১৬ বছরেও বিচার হয়নি লালমনিরহাট জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সামসুল ইসলাম সুরুজ হত্যার। কয়েক দফায় পিছানোর পর চলতি বছরের ৫ মার্চ বাদির জবানবন্দির মধ্য দিয়ে বিচার কার্য শুরু হলেও বীর দাপটে ঘুরে বেড়াচ্ছে হত্যা কন্ডের সাথে জড়িতরা।
মামলার বিবরনে প্রকাশ, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কমলাবাড়ি ইউনিয়নের টানা ৬ বারের ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সামসুল ইসলাম সুরুজকে ২০০৩ সালের ২১ ডিসেম্বর দিনগত রাতে নিজ এলাকায় বাড়ি ফিরার পথে দুর্বৃত্তরা নৃশংস ভাবে তাকে খুন করেন। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই বর্তমান আদিতমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শওকত আলী বাদি হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় একটি হত্যা মামলা (১১/২০১ এবং জিআর ২০১/০৩(অ)) দায়ের করেন।
মামলায় বলা হয়, আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়নের চড়িতাবাড়ি এলাকার মৃত কিসমত আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী ও আব্দুল খালেক সরকারের ছেলে আব্দুল মান্নান দলবল নিয়ে পুর্ব শত্রুতার জের ধরে সুযোগ বুঝে তাদের বাড়ির পাশে আওয়ামীলীগ নেতা কমলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল ইসলাম সুরুজকে পথরোধ করে ধারালো অস্ত্রে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
থানায় দায়ের করা হত্যা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডি। তারা মামলাটি তদন্ত করে আরো ৪ জনকে আসামী করে মোট ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্যসীট গঠন করেন।
নিহত সামসুল ইসলাম সুরুজ লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আংশ গ্রহন করেছিলেন। দলের এ ত্যাগী নেতার মৃত্যুর কয়েক দিনের মধ্যে তার পরিবারের সদস্যদের শান্তনা জানাতে ছুটে আসেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায়ত নেতার শোকাহত পরিবারকে সমবেদনার পাশাপাশি খুনিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। শুধু তাই নয় প্রায়ত নেতা সুরুজের বড় ছেলে ইমরুল কায়েস ফারুকের লেখাপড়া থেকে সবকিছুর দায়িত্ব নেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রয়াত এ নেতার বড় ছেলেকে নিজ বাসায় রেখে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করেন শেখ হাসিনা। প্রায়ত নেতা সুরুজের বড় ছেলে ইমরুল কায়েস ফারুক বর্তমানে আদিতমারী উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান।
সেই প্রায়ত নেতা সুরুজের হত্যার ১৬ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত হত্যার ন্যায় বিচার পায়নি নিহতের পরিবার। এরই মধ্যে এ মামলার ২নং আসামী আব্দুল মান্নান ও ১৭নং আসামী তোতা মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। বাকী আসামীরা সবাই জামিন নিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। বার বার বিচার কার্য শুরু হওয়ার দিন তারিখ ধার্য হওয়ার পরেও অদৃশ্য কারনে তা পিছিয়ে পড়ছিল। অতপর বিচার কার্জ শুরু হলেও তা চলছে কচ্ছপ গতিতে।
অপর দিকে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস এলে প্রয়াত নেতার প্রতিষ্ঠিত একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্মরণ সভা, মিলাদ মাহফিল ও বিচার দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এ বছর সুরুজের ১৬তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আদিতমারী ডিগ্রী কলেজ মাঠে নেয়া হয়েছে নানান আয়োজন।
দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে আদিতমারী সরকারি ডিগ্রী কলেজ ও সাহাদাৎ উদযাপন কমিটির আয়োজনে সকালে কোরআন খতম, কবর জিয়ারত, পুষ্পমাল্য অর্পন, শোক র্যাালি অনুষ্ঠিত হয়। সকালে একটি বর্ণাঢ্য শোক র্যালি আদিতমারী কলেজ চত্বর হতে বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা চত্বরে এসে শেষ হয়।
পরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আদিতমারী সরকারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আজিজার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্বরন সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুল হক।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল সরকারের সঞ্চালনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, শহীদ সামসুল ইসলাম সুরজের জ্যেষ্ঠ পুত্র আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস ফারুক।
এ সময় অন্যান্যেদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পলাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পলাশী আওয়ামীলীগে সভাপতি শওকত আলী,জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক প্রধান শিক্ষক এস নীল কমল রায়, আদিতমারী সরকারী ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক তাজুল ইসলাম, প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিম মিয়া,উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি বাদশা ফরহাদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রভাষক আশরাফুজ্জামান খাঁন মোরশেদ, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি (ভারঃ) নবী হোসেন ও শহীদ সামসুল ইসলাম সুরজের কনিষ্ঠ পুত্র মাহমুদ ওমর চিশতী প্রমূখ। আলোচনা সভা শেষে শহীদ সামসুল ইসলাম সুরজের রূহের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
নিহতের বড় ছেলে ইমরুল কায়েস ফারুক জানান, বিচার কার্য শুরু হতে বিলম্ব হওয়ায় বেশ কিছু আলামত নষ্ট হতে বসেছে এবং স্বাক্ষীদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে মারাও গেছেন। কেউ আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যা মামলার বিচার কার্যে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়াও এরই মধ্যে এজাহারভুক্ত দুই জন আসামী মারা গেছেন। বিলম্বে হলেও বিচার কার্য শুরু হয়েছে। তবে কচ্ছপ গতিতে বিচার কার্য চলছে।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট আদালতের সরকারী আইন কৌশুলী (পিপি) অ্যাডভোকেট আকমল হোসেন জানান, বেশ কয়েকজন বিচারকের পদলিজনিত কারনে কয়েক দফায় দিনক্ষণ পিছালেও চলতি বছরেরর ৫ মার্চ বিচার কার্য শুরু হয়েছে। এ দিন বাদির জবানবন্দির মধ্য দিয়ে বিচার কার্য শুরু হবে বলেও জানান তিনি।