ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রামের নদীর তীরবর্তি উপজেলা চিলমারীর মানুষজন। প্রকোট শৈত্য প্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত ১০ দিন ধরে সূর্যের দেখাও মিলছে না। দিনের বেলা মেঘাচ্ছন্ন আকাশে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। কুয়াশার সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। ফলে দিনে রাতে প্রচন্ড ঠান্ডায় কাহিল নদীবেষ্টিত এ উপজেলার মানুষজন। ঘন কুয়াশা আর শৈত্য প্রবাহের তীব্রতায় ফুটপাতের দোকানগুলোতে বসা স্বল্প মূল্যের পুরাতন কাপড় কেনার জন্য দোকানগুলোতে ভীড় জমাচ্ছে শীর্তাত মানুষ। নিজেদের সাধ্যমত কিনছেন সামান্যতম শীতবস্ত্র।
গরম কাপড়ের অভাবে যেন শীতের সময় সন্তানরা কষ্ট না পান তাই অল্প টাকা দিয়ে সন্তানদের জন্য ভারী পোশাক কিনেছেন বলে জানান দিনমজুর নুর ইসলাম, আব্দুল মজিদ, লাল মিয়া, সাজু।
শীত বস্ত্র কিনতে আসা চরাঞ্চলবাসি মুকুল এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন ১০ দিন থেকে সুর্যের দেখা নাই, কোন কাজ কর্ম নাই সারাদিন বাড়িতে থাকতে হয়। শীত নিবারনের জন্য কমদামে ঠান্ডার কাপড় কিনতে আসছি।
রহিমা বেগম ও বলেন, এই শীতে বাচ্চাদের খুব কষ্ট হচ্ছে তাই ফুটপাত থেকে অল্প টাকায় বাচ্চার ঠান্ডার কাপড় কিনছি।
ফুটপাতের দোকানদারদের সথে কথা বলে জানাযায়, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্রেতারাই বেশি। তবে সেই সাথে ভ্যান চালক, রিকশা চালক, দিন মজুরসহ হতদরিদ্র ও শীতার্ত মানুষরাই এখান থেকে শীতবস্ত্র কিনছেন। সন্ধ্যার পরপরই গ্রাম ও শহরের দোকানগুলো ক্রেতা সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। দিনে বা রাতে অনেকেই খড়কুটো জালিয়ে শীত নিবারণের জন্য চেষ্টা করছেন এসব শীতার্ত মানুষ। তীব্র শীতের কারণে দিনমজুররা কাজকর্ম তেমন না পেয়ে মানবেতর জীবন করছেন।
বঙ্গবন্ধু কর্তৃক আহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনুদানের চেক পেলেও গেজেটে নেই নুরুল ইসলামের নাম।
সিদ্দিকুল ইসলাম সিদ্দিক, চিলমারী, (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মৌজাথানা (আকন্দপাড়া) এলাকার প্রয়াত নুরুল ইসলাম মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে সম্মুখ সমরে আহত হলেও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম স্থান পায়নি। স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে পাক-হানাদার বাহিনীর তান্ডব থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণে তাঁর আপন ছোট ভাই আবু বক্কর ও ভাতিজা আশরাফ আলীকে সাথে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পারি দিয়ে রৌমারী সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মানকার চরের মুক্তিবাহীনির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ১১নম্বর সেক্টরের অধিনে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন । স্বাধীনতার পর ভাই ও ভাতিজার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও বাদ পড়ে যায় নুরুল ইসলামের নাম। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকহানাদার বাহীনির বিরুদ্ধে প্রাণপন লড়াই করতে গিয়ে তার বাম হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি গুরুত্বরভাবে আহত হন। তাঁর বীরত্বের জন্য স্বাধীনতাত্তোর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার স্বাক্ষরিত পত্রে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল হতে আহত এ মুক্তিযোদ্ধাকে অনুদান হিসেবে ৫০০/- (পাঁচশত) টাকার চেক প্রেরণ করেছিলেন । যার স্বারক নং-প্রত্রাক-০৬/০৪/৭২/সিডি-১১০৬। চেক নং-সি,এ-০১৬৭৭৩। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধুর স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের নাম আজও মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়নি। এ ব্যাপারে মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী মোছাঃ আবেদা খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তুর্ভুক্তির জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেও তাঁর জীবদ্দশায় তিনি তাঁর নাম তালিকাভুক্ত করতে পারেননি। যুদ্ধকালীন তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ক্ষনিকের জন্য আমাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে এসেছিলেন। আমি আবেগ আপ্লুত হয়ে যুদ্ধে যেতে বারণ করলেও তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার প্রত্যয়ে আমার কাছে শেষ বিদায় নিয়ে পরিবার পরিজন ছেড়ে আবারও আহত অবস্থায় আবারো যুদ্ধক্ষেত্রে চলে যান। দেশ স্বাধীন হলে তিনি রাজস্ব বিভাগের সহকারী তহসিলদার পদে চাকুরিতে ফিরে যান। রংপুর জেলার গঙ্গাছড়া (গজঘন্টা) এলাকায় চাকুরিকালীন অনুদানের চেক ও কৃতজ্ঞতার চিঠি হাতে পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে নিজেকে সামলে নিয়ে চিৎকার করে বলছিলেন “এটি টাকা নয় এটি আমার তাঁজা রক্ত ঝড়ানোর সনদ।” এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাকে ও আমার পরিবারকে মহান স্বাধীনতায় আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দান করেছে যা চিরস্বরনীয় হয়ে থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চিলমারী কমান্ডের কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মহসিন আলী, বীরমুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী সরকার (বীরবিক্রম), মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কুড়িগ্রাম কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম টুকু স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর আহত হওয়া ও অনুদানের চেক প্রাপ্তি বিষয়ে অবহিত ছিলেন। নুরুল ইসলামের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের বিষয়ে উপজেলা কমান্ড চিলমারী কমান্ডার আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম (যুদ্ধকালীন প্রশিক্ষক) এ প্রতিবেদককে জানান, নুরুল ইসলাম রৌমারীতে আমার কাছে সর্ট প্রশিক্ষণ করে এবং প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে মানকারচর ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে তিনি তৎকালীন ১১নং সেক্টরের কোম্পানী কমান্ডার আবুল কাশেম চাঁদের নেতৃত্বে বিভিন্ন অপারেশনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় না থাকায় তিনি গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। প্রত্যক্ষদর্শী ১১নং সেক্টরের প্লাটুন কমান্ডার ও প্রশিক্ষক এমএফ সোলাইমান হোসেন জানান, রৌমারী প্রশিক্ষণ শিবিরে নুরুল ইসলাম দক্ষতার সাথে প্রশিক্ষণ করেছে এবং যুদ্ধকালীন আহত হওয়ার বিষয়ে জানতেন ও বঙ্গবন্ধু তাকে অনুদান দিয়েছিলেন বলে তিনি অবহিত ছিলেন। তার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকা না থাকাটা দুঃখজনক। নুরুল ইসলাম জীবিত না থাকলে ও তার স্ত্রী সন্তানেরা সংশ্লিট দপ্তরে ধরনা দিয়েও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে না পারায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।