আমরা রিফাত বা নুসরাত হত্যাকান্ডের বিচার পাওয়ার আগেই আরো অনেকগুলো প্রাণ কেড়ে নেয়ার সংবাদগণমাধ্যমে দেখেছি। সর্বশেষ কুষ্টিয়ার মিরপুরে ‘সমর্পণ’ নামে একটি মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে এক কলেজছাত্রকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ফেসুবক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হাত-পা বেঁধে তাকে পেটাচ্ছেন কয়েকজন, পরে তার শরীরে পুশ করা হচ্ছে ইনজেকশন। ওই ছাত্রের নাম কামরুজ্জামান ইমন {২৪}। সে মিরপুর উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের কাদেরপুল গ্রামের এজাজুল আজিমের ছেলে। রাজশাহী সিটি কলেজের সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল সে। পরিবার বলছে- ইমনকে ১৯ নভেম্বর দুপুরে মিরপুর বিজিবি সেক্টর এলাকার ‘সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে’ ভর্তি করা হয়। ‘মানসিক সমস্যাজনিত’ কারণে তাকে সেখানে নেয়া হয়েছিল। ভর্তি শেষে পরিবারের সদস্যরা ফিরে যান বাড়িতে। পরদিন সকালে পরিবারকে জানানো হয় ইমনকে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়েছে। সেখানে বাবা-মা ও স্বজনরা গিয়ে দেখতে পান ইমন বেঁচে নেই। এমন মৃত্যু মানতে পরিবারের সদস্যদের কষ্ট হলেও ভাগ্যের লিখন ভেবে কাউকে দায়ী না করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্থানীয় কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। ছয়দিন পর মঙ্গলবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। এতে দেখা যায়, কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন ইমনকে হাত-পা বেঁধে মারধর করছে, শরীরে পুশ করা হচ্ছে ইনজেকশনও। এরপরই মিরপুরে তোলপাড় শুরু হয়। আজ এ ঘটনায় মামলা করা হতে পারে। অবশ্য সে প্রসঙ্গে গণমাধ্যম জানতে চাইলে ইমনের মা কামরুন্নাহার বলেছেন, ইমনকে সুস্থ অবস্থায় ওখানে রেখে আসা হয়েছিল। পরে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
এখানে বলে রাখি- ২০১৩ সালে আমার চাচাতো বোন রিনা আপার ছেলেও এই মাদকাসক্ িনিরাময় কেন্দ্রে মৃত্যুবরণ করে। যা নিয়ে সে সময় অনেক আলোচনাও হয়েছিলো। কিন্তু চক্রটি শক্তিশালী হওয়ায় ধরা ছোঁয়ার বাইরেচলে যায়। এভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলেশুধু ইমন নয়; অসংখ্য সন্তান এভাবে বাবা মায়ের ¯েœহের বাঁধ ছেড়ে চলে যাচ্ছে মৃত্যুপুরিতে। আর এর জন্য দায়ী আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সকলে। বিশেষ করে- মাদকাসক্তি নিরাময়ের জন্য রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। কিন্তু বিশেষায়িত এসব চিকিৎসাকেন্দ্রের মধ্যে গুটিকয়েক ছাড়া বাকিগুলোর অনুমোদন পর্যন্ত নেই। আর যেগুলোর অনুমোদন আছে সেগুলোতেও নেই অভিজ্ঞ চিকিৎসক বা কর্মী। পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণও নেই এসব কেন্দ্রে। ন্যূনতম মান বজায় রেখে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করা তো দূরের কথা, অনেক ক্ষেত্রে অপচিকিৎসায় রোগীর প্রাণ সংহারের ঘটনাও ঘটে। নজরদারির কোনো বালাই না থাকায় এসব কেন্দ্র কোনো ফল বয়ে আনছে না মাদকাসক্তদের জন্য।
আমি মোমিন মেহেদী সারা জীবন সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার পথ ধরেবলতে পারি- প্রায় এক হাজার ২০০ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে সারা দেশে। যার মধ্যে মাত্র ১৮০টি প্রতিষ্ঠান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর {ডিএনসি} থেকে অনুমোদন নিয়েছে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানই দেশের লাখ লাখ মাদকাসক্ত রোগীকে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে সেবা দিচ্ছে। কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঢাকাসহ সারা দেশে গড়ে উঠছে মাদক নিরাময় কেন্দ্র নামের ‘ব্যবসা’ প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে চলছে চিকিৎসার নামে রোগীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। মাদকের ব্যবসা পরিচালনা এবং রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো টাকা আদায়েরও অভিযোগ আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই ডিএনসির নজরদারি। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষও দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছে।
অবশ্য দুর্নীতগ্রস্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- ১৮০টি প্রতিষ্ঠান অনুমোদন নিয়েছে। শর্তগুলো পূরণ করলেই আমরা অনুমোদন দিচ্ছি। তদারকির আওতাও বেড়েছে। মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসক না থাকায় কোথাও রোগীর চাপ বেশি থাকতে পারে। সমস্য হচ্ছে—মাদকাসক্তদের যে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দিতে হয় তা অনেকেই জানেন না।’ নির্যাতন, অনিয়ম ও হত্যার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয় কি না—প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মাদকাসক্ত রোগীরা অনেক সময় বিগড়ে যায়। তখন ঘুমের ওষুধ দিতে হয়। অনেক সময় শারীরিক বল প্রয়োগ করতে হয়! সুনির্দিষ্ট কোনো নির্যাতনের অভিযোগ থাকলে আমাদের জানাতে হবে। এদিক-ওদিক অভিযোগ করে লাভ নেই। এগুলো দেখার জন্য একজন সহকারী পরিচালক আছেন। আর কেউ মারা গেলে সেটা তদন্ত করবে পুলিশ। এখানে আমাদের কোনো বিষয় নেই!’
এজন্য অবশ্য দায় এড়াতে পারবে না কেউ। কেননা, বেসরকারি পর্যায়ে মাদকাসক্তি পরামর্শ কেন্দ্র, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ও মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা বা সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য ২০০৫ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি বিধিমালা প্রণীত হয়। সেখানে ৪{খ} বিধিমালায় বলা হয়েছে, এ ধরনের কেন্দ্র সুরক্ষিত পাকা বাড়িসহ আবাসিক এলাকায় হতে হবে। এতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের সুবিধাসহ নিরিবিলি সুন্দর পরিবেশ থাকতে হবে। আরো বলা আছে, কেন্দ্রে একজন মাদকাসক্ত রোগীর জন্য গড়ে কমপক্ষে ৮০ বর্গফুট জায়গা ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বহুতল ভবনের তৃতীয় তলা বা তার চেয়ে ওপরের তলায় অবস্থিত হলে লিফট থাকতে হবে। গ ধারায় বলা আছে, প্রতি ১০ বিছানার জন্য আলাদা একটি টয়লেট ও পানীয়জলের সুব্যবস্থাসহ কমপক্ষে একজন মনোরোগ চিকিৎসক {খন্ডকালীন বা সার্বক্ষণিক}, একজন চিকিৎসক, দুজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স বা বয়, একজন সুইপার বা আয়া এবং জীবনরক্ষাকারী উপকরণ ও অত্যাবশ্যক ওষুধপত্র থাকতে হবে। তা তো থাকে না; বরং সমস্যার জাল নিয়ে বসে আছে অসংখ্য ব্যবসায়ী। বিশেষ করে খিলগাঁওয়ের ভূঁইয়াপাড়ার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের প্রান্তি নামের কেন্দ্রটির মেঝেতে বিছানার আয়োজন। সেখানে ২০-৩০ জনের থাকার ব্যবস্থা। একইভাবে চলছে দয়াগঞ্জ মোড়ের হাদী, যাত্রাবাড়ীর নতুন জীবন, তেজগাঁওয়ের আরাধনা, ধনিয়ার উৎসব, মিরপুরের আহমদনগরে হিরা, উত্তর বিশিলের পরিবর্তন, শ্যামলীর নিরাময়, খিলগাঁও রেলগেটসংলগ্ন নির্বাণ, খিলগাঁওয়ের রূপান্তর, সিপাহীবাগের সৃষ্টি, শান্তিপুরের স্বপ্ন, মোহাম্মদপুরের বারাক, মনোরোগ চিকিৎসালয়, বাংলাদেশ ইয়ুথ ফার্স্ট কনসার্ন, মোহাম্মদী হাউজিংয়ে জীবনের ঠিকানা, ঢাকা উদ্যানে ফিউচার, জীবনের আলো, নিউ তরী, আজিজ মহল্লায় নতুন জীবনে ফিরে আসা, উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে রি-লাইফ, ৭ নম্বর সেক্টরে ফেরা, ৪ নম্বর সেক্টরে গ্রিন লাইফ, ৩ নম্বর সেক্টরে দীপ জ্বেলে যাই, উত্তর শাহজাহানপুরে নির্বাণ, মতিঝিলে হলি লাইফ, বাড্ডার ছোলমাইদ পূর্বপাড়ায় ক্লিন লাইফ, নবজন্ম, বাড্ডার এভারগ্রিন, রামপুরায় সমর্পণ, স্নেহনীড়, খিলগাঁওয়ে আশার আলোসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাঝেমধ্যে অভিযান চালায় ডিএনসি ও র্যাব। এ সময় সেখানকার অবস্থা দেখে কর্মকর্তারাও শিউরে ওঠেন। গত বছরের ৩০ নভেম্বর রাজধানীর দক্ষিণখানের গাওয়াইল প্রেমবাগান এলাকায় র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে একটি দল ইউটার্ন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে অভিযান চালায়। তখন দেখা যায়, ১৭ রোগীকে হাতকড়া পরিয়ে অভিনব কায়দায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আমি একজন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে বরাবরই চেষ্টা করেছি ছাত্র-যুব-জনতার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গবেষণা করার ও সমাধান নিয়ে এগিয়ে চলার-আলোচনা করার। সেই ধারাবাহিকতায় বলবো- ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর রাজধানীর বারিধারা এলাকার ‘প্রত্যয়’ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে আসাদুল ইসলাম নামে এক রোগীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। তাকে চিকিৎসার নামে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছে স্বজনরা। এ ঘটনায় নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে প্রত্যয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার {অব.} নজরুল হক, চিকিৎসক সত্য প্রকাশসহ সাতজনকে আসামি করে ভাটারা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামের ছোটপুলে রহমানবাগ নাহার ম্যানশনের ‘ছায়ানীড়’ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থেকে নিজাম উদ্দিন নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্বজনদের অভিযোগ, নিজামকে পিটিয়ে হত্যা করেছে কেন্দ্রের সদস্যরা। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মেরি আক্তার ছায়ানীড়ের পরিচালক দুলাল সরকার, পরিচালকমন্ডলীর তিন সদস্য বিপ্লব, জসীম ও আবদুল বাতেন ওরফে বাচনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। হালিশহর থানার ওসি আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির বলেন, ঘটনায় তদন্ত চলছে। নিজামের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ‘সময়’ নামে চট্টগ্রামের আরেক প্রতিষ্ঠানে মারা যায় সুজিত ধর নামে এক রোগী। স্বজনদের অভিযোগ, মারধরে আহত হয়ে সুজিতের মৃত্যু হয়। ‘অংকুর’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও রোগী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনার ব্যাপারে ডিএনসির চট্টগ্রাম মেট্রো উপ-অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক চৌধুরী ইসরুল হাসান জানান, দুটি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে অংকুরের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায়নি তদন্তদল। ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গায় এনজিও পরিচালিত প্রত্যাশা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হেলাল নামের এক মুদি ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। অন্য রোগীরা বলেন, নির্মম নির্যাতনের কারণে হেলালের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ১৪ নভেম্বর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ‘জাগরণ মাদক নিরাময় কেন্দ্রে’ মশিউর রহমান মামুন {৩২} নামে যুবকের মৃত্যু হয়। তাঁর ভাই হাবিবুর রহমান অভিযোগ করেন, মামুনকে দেড় মাস আগে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর চিকিৎসার নামে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর {মামুন} নাক, কান ও গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঘটনার পর জাগরণের মালিক চন্দনসহ কর্মীরা পালিয়ে যায়। গত বছরের ২৭ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জ শহরের ‘কৃপা মাদক নিরাময় কেন্দ্রে’ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাসেল {২৮} নামের এক মাদকসেবীর ছুরিকাঘাতে আরেক মাদকসেবী ফয়সাল {২৬} মারা যান। এ ছাড়া ২০১২ সালের ২ মে রাজধানীর মিরপুরের উত্তর বিশিলের ৭ নম্বর রোডের ৬৯/ক নম্বর বাড়িতে ‘পরিবর্তন মাদকাসক্তি পরামর্শ ও পরিচর্যা কেন্দ্র’ থেকে রায়হান রাকিব {১৬} নামে এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়। স্বজনরা অভিযোগ করে, নির্যাতন করে হত্যার পর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে কর্তৃপক্ষ। ওই ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় হয়েছিল। কেন্দ্রে নির্যাতিত হয়ে জিঘাংসার বশে উল্টো হামলার উদাহরণও আছে। রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া ভূঁইয়াপাড়ার ২৪০/৩ নম্বর ভবনের লাইফ লাইন মাদকসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বশির উদ্দির {৪০}। গত বছরের ১০ মার্চ ওই প্রতিষ্ঠান থেকেই তাঁর মুখ ও হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিমি, জসিম ও কাজী আনোয়ার পারভেজ অনি নামে তিন মাদকাসক্ত রোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে রাজধানীর শ্যামপুরের ধোলাইপাড়ে ‘সুন্দর জীবন’ নামে একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে জাকির হোসেন {৩৮} নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়। কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, জাকিরসহ দুজন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ঠেলে ফাঁকা করে সেখান দিয়ে পাঁচতলা থেকে নেমে পালাতে চেয়েছিল। তখন জাকির নিচে পড়ে মারা গেছে। তবে মৃতের স্বজনরা নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছে। এ ঘটনায় শ্যামপুর থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই প্রতিষ্ঠানটির মালিক শফিকুর রহমানকে আটক করেছে।
মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নামে ঢাকার অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অবৈধ চিকিৎসা কেন্দ্র। চলছে চিকিৎসার নামে প্রতারণা। মাদকাসক্তদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার এ এক অভিনব কৌশল। ‘নিশ্চিত মুক্তি’র বিজ্ঞাপনী ফাঁদে পা দিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেকেই। আবার কাগজে-কলমে বৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও রয়েছে নীতিমালা অনুযায়ী অবকাঠামো ও চিকিৎসকের অভাব। বলা হচ্ছে, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের মাসোহারা দিয়েই দিনের পর দিন চলছে এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান। ঢাকার প্রায় প্রতিটি থানা এলাকাতেই রয়েছে অবৈধ মাদক নিরাময় কেন্দ্র। এ ধরনের কথিত নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা কত তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছেও। অথচ জাতির পিতার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান দেশ হোক মাদকমুক্ত, শুদ্ধ সুন্দর। কিন্তু সেই দেশে ষড়যন্ত্রকারী-রজনীতির নামে অপরাজনীতিরধারক বাহকরা অন্যায়ের চাষাবাদ করেই যাচ্ছে। এমন পরিস্থতিতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেই এগিয়ে আাসতে হবে। পাশাপাশি সবাইকে কঠোর হতে হবে মাদকের বিরুদ্ধে...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি