বিআরটিসি বাস সার্ভিস বন্ধ ও শ্রমিক মারধরের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনেও ময়মনসিংহ থেকে সবধরনের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে বৃহত্তর ময়মনসিংহের পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। বাস শ্রিমিকদের সাথে একাত্ততা প্রকাশ করে মাহেন্দ্র ও সিএনজি চলাচল বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। ফলে যানবাহণ সংকটে চরম দূর্ভোগে পড়ে যাত্রী সাধারণ। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া অযৌক্তিক ধর্মঘটে মানুষকে জিম্মি করা হয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এদিকে বাস চালু করতে প্রশাসনের সহায়তা পাচ্ছেন না বলে জানান বিআরটিসির কর্মকর্তারা। তবে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চলাচল বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। নাগরিক নেতারা বলছেন, রাষ্ট্রের পরিবহন চলতে না দেয়া ফৌজদারী অপরাধ। আর পুলিশ সুপার জানান, দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধের দাবীতে ময়মনসিংহ থেকে সবধরনের বাসায় চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এতে ময়মনসিংহ থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রংপুরসহ দুরপাল্লা ও আন্ত:জেলার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাটগুদাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রিকশা-অটোরিকশার ছোট ছোট যানবাহন চলাচলেও বাঁধা দেয় শ্রমিকরা। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে বাস না পেয়ে গন্তব্যে যেতে পারছেন না যাত্রীরা। যাত্রীরা বলছেন, অযৌক্তিক ধর্মঘট ডেকে মানুষকে জিম্মি করা হয়েছে।
একাধিক শ্রমিক নেতা জানায়, ময়মনসিংহ বিআরটিসি বাস ডিপো থেকে এ অঞ্চলের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়কে বাস সার্ভিস চালু করে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ । সম্প্রতি তারা ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কেও বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করে। এতে পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকরা আপত্তি জানায়। বারবার জানানোর পরও বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ না করায় অন্য বাস মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। যার ফলে তারা গত সোমবার (৯ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে তিনটা থেকে শহরের মাসকান্দা আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাগামী এবং পাটগুদাম বাস টার্মিনাল থেকে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, নেত্রকোনা, হালুয়াঘাট, ফুলপুর,তারাকান্দা, গৌরীপুর, ধোবাউড়া. শেরপুর রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, রংপুর, বগুড়া রাজশাহীসহ বিভিন্ন সড়কে বাস চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়।
নেত্রকোনাগামী যাত্রী ইকবাল হোসেন জানান, আমার জরুরী প্রয়োজনে নেত্রকোনা যাওয়া প্রয়োজন। এভন বাস সিএনজি সব বন্ধ রয়েছে। এখন কি করব বুঝতে পারছিনা।
এ দিকে বিআরটিসি, ময়মনসিংহ বাস ডিপোর
ম্যানেজার লুৎফুর রহমান আজাদ, জানান, পরিবহন শ্রমিকদের দাবী, বিআরটিসি বাস চলার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা।
এদিকে বাস চালু করতে প্রশাসনের সহায়তা পাচ্ছেন না বলে জানান বিআরটিসির কর্মকর্তারা।
ময়মনসিংহ জিলা মটর মালিক সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন জানান, আমরা তিন মাস আগে থেকে তাদের কাছে বিভিন্ন দাবী জানিয়ে আসছি। কিন্তু বিআরটিসি কোনো ভাবেই বিষয়টি আমলে নিয়নি। বাস মালিকরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আজ লোকসানে পড়ছে। অনেক শ্রমিক আজ পথে বসেছে।বিআরটিসি বাস সার্ভিস বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বাস চলবে না বলে জানান তিনি।
অপর দিকে সামাজিক সংগঠন জনউদ্যোগ এর আহবায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, বিআরটিসি বাস চলাচলে বাঁধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। মানুষ যে পরিবহনে চড়ে স্বাছন্দ বোধ করবে তারা সেই পরিবহনে চড়বে। এখানে বাধা দেওয়া আইন পরিপন্ত্রী।
জেলা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে আজকের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ থেকে নান্দাইল, ফুলপুর, মুক্তাগাছা, ত্রিশাল ও নেত্রকোনা রুটে ২৯টি বিআরটিসি দোতলা বাস চলাচল করে। গত রোববার ময়মনসিংহ- নেত্রকোনা রুটে বিআরটিসি বাস চালুর পর থেকেই বাঁধা দিতে শুরু করে পরিবহন শ্রমিকরা।