাকে বাংলাদেশ যে দক্ষতা ও দূরদর্শিতায় কাজে লাগিয়েছে, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পারেনি নাইন-ইলেভেনের পর তাদের গৃহীত ব্যবস্থার মাধ্যমে। আমরা জঙ্গি তৎপরতা দমনে এবং ন্যায় বিচারে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু আমেরিকা তাদের দেশে জঙ্গি হামলার বিচারতো দুরের কথা, রহস্য উৎঘাটনেও সক্ষম হয়নি। বরং তারা বিভিন্ন দেশে হামলা চালিয়ে, গুড়িয়ে দিয়ে, পরবর্তীতে স্বীকার করেছে, তাদের গোয়েন্দা রিপোর্ট ভুল ছিলো...। আজও বিশ্বব্যাপী সর্বক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা জঙ্গিবাদের জন্য উস্কানি হিসেবে কাজ করছে।
দেখা যায়, নানা নামে বিশ্বব্যাপী অপশক্তির উত্থান ও ফুলেফেঁপে ওঠার মূল কারণ কিন্তু বিশ্বরাজনীতির ধারক-বাহক, তথা মোড়লদের অবিচারমূলক মোড়লিপনার কারণেই। প্রতিটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের কৃষ্টি-কালচার ও চেতনার বাইরে গিয়ে যারা অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে, তাদের কারণেই জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে থাকে।
হলি আর্টিজান রায়ে আমরা আশাবাদী। কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মাধ্যমে স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়ায় এ রায় এসেছে। এই রায়ের পর আলোচনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যারা পর্দার আড়ালে থেকে এসব ঘৃণ্য কাজের নেতৃত্ব দেয়, তারা কতটা চিহ্নিত হয়েছে। তাদের চিহ্নিত করা না গেলে এ ধরনের অপরাধ রুখে দেয়া সম্ভব হবে না। আমাদের দেশের জনগণ জঙ্গিবাদের বিপক্ষে, এমনকি অধিকাংশ অভিযুক্তের পরিবার-পরিজনও। ফলে জঙ্গিবাদ দমনে সরকার জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা পাচ্ছে। তবে সর্বসাধারণের চাওয়া রায় যেনো দ্রুত কার্যকর হয়। দেশে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রকৃত আদর্শ ও শিক্ষার যেন বিস্তার লাভ করে। আমাদের বিশ্বাস, সন্ত্রাসী কর্মকা- ও এর মদদদাতাদের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াই বিরামহীনভাবে অব্যাহত থাকবে।