নানা বিশেষণে ভূষিত নগরী ঢাকা সবকিছুকে ছাড়িয়ে এখন পরিণত হয়েছে দূষণের শহরে। এখাকার বায়ু দূষণের মাত্রা বিশে^র সবচেয়ে বেশি দূষিত এলাকাগুলোকে ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে। বিপর্যস্ত এই শহরের অন্যতম অশান্তির কারণ শব্দ দূষণ। ঢাকায় শব্দ দূষণের প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত গাড়ির হর্ন। হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশের পর কড়াকড়ি-অভিযানে এটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও সাধারণ হর্নের যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ঠ। এরই মধ্যে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়ের আশপাশে ঘোষিত ‘নীরব এলাকা’য় যানবাহনের হর্ন বাজালে সরকারের প্রণীত বিধিমালা অনুযায়ী জেল-জরিমানা আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সচিবালয়ের চারপাশ অর্থাৎ জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, সচিবালয় লিংক রোড হয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকা ‘নীরব জোন’ বা ‘নো হর্ন জোন’ হিসাবে হর্ন বাজালে এক মাসের কারাদ- বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন গাড়ির চালক। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে গত ২৫ নভেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে সচিবালয়ের চারপাশ ‘নীরব জোন’ হিসাবে কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। শব্দ দূষণের মারাত্মক ক্ষতি থেকে রেহাই দিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। আন্তঃমন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘নীরব জোন’ জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, সচিবালয় লিংক রোড হয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকায় হর্ন বাজানো যাবে না। এটি মেনে চলা হলে বিষয়টি অবশ্যই আশাব্যাঞ্জক।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীনে প্রণীত ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬’ অনুযায়ী ‘নীরব জোন’ বলতে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বা একই জাতীয় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এবং এর চারিদিকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা এলাকাকে বুঝায়। বিধিমালায় বলা হয়েছে, কেউ এই বিধান প্রথম লঙ্ঘণ করলে সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদ- বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার কারাদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। পরবর্তী অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদ- বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা অর্থদ-ে দ-িত হবেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নীরব জোনে হর্ন বাজালে বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবে। এজন্য মোবাইল কোর্ট ও অন্যান্য সংস্থা অভিযান পরিচালনা করবে। তবে প্রাথমিকভাবে সচিবালয় এলাকা থেকে নীরব জোন চালু হলেও পর্যায়ক্রমে এটি যেন ঢাকার অন্যান্য স্থানেও চালু হয়।
ঢাকার জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ‘নীরব জোন’ কার্যকরের জন্য নীরব জোন বা নো হর্ন জোন চিহ্নিত সাইন বোর্ড স্থাপন করা হবে। ‘নীরব জোন’ বাস্তবায়নে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, জন নিরাপত্তা বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ পারস্পরিক সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন গাড়ি চালকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। চালকদের লাইসেন্স প্রদান এবং নবায়নের সময় অপ্রয়োজনে হর্ন না বাজানোর বিষয়টি লাইসেন্সের শর্ত হিসেবে জুড়ে দেয়া যেতে পারে। আমরা আশা করি অপ্রয়োজনীয় গাড়ির হর্ন থেকে ঢাকা মুক্ত হবে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে।