টেলিযোগাযোগের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযাগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গ্রাহক পর্যায়ে সিম বিক্রিতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা জারির উদ্যোগ নিচ্ছে। বর্তমানে গ্রাহক সংগ্রহে সেলফোন অপারেটররা বিভিন্ন অফারের আওতায় বিনা মূল্যে সংযোগ বিক্রি করছে। যা পরোক্ষভাবে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসাকে উৎসাহিত করছে। এমন পরিস্থিতিতে উত্তরণের লক্ষ্যেই বিটিআরসি মোবাইল ফোন সিম বিক্রিতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার উদ্যোগ নিচ্ছে। বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অবৈধ ভিওআইপির পাশাপাশি সেলফোন ব্যবহার করে অপরাধমূলক কার্যক্রম সংঘটনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিগত ২০১৫ সালে গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। মূলত গ্রাহকের দেয়া তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার পাশাপাশি বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিতের এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। আর ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বাধ্যতামূলকভাবে চালু করা হয়। প্রাথমিকভাবে ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিদ্যমান গ্রাহকদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন সম্পন্নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। ওই সময় পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি ৭০ লাখ সিমের নিবন্ধন হয়। পরবর্তী সময়ে নিবন্ধনের সময়সীমা একই বছরের ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে নতুন সংযোগ কেনার ক্ষেত্রেও বায়োমেট্রিক ভ্যারিফিকেশন বাধ্যতামূলক করা হয়।
সূত্র জানায়, বিটিআরসি বিগত ২০১৬ সালের ২০ জুন গ্রাহকপ্রতি সর্বোচ্চ ২০টি সিম রাখার সীমা বেঁধে দেয়। আর ২০১৭ সালের আগস্টে তা কমিয়ে সর্বোচ্চ ৫টি করা হয়। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর গ্রাহকপ্রতি সর্বোচ্চ ১৫টি সিম বা রিম রাখার সুযোগ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সংস্থাটির এ নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫টির বেশি সিম রয়েছে এমন গ্রাহকের অতিরিক্ত ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৫টি সিম চিহ্নিত করা হয়।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে মোবাইল সিমে সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে পাঁচ ধরনের পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, স্মার্ট কার্ড, জন্ম নিবন্ধন সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পাসপোর্ট। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্মার্ট কার্ড ছাড়া শনাক্তকরণের অন্য মাধ্যমগুলো যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও পাঁচ ধরনের পরিচয়পত্র ব্যবহারের কারণে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৭৫টি সিম কেনার সুযোগ পাচ্ছে বলে সম্প্রতি কমিশনের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে বিটিআরসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, সিম আমদানির পর গ্রাহকের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত এর সঙ্গে ব্যয়সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সিমের দাম ৪৫ টাকা, তার সঙ্গে সিম ট্যাক্স হিসেবে দিতে হয় আরো ২০০ টাকা। নীতিমালা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে খুচরা বিক্রেতা ও পরিবেশক বিনামূল্যে সিম বিক্রি করছে। বিক্রি পরবর্তী মুনাফার কারণে এ প্রক্রিয়ায় সিম বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এতে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসাকে পরোক্ষভাবে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। সেজন্য এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।