শিক্ষা আজ যখন ব্যবসা, শিক্ষাঙ্গণ যখন সন্ত্রাসের রাজত্ব; তখনও নির্দ্বিধায় বলবো- জাতির জীবনে শিক্ষার অসীম গুরুত্ব সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধুই আমাদের পথ প্রদর্শন করে গেছেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই জাতির জনক দেশের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজাবার উদ্যোগ গ্রহন করেন। এই লক্ষ্যে তিনি শ্রদ্ধেয় বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষাবিদ ড. কুদরত-ই- খুদার নেতৃত্বে জাতিয় শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। ১৯৭৩ সালে ড. কুদরত-ই- খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বঙ্গবন্ধুর নিকট পেশ করেন। জাতির দুর্ভাগ্য , সেই মূল্যবান রিপোর্ট-এর সুপারিশ বাস্তবায়ন করার সময় তিনি পাননি। ১৯৯৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাত্রিতে স্বাধীনতা বিরোধীচক্র ও তাদের দেশীয় এজেন্টরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সহপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শহীদ হবার পর পর্যায়ক্রমিক যারা ক্ষমতায় আসে তারা এ বিষয়ে আর কোন উদ্যোগ গ্রহন করে নাই। অথচ সেই গুরুত্বপূর্ণ দলিল থেকে এখনও আমরা অনেক বিষয়ে দিকনির্দেশনা পেতে পারি। একথা স্বীকার করুন অথবা না করুন নিশ্চিত করে বলতে পারি- সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নে নিবেদিত তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরী দেশরতœ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঝরে পড়া রোধে বছরের প্রথম দিন নতুন বই প্রদান, উপবৃত্তি, মিড ডে মিলসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পদক্ষেপে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে ৯১২৩ কোটি টাকার প্রকল্প আলোর মুখ দেখেছে। দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। এজন্য ব্যয় হবে ৯১২৩ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে ৪০ হাজার শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, ৮ হাজার বিদ্যালয়ে পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা, ৩৬ হাজার ৫০০ শ্রেণিকক্ষ ও ৩ হাজার ৫০০ শিক্ষক কক্ষে চেয়ার-টেবিল ও আলমারি স্থাপন এবং শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর চলতি বছর থেকে ২০২২ সাল নাগাদ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাহিদাভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক এক প্রকল্প প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে এ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় শিগগিরই চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।
নতুন প্রজন্মের রাজনীতি শিক্ষা-সহিত্য-সাংস্কৃতিক ও সামাজিককর্মী হিসেবে বলবো- একটি জাতিকে গড়ে তুলতে হলে প্রথম সোপান হচ্ছে সুশিক্ষা। সুশিক্ষাই জাতির মেরাদন্ড। আমরা যদি বাংলাদেশের চিত্র অবহেলিত দারিদ্রপীড়িত অসহায় জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি ও সার্বিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করি তাহলে শিক্ষাই হচ্ছে পূর্বশর্ত। আর এই শর্তকে সামনে রেখে এগিয়ে চলছে বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ঝরে পড়া রোধে নেয়া হয়েছে দেশব্যাপী পদক্ষেপ, বাস্তবায়ন করা হয়েছে মিড ডে মিল, স্কুলহীন গ্রাম-মহল্লায় গড়ে তোলা হয়েছে ১৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশাপাশি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য নিরন্তর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জীবনব্যাপী সংগ্রামের সাধনা ছিল, বাংলার মানুষের স্বাধীনতা। তিনি বলেছেন, আমরা জীবনের একমাত্র কামনা, বাংলাদেশের মানুষ যেন খাদ্য পায়, বাসস্থান পায়, শিক্ষার সুযোগ পায় এবং উন্নত জীবনের অধিকারী হয়।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র দূরিকরণের প্রশ্নে বাংলাদেশের সাম্প্রাতিক ব্যর্থতা থেকে আমাদের অনেকের মনেই স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে শিক্ষাহীন নিরক্ষর জাতিকে নিয়ে আমরা বেশি দূর অগ্রসর হতে পারব না। শিল্পায়ন, কৃষি আধুনিকীকরণ, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি প্রযুক্তি আহরণ ও প্রয়োগ, রপ্তানিবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব দূরিকরণ –বস্তুত জাতি গঠন ও অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুততর করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি বিষয়ে আমোদের বিশাল নিরক্ষর জনসংখ্যা ও শিক্ষার নি¤œমান একটা বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দিয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকার উদাহরণ দিতে চাই না। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের দিক দৃষ্টিপাত করলেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি, শিক্ষার সঙ্গে উন্নয়নের গভীর ও প্রত্যক্ষ যোগসূত্র। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে জাপান যখন শিল্পায়ন কার্যক্রম গ্রহন করে তখন সে দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার আলে সমাজের প্রতিটি স্থরে পৌছে গিয়েছিল। জাপানের সাধারন মানুষও তখন পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান ও কারিগরি প্রযুুক্তি গ্রহনের জন্য প্রস্তুত ছিল। পরবর্তীকালে, এই শতাব্দীর মধ্যভাগে, কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও গণচীনে উন্নয়ন প্রক্রিয়া সূচনাতেই বাস্তবায়িত হয়েছে। এর ফলে এসব দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে গতিশীলতা এসেছে এবং তারা দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ১৯৯৩ সালের নভেম্বর মাসে আমি চীন সফর করে এসেছি। প্রাচচীন সভ্যতার লীলাভূমি এই দেশটির বিস্ময়কর অগ্রগতি আমাকে অভিবূত করেছে। সমাজতান্ত্রিক আদর্শ ও বাজার অর্থনীতির সমন্বয় সাধন করে চীন সমগ্র জাতির কর্মশক্তি ও সৃজনশীলতকে জাতি গঠন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিয়োজিত করেছে। আমার বিশ্বাস, তাদের সাফল্যের অন্যতম কারণ হচ্ছে তাদের দক্ষ, শিক্ষিত ও পরিশ্রমী জনশক্তি। শুধু পূর্ব ু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নয়, দুঃখের সঙ্গে শিকার করতে হয়, এই উপমহাদেশের অন্যান্য দেশগুলোও শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এরই পাশে আমরা বাংলাদেশে দ্রুত বর্ধমান নিরক্ষর জনসংখ্যা নিয়ে নিদারুণ দারিদ্র্যের তাড়না আবর্তিত হচ্ছিলাম দেখে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের প্রকৃতবন্ধু দেশরতœ বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য আমরা আমাদের সংগঠনের নেতা কর্মী ও সমর্থকদের সহায়তায় কার্যক্রম হয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ইতিমধ্যেই স্ব স্ব এলাকায় স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ঠ অবদান রেখেছেন। যে কোন জেলায়, থানায় বা গ্রামে গেলে এ বিষয়ে খোজ নেই এবং খুব কম এলাকাই আছে যেখানে এ উদ্যোগ গ্রহন করা হয় নাই। তবে এ উদ্যোগ আরো ব্যাপক করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি ছাত্রদের হাতে সময় থাকে সে সময়টা তাদেরকে নিজ নিজ গ্রাম অথবা তাদের পছন্দমত যে কোন গ্রামে পাঠিয়ে দিতে হবে। যে সমস্ত থানায় কলেজ আছে সেই কলেজে প্রিন্সিপাল বা অধ্যক্ষ অথবা স্কুলের হেডমাস্টারের নেতৃত্বে ঐ থানার সমস্ত কলেজ ও স্কুল শিক্ষকদের নিয়ে একটা কমিটি করা যেতে পারে। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিরক্ষরতা দূরীকরণের কার্যক্রম চালু করা যায়। এই ছাত্ররা শিক্ষকদের সহায়তা এই কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ছাত্রদের তিন মাসের জন্য গ্রামে পাঠাতে হবে। তাদের নিজ গ্রাম হলে তো কথাই নেই, অন্য গ্রাম হলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করবে। আমরা এদের হাত খরচের ব্যবস্থা করব। একজন ছাত্র কম করে হলেও পাঁচজন নিরক্ষর মানুষকে অক্ষর জ্ঞানদান করবে। যে অধিক সংখ্যক মানুষকে অক্ষর জ্ঞানদান করতে পারবে তাকে পুরুস্কার দেবার ব্যবস্থা থাকবে। এই কার্যক্রম সফল করার জন্য সরকারের সহযোগিতা দরকার, স্থানীয় প্রশাসন যদি সহযোগীতা না করে তাহলে সফল হওয়া কঠিন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষা বিষয়ক উচ্চারণ নিয়ে আমি অত্যান্ত আনন্দিত। তিনি লিখেছেন, শিক্ষার সাথে সাথে স্বাস্থ্যের দিকেও আমাদের কোন নজর দিতে হবে। সকাল দশটায় একজন ছাত্র বাড়ি থেকে স্কুলে আসে, বিকাল চারটায় ছুটি হয়, দুপুরে কোন টিফিনের ব্যবস্থা থাকে না। ঢাকা শহরে কিছু স্কুলে থাকলেও শহরের বাইরে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা নাই। পেটে ক্ষুধার জ্বালা থাকলে পড়ায় মন বসবে কিভাবে? আমি ভাবলে অবাক হয়ে যাই আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা কত কষ্ট করে লেখাপড়া করার জন্য। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে অধিকাংশকে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। রোদ বৃষ্টি কাদা পানি ভেঙে গ্রামের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতায়াত করে। যাতায়াত ব্যবস্থারও দ্রুত উন্নতি সাধনকরা একান্ত প্রয়োজন। এছাড়া শিক্ষার হার বৃদ্দি ও ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যের প্রতি দৃষ্টিদানের জন্য প্রতি স্কুলে টিফিনের ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে আমি একটা প্রস্তাব করছি, যেহেতু আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী একটা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন সেটা হল ‘ডাল ভাত’। সবার জন্য ‘ডাল ভাত’ নিশ্চিত করতে চান। তিনি যদি প্রতিটি সরকারি বেসরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে টিফিন পিরিয়ডে বিনা পয়সায় ছাত্র ছাত্রীদের ‘ডাল ভাত’ বিতরনের ব্যবস্থা নেনÑ এটা খুব কম খরচে হয়ে যাবে। আগামী বছরের বাজেটে এ বিষয়ে অবশ্যই বরাদ্দ থাকবে আশা করি। আমরা বিরোধী দল থেকে এ ব্যাপারে অবশ্যই সহযোগিতা করব। এই কর্মসূচিতে আর একটা বিষয় খুব গুরুত্ব পাবে সেটা হল দেশের নিরক্ষরতা দ্রুত দূর হবে। আমি মনে করি, যে সমস্ত শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে না বা বাবা-মা স্কুলে পাঠাচ্ছে না তারা ও উৎসাহিত হবে। তারা যখন দেখবে তাদের সন্তান অন্তত এক বেলা পেটভরে খেতে পারবে তখন তারাও স্কুলে পাঠাতে শুরু করবে। স্কুলের প্রতি আকর্ষণ গড়ে তুলতে আমাদের মত দরিদ্র দেশে এর থেকে বড় আকর্ষন আর কি হতে পারে? এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষিকার সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। গত ১৬ জানুয়ারি মধুপুর গিয়েছেলাম জনসভা করতে, কাকরাইদ স্কুলের শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলাপ করেছিলাম। তাদের এ প্রশ্নটা করলাম, তখন তারা সায় দিলেন এবং এতে যে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বাড়বে তাতে কোন সন্দেহ নাই।
নিরক্ষরতা দূর করা এবং শিশুদের স্কুলগামী করার জন্য এ পরিকল্পনা একান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া এর সঙ্গে গ্রামের অনেক মানুষ কর্মসংস্থানও হয়ে যাবে। অনেকে প্রশ্ন করবেন, ভাত খ্ওায়াতে গেলে রান্না-বান্না থালা-বাসন ইত্যাদি ঝামেলা হবে। মাটির থালা এক বা দুই টাকায় পাওয়া যাবে। রান্নার হাঁড়িপাতিল একবার যোগাড় করলেই হয়ে যাবে। স্থানীয় মানুষের কাছ থেকেও সাহায্য পাওয়া যাবে। একবার উদ্যোগ নিয়ে দেখতে দোষটা কি? আমাদের লক্ষ্য নিরক্ষরতা দূরিকরণ, কাজেই এর জন্য সবধরনের সুযোগ গ্রহণ করতে হবে।
সাধারন জ্ঞন থেকেই আমরা বুঝতে পারি, একজন শিক্ষত মাতার নিরক্ষর সন্তান কল্পনা আরও কঠিন। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, “আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি শিক্ষিত জাতি দেব।” একজন শিক্ষিত সচেতন স্বাবলম্বী নারীই পারেন পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা র্পালন করতে। বর্তমান সরকার নারী শিক্ষার উন্নয়নের ক্ষেত্রে যত বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তৃতা দিয়ে বেড়াক না কেন, বাস্তবক্ষেত্রে তা কার্যকর করতে পারেনি। ৮ম শ্রেণি পযন্ত অবৈতনিক নারীশিক্ষা চালু হয়েছে অথচ অনুদান কমান হয়েছে, ফলে স্কুলগুলির দিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। নতুন করে ছাত্রীসংখ্যাও বাড়েনি, নতুন স্কুলের সংখ্যাও বাড়ে নি। বিশেষ করে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থ ঘরের মেয়েরা ভর্তি হবার, বই খাতা কেনার এবং পোশাক পরিচ্ছন্ন তৈরির কথা চিন্তা করতে পারে না। অবৈতনিক কর্মসূচি গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে এ দিকটাও অবশ্যই ভাবতে হবে। এ কর্মসূচির জন্য যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক অর্থ সাহায্য এসেছে তা অবশ্যই টার্গেট গ্রুপের জন্য ব্যায় করতে হবে। সেখানে অবৈতনিক ব্যবস্থা চালু হবে সেখানে পর্যপ্ত সরকারি অনুদান থাকতে হবে। শুধু মাত্র সারাদেশে ৮ম শ্রেণি পযন্ত বেতন মওকুপ করতে হবে। সাথে সাথে আমাদের ভাবতে হবে ঐসব বালক বালিকা ও কিশোর-কিশোরীর কথা যাদের বংস এখনও বিশেষ কোঠা পার হয়নি অথচ তারা শিক্ষার আলো থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। আগত একবিংশ শতাব্দীতেই এসব কম ভাগ্যবান তরুণ-তরুনী অশিক্ষিত হিসাবেই তাদের জীবন অতিবাহিত করবে। তাদের কি সমাজের, বিশেষত যারা রাষ্ট্র ও সমাজের নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত, তাদের কোন দায়দায়িত্ব নেই?
দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় ৮১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ২ কোটি শিক্ষার্থী। সম্প্রতি সরকার ২৬ হাজার ৬০০টি রেজিস্টার্ড ও কমিউনিটি বিদ্যালয়কে শিক্ষকসহ জাতীয়করণ করেছে। এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সরকারি বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার পরিবেশ কিছুটা ভালো। কিন্তু এগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অত্যধিক। ফলে শিক্ষার মান ঠিক রাখা কষ্টসাধ্য। অন্যদিকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সার্বজনীনকরণ ও পঞ্চম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষাজনিত কারণে শিক্ষার সময় বেড়েছে। বিদ্যমান কাঠামোয় এখন আর কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ৩০ শতাংশ বিদ্যালয়ের অবকাঠামো যুগোপযোগী করা সম্ভব হবে। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে অবকাঠামো সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এছাড়া ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার চাহিদা বাড়ছে। এ অবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষার অবকাঠামো সুযোগ সুবিধা যুগোপযোগী করা দরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পিইডিপি-৩ এর আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে একটি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে, যা নীতি নির্ধারণীসহ সবমহলে গ্রহীত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিত গাইড লাইনের আওতায় ১০ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয় সংবলিত এক প্রস্তাব করা হয়। পরিকল্পনা কমিশন যাচাই-বাছাই করে এই প্রকল্পের ব্যয় ৯১২৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধনের নির্দেশ দেয়। সে নির্দেশনা মোতাবেক নতুন প্রকল্প প্রস্তাবনা ডিপিপি তৈরি করা হয়েছে। তবুও দেশে শিক্ষাকে ধ্বংস করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে একটি শ্রেণি। এরা শিক্ষাঙ্গণে ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি শোভন, সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী আর বর্ণচোরা নুরুল হক নুরুর মত লোভিদেরকে ঠেলে দিচ্ছে শিক্ষাঙ্গণকে কলুষিত করার জন্য। নতুন প্রজন্মের পক্ষ থেকে বলবো- বাংলাদেশকে ভালোবাসলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সুশিক্ষার জন্য। শিক্ষাঙ্গণে ছাত্ররাজনীতি থাকবে, তবে তা শিক্ষা কেন্দ্রিক, শিক্ষাঙ্গণে মিছিল হবে, তবে তা শিক্ষার্থীর অধিকার আদায়ের জন্য। আন্দোলনের নামে রাজনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য। সেক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রীকে ভাবতে হবে শিক্ষকদের বেতন-পেনশন নিয়ে; শিক্ষার্থীদের প্রথম শ্রেণি থেকে ¯œাতোকত্তর শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ দান নিয়ে। ডিম-বিস্কিট-খাবার দিয়ে শিশু-কিশোরদেরকে লোভি বানানো কতটা যৌক্তিক, তা এখনই ভেবে দেখতে হবে বলে আমি মনে করি।
আর সর্বশেষ কথা হলো এভাবে খাবার দিয়ে ঝরেপড়ারোধ করা সম্ভব নয়; বরং একটি ঠিকাদার গোষ্টিকে আঙ্গুল থেকে কলাগাছে পরিণত করাটা সম্ভব হচ্ছে অনেকেরই। সামগ্রীকভাবে বলবো- ভাবুন সুশিক্ষা নিয়ে। আর সুশিক্ষা মানে আরবী মাধ্যম, ইংলিশ মাধ্যম, হিন্দি মাধ্যম, উর্দু মাধ্যম বা ফ্রান্স মাধ্যম নয়। লোভ বা মোহবিষ্ট প্রজন্ম তৈরি নয়। সুশিক্ষা মানে মায়ের ভাষার পাশাপাশি ধর্ম-সমাজ-সংস্কৃতি-বিজ্ঞান নিয়ে এগিয়ে চলা। আর তাই-ই যদি হয়, তাহলে এখনই সময় নতুন বছরে এককেন্দ্রিক শিক্ষায় অগ্রসর হবে বাংলাদেশ-আপনার-আমার-আমাদের হাত ধরে...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি ও সাবেক সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার আন্দোলন জোট