মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথমে রয়েছে খাদ্য। বিশে^র বিভিন্ন দেশে খাদ্যের সংকট রয়েছে। আমাদের দেশে তেমন অবস্থা না থাকলেও নিরাপদ খাদ্যের অভাব রয়েছে। প্রতিদিন আমরা যা খাচ্ছি তা যাচাইবাছাই করলে দেখা যাবে সেগুলোর বেশিরভাগই অনিরাপদ। খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত ভেজাল মেশানোর অনৈতিক প্রতিযোগিতা। খাদ্যে ভেজাল আজ আমাদের জাতীয় জীবনে দুর্যোগের আকার ধারণ করেছে। অথচ মানুষের সুস্বাস্থ্য ও বেঁচে থাকার জন্য পুষ্টিকর খাবার অতি জরুরি।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সব পর্যায়ের মানুষ নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সচেতন। তাদের মধ্যে এই বোধটুকু আছে যে, অনিরাপদ খাদ্যের কারণে পুরো জাতি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়বে। অথচ আমাদের দেশের চিত্রটি এর উল্টো। বাড়তি কিছু লাভের আশায় এখানে ব্যবসায়ীরা খাবারে ভেজাল মেশায়। এতে ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ কেউ হয়তো ফায়দা লুটছে কিন্তু সামগ্রিকভাবে তা শুধু ক্ষতিই করছে। ফলে যারা খাদ্যে জীবনসংহারী ভেজাল মেশায় তাদের দূর করতে হবে। এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানুষের মধ্যে নানান ভীতি থাকায় এর বিরুদ্ধে সচেতন কোনো প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি। এতে করে দিন দিন খাদ্যে রাসায়নিক মেশানোর অশুভ প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এর বদলে আইনের মাধ্যমে খাদ্যে ভেজালকারীদের প্রতিরোধ করতে হবে, নয়তো আমাদের ধ্বংস অনিবার্য।
বর্তমানে খাদ্যে ভেজাল অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। ফলে বাংলাদেশের মানুষকে কিডনি রোগ, ক্যান্সারসহ নানাবিধ মরণব্যাধি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়া এত বিপুল জনগোষ্ঠীর মধ্যে অপরাধপ্রবণ মানুষের সংখ্যা বেশি হলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এছাড়া আমাদের দেশে সমস্যা একটা-দুটা নয়। হাজারও সমস্যার এই দেশে তাই অভিযানের পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। খাদ্যে ভেজালকারীদের প্রতিহত করার পাশাপাশি তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
২০১৫ সাল থেকে নিরাপদ খাদ্য আইন কার্যকর করেছে সরকার। এই আইনে খাদ্যে ভেজাল করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদ- দেওয়ার ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়। নিরাপদ খাদ্যের মান নিশ্চিত করতে ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা’ ও ‘বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত’ গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এই আইনের আওতায় সর্বোচ্চ শাস্তিটি লঘু শাস্তি হয়ে গেছে বলে আমরা মনে করি। খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণকারীরা নীরব ঘাতকের মতো। খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে তারা জাতির স্বাস্থ্য ও মেধাকে হত্যা করছে। জাতির শত্রু খাদ্যে ভেজালকারীদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ-ের বিধান করা প্রয়োজন। সর্বোচ্চ শাস্তির ভয়ে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রবণতা বন্ধ হতে পারে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই।