ভবিষ্যতে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রোধে দেশে প্রথমবারের মতো পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশে তেল, গম, ডাল ও আলুর জন্য গুদামঘর রয়েছে। কিন্তু পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য গুদাম নেই। পেঁয়াজের দাম নিয়ে নানা সময়ে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে রেকর্ড হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন এবং বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন (টিসিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পেঁয়াজ সংরক্ষণে সরকার প্রাথমিকভাবে ৬টি গুদামঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চট্টগ্রাম, রংপুর ও মৌলভীবাজার জেলায় মোট ৬টি গুদাম নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি জেলায় দুটি করে গুদাম নির্মাণ করবে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। টিসিবির নিজস্ব জমিতে ওসব গুদাম নির্মাণ করা হবে। ৬টি গুদাম নির্মাণে মোট খরচ ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এই টাকার জোগান দেয়া হবে। প্রকল্পটিতে যেহেতু ৫০ কোটি টাকার কম খরচ হবে, তাই সেটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় যেতে হবে না। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিজ ক্ষমতাবলে প্রকল্পটি অনুমোদন করতে পারবেন।
সূত্র জানায়, দেশে এখন বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ থেকে ২৫ লাখ টন। তার মধ্যে ১৮ লাখ টন পেঁয়াজ দেশেই উৎপাদন হয়। আর আমদানি করতে হয় ৬ লাখ টনের মতো। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয় দাবি করে আসছে, পেঁয়াজের উৎপাদন ২০ লাখ টনের বেশি। কিন্তু বর্তমানে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সামাল দিতে টিসিবির মাধ্যমে কম দামে বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। পাকিস্তান, তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা অব্যাহত থাকলেও এখনো পণ্যটির দাম সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি ঘিরে ভবিষ্যতে যাতে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করতে না পারে এবং ভারত, মিয়ানমার, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে না হয়, সেজন্য পেঁয়াজ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ বৈজ্ঞানিক উপায়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে না পারায় দেশে উৎপাদিত কৃষকের অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়।
সূত্র আরো জানায়, পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, মাগুরা, মেহেরপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর ও রংপুরে অধিক পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম, রংপুর ও মৌলভীবাজার জেলায় টিসিবির নিজস্ব জমি রয়েছে। গুদাম নির্মাণে জমি অধিগ্রহণের ঝামেলায় যেতে হবে না। ফলে দ্রুত গুদামঘর নির্মাণ করা যাবে। আর ৬টি গুদাম নির্মাণ শেষ হলে দুভাবে সেখানে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হবে। প্রথমত, কৃষকের কাছ থেকে কিনে এনে গুদামে রাখা হবে। দ্বিতীয়ত, সরকার চাইলে গুদামঘর ভাড়াও দিতে পারে। তবে সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধন্ত হয়নি। ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হলে আলাপ-আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। টিসিবি এখন তেল, গম, ডাল, আলু যেসব গুদামঘরে রাখে, সেগুলো ভাড়ায় নেয়া। বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য ভাড়া নিলেও পুরো বছরের টাকা দিতে হয়। এতে সরকারের অনেক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। সরকারের নিজস্ব গুদামঘর থাকলে আর ওই সমস্যায় পড়তে হবে না। পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়াও গুনতে হবে না।
এদিকে এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) সাহিন আহমেদ চৌধুরী জানান, দেশে এতোদিন পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ৬টি গুদাম নির্মাণ হলে সেখানে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। তাতে একদিকে কৃষক তাঁর পেঁয়াজ ওসব গুদামে রাখতে পারবেন, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও আর পেঁয়াজের দাম বাড়াতে পারবেন না।
অন্যদিকে এ বিষয়ে টিসিবির সচিব এনামুল হক জানান, আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে ৬টি পেঁয়াজের গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। আর টিসিবির নিজস্ব জমিতে ওসব গুদামঘর নির্মাণ করা হবে।