বৃৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে ক্যাম্পাসে পৌঁছে সিঁথি। শরীরের প্রতি অঙ্গ জল শুষে ভারী হয়ে উঠেছে, কাপড় পাল্টে ফেলা উচিত হলেও আর হয়ে ওঠেনি। তাড়াতাড়ি ক্লাসে যায়। যেতে না যেতে রাজ্যের ভয় সব নেমে আসে স্যারের দু-চোখে। গভীর ভয়ের ভেতর হারিয়ে যায় সিঁথির ভাবনাজগত! তারপরও মন দিয়ে ক্লাস করে সে। মাথায় ঘুরতে থাকে পথের সেই যাযাবর মানুষটার মুখ। কেমন উশকো-খুশকো...ভাবতেই এলোমেলো হয় চিন্তার বর্তমান। এই বর্তমানে দাঁড়িয়ে সিঁথি ঘুরে আসে সকালের রোদমাখা হাসি। সেখানে সিঁথির রঙধনুতে সাতরং, সাতরঙে একলাই এগিয়ে চলে সিঁথির পা...
পরদিন ঘুম ভাঙ্গে অক্ষরের ডাকে।
সিঁথি আপু কি রাতের ঘুমটাও আগাম ঘুমিয়ে নিলে আজ?
না রে, আমার তো মনে হয় ঘুমাইইনি, শরীর কেমন ম্যাজম্যাজ করে, ইচ্ছে হয় শুয়ে থাকি আরো কিছুক্ষন।
শুয়েই থাকো না তাহলে।
শুবো? বলেই শুয়ে পড়ে। পায়ের কাছে বসে অক্ষর।
তোর এরপর কাজ কখনরে?
রাতে আপু।
তাহলে তো ভালোই হলো, দিনটা কাটাতে পারবি আমার সঙ্গে।
সেজন্যই তো এলা আপু।
মায়ের কাছে বলে এসেছিস?
মাথা নিচু করে অক্ষর। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে সিঁথি
একটা বিষয় ভেবে দেখলাম অক্ষর।
কি আপু?
আমাদের এখানে যাযাবরের সংখ্যা, জানিস?
না আপু। তবে কয়েকজনতো প্রায়ই দেখি।
তুমি বললে গোণা শুরু করি?
হ্যাঁ গুণবি, তার আগে আমার পরিকল্পনাটা শোন।
বলো।
ভাবছি পড়াশুনা শেখাবো তোকে।
আমাকে?
হ্যাঁ তোকে, দোষ কি?
কি হবে তাতে?
পড়াশুনা খুব বেশি শিখতে হবে না তোকে, পত্রিকা পড়ার মত অক্ষরজ্ঞান নিতে পারলেই চলবে।
পারবো আপু?
খুব পারবি।
ঠিক আছে, কি করতে হবে বলো?
বলবো, ধীরে ধীরে, তোর আসল কাজ শুরু হবে পড়াশুনা শেখার পর, নিজে শিখে, পরিবারের অন্যদেও শেখাবি।
আমার পরিবার?
হ্যাঁ, তোর পরিবার।
অক্ষরের সঙ্গে দিন ভালোই কাটে। রাতের শুরুতে বিছানায় চলে যায় সিঁথি।যাযাবর লোকটার কথা বিশ্লে¬ষণ করে মনে মনে, সে কি এমনই ছিল, না কোন কারণে আজ যাযাবর ? মাঝে মাঝে মানসিক ও শারিরীক যে উপলব্ধি ঘটেছে, যদি স্বপ্ন বলে ওটাকে, তাহলে ওটা একটা স্বপ্ন, যদি স্বপ্নই হয়ে থাকে, শুধু স্বপ্ন বলেও উড়িয়ে দিতে পারে না, ওর গভীরে রয়েছে কোনো কিছুর প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত, যা ঘটেছে, একেবারে বাস্তবতাহীন বলেও ভাবতে চায় না, নিজেকে এর ভেতরে জড়িয়ে নিতে ভালো লাগে, ঘটনাগুলো হয়তো ঘটেছে তার চেতনার ভেতরেই, বাইরে থেকে এগুলোকে প্রবিষ্ট করানো তো সম্ভব নয়। এভাবনায় ডুবে যেতে থাকে সিঁথি, কোনো কূল-কিনারা পায় না। ভালো ঘুম হয় না রাতে, পরদিন সকালে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় মনে মনে খোঁজ করে। খুঁজতে খুঁজতে হাটার সময় অনেকটা অবাক করে দিয়ে সামনে চলে আসে সে। এই লোকটাকে কেন যে এত ভালো লাগে? উত্তর খুঁজে পায় না সিঁথি। তবুও এগিয়ে উত্তরের রাস্তা ধরে। যদি পাওয়া যায় মনের মত কোন জবাব...
অ - নে- ক দিন পরের কথা সেই যাযাবর লোকটি এখন সিঁথির বর। দামি মার্সিডিজ-এ পা বাড়িয়ে দিচ্ছিল লোকটি হঠাৎ করেই একজোড়া হাত এগিয়ে আসে-
আপনার ভালোবাসাটা আমাকে দেবেন?
আড় চোখে তাকিয়ে থাকে সিঁথি খুবই পরিচিত কন্ঠ। কিন্তু বুঝতে পারছিল না। চোখ যায় আগুন্তকের চোখের পাতায়। চিনতে পারে।
একগাল হাসি দিয়ে কেবল বলে- অক্ষর কাছে না আসলে ভালোবাসা হয় না। আগে কাছে আয় পরে দিচ্ছি তোর ভালোবাসা...