নিম্নমুখী ধারায় দেশের রফতানি আয়। গত ৫ মাসে রফতানি আয় কমেছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। গার্মেন্টসসহ দেশের প্রধান খাতগুলোর রফতানি কমে গেছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরু থেকেই কমতির দিকে রফতানি আয়। আর প্রতি মাসে এ ব্যবধান বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে রফতানিন আয়ে বড়ো ধাক্কা লাগে। এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি আয় কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রফতানি কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। ক্রমাগত রফতানি কমায় শঙ্কিত রপ্তানিকারকরা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রফতানিন আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলার বা ১০ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা কমেছে। পাঁচ মাসে রফতানি কমেছে ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য গার্মেন্টস ছাড়াও চামড়া, হিমায়িত খাদ্য ও কৃষিপণ্যের রফতানি কমেছে। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে সন্তোষজনক হারে রফতানি বেড়েছিল।
সূত্র জানায়, গত পাঁচ মাসে ১ হাজার ৮০৫ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ৭১ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রফতানি হয়েছিল ১ হাজার ৭০৭ কোটি ডলার। গার্মেন্টস পণ্য থেকেই রফতানির প্রায় ৮৪ শতাংশ আসে। কিন্তু গত পাঁচ মাসে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি কমেছে প্রায় পৌনে ৮ শতাংশ। তাছাড়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গার্মেন্টস পণ্য রফতানি কমেছে সাড়ে ১৩ শতাংশ। গার্মেন্টস ছাড়াও গত পাঁচ মাসে রপ্তানি কমার তালিকায় রয়েছে হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, কৃষি পণ্য ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ১০ শতাংশ, বিশেষায়িত টেক্সটাইল ১৩ শতাংশ, হোমটেক্সটাইল ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তবে এই সময়ে রপ্তানি বাড়ার তালিকায় রয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ, কেমিক্যাল পণ্য ৩ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্য ০.২৯ শতাংশ, হস্তশিল্প ও সমুদ্রগামী জাহাজসহ আরো কিছু পণ্য।
সূত্র আরো জানায়, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগী দেশগুলো পণ্য বহুমুখীকরণ, গুণগত মান, ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত সরবরাহ প্রক্রিয়ায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ সেভাবে পারছে না। বরং এক পণ্যনির্ভর হয়ে যাওয়ায় সার্বিক রফতানিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে রফতানির ক্ষেত্রে গার্মেন্টস নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে নতুন পণ্য রফতানি ও নতুন বাজার সৃষ্টিতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে ইপিবিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ওই লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। পাশাপাশি বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোকেও ভূমিকা রাখতে হবে।
এদিকে রফতানিকারকের একটি অংশ আগামী মাসগুলোয় রফতানি বাড়বে বলে আশাবাদী। এ প্রসঙ্গে ফতুল্লা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসান জানান, আগামী মাসগুলোতে রফতানি বাড়বে বলে আশা করছি। আমার কারখানায় ইতিমধ্যে ক্রয়াদেশ বাড়তে শুরু করেছে। অন্যদের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক। রফতানিতে বাংলাদেশের বড়ো বাজার ইউরোপ এবং বিশেষভাবে জার্মানি। জার্মানিতে রফতানি কমে যাওয়ায় পুরো রফতানিতেবা এর প্রভাব পড়েছে। তবে আগামী মাসগুলোতে রফতানি বাড়লেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, অনেক কারখানারই সক্ষমতার প্রায় অর্ধেকই অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। যা রফতানিকারকদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি করেছে। অথচ এই সময়ে রফতানি বাড়ার কথা। মূলত বাংলাদেশ থেকে কিছু ক্রয়াদেশ স্থানান্তর হয়ে মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামে চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি নতুন মজুরি বাস্তবায়ন ছাড়াও গ্যাস-বিদ্যুতের দর বৃদ্ধির কারণে রফতানিমুখী কারখানাগুলোর উৎপাদন খরচ বেড়েছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর স্থানীয় মুদ্রা ডলারের বিপরীতে দুর্বল হওয়ায় তারা প্রতিযোগিতামূলক দরে অর্ডার নিতে পারছে। আবার বিশ্বব্যাপী পোশাকের দরও কমতির দিকে। সব মিলিয়ে এদেশের রফতানির জন্য চ্যালেঞ্জ বেড়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে রফতানির জন্য ডলারের আলাদা মূল্য নির্ধারণসহ সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন।