দেশের পুরনো গ্যাস কূপগুলো নতুন করে খননের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে চাচ্ছে সরকার। সেজন্য পুরনো কূপগুলো পুনর্মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ যেসব জায়গার কূপ খনন করে কম গ্যাস পাওয়া গেছে বা গ্যাস শেষ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে ওসব জায়গায় আরো গ্যাস আছে কিনা তা নতুন করে অনুসন্ধান করা হবে। আর গ্যাস পাওয়া গেলে সেখানে নতুন করে কূপ খননের পক্ষে মত দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হলেও গ্যাসের ক্ষেত্রে এখনো তেমন অবস্থা তৈরি হয়নি। বরং চাহিদার তুলনায় গ্যাসের ঘাটতি এখনো বেশি। সেজন্য চাহিদা মেটাতে দেশীয় গ্যাসের পাশাপাশি বিদেশ থেকে বেশি দাম দিয়ে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় সরকার দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আর তারই অংশ হিসেবে দেশের ১১টি পুরনো কূপ আবার নতুন করে খনন করে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে মোট ৩৪টি কূপ ড্রাই এবং পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া সাসপেন্ডেন্ট (নানা জটিলতায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে) আছে আরো ১৮টি কূপ। জ্বালানি বিভাগ তার মধ্যে ১১টি কূপ আবার যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই ১১টি কূপের মধ্যে আছে কসবা-১, মোবারকপুর-১, শ্রিকাইল-১, রূপগঞ্জ-১, সুন্দলপুর-১, সালদানদী-১, সালদানদী-২, মুলাদি-১, মুলাদি-২, সেমুতাং-১ এবং হালদা-২। কূপগুলোর মধ্যে মুলাদিতে রয়েছে সবচেয়ে পুরনো কূপ। ১৯৭৬ সালে মুলাদী-১ কূপটিতে ৪ হাজার ৭৩২ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়। একইভাবে ১৯৮১ সালে মুলাদি-২ কূপটি খনন করা হয়। কূপটির ৪ হাজার ৫৫৬ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়।
একইভাবে ১৯৯৬ সালে সালদানদী-১ কূপে ২ হাজার ৮৩৯ মিটার, ১৯৯৮ সালে হালদা-১ এ ৪ হাজার ৫১৯ মিটার, ১৯৯৯ সালে সালদানদী-২ কূপে ২ হাজার ৪৫৮ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়। ২০০৪ সালে শ্রীকাইল-১ কূপটির ৩ হাজার ৫৮৩ মিটার পর্যন্ত, ২০১১ সালে সুন্দলপুর-১ এর ৩ হাজার ৩২৭ মিটার পর্যন্ত, ২০১৪ সালে রূপগঞ্জ-১ এর ৩ হাজার ৬১৫ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়। তাছাড়া ২০১৬ সালে মোবারকপুর-১ কূপটিতে ৪ হাজার ৬২৪ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়। একইভাবে ২০১৮ সালে সেমুতাং-১ কূপে ৩ হাজার ২০ মিটার এবং একই বছর কসবা-১ এর কূপটিতে ২ হাজার ৫৫৭ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়।
এদিকে বাপেক্স সংশ্লিষ্টদের মতে, কসবার কূপটি খননের পর গ্যাস পাওয়া যায়। তবে তা থেকে মাত্র ৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ওঠে। এরপর আর ওঠেনি। ফলে সেখান থেকে পাইপ লাইন করে গ্যাস গ্রিডে দেয়া বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হবে না বলেই সিদ্ধান্ত নেয় বাপেক্স। তবে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে। কূপের ভেতরে যে কাঠামো থেকে গ্যাস তোলা হয়, সেখানে সাধারণত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। ওই ছিদ্রের একটা থেকে অন্যটির দূরত্ব বেশি এবং যুক্ত নয়। এই অবস্থাকে টাইট স্যান্ড (অপেক্ষাকৃত শক্ত ভূ-কাঠামো) বলে। উন্নত বিশ্বের অনেক কোম্পানি এমন কাঠামো থেকে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন করে থাকে। কিন্তু বাপেক্সের কাছে এমন ধরনের কোনো প্রযুক্তি নেই। ফলে কূপটি রিভিউ করে অন্য কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বাপেক্সের কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
একইভাবে সুন্দলপুরেরও টাইট স্যান্ড, মোবারকপুরের কূপের মুখে আগুন দিয়ে গ্যাসের চাপ পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রেসার (চাপ) কম থাকায় কূপ থেকে গ্যাস তোলা বন্ধ রাখা হয়। শ্রীকাইলেও টাইট স্যান্ড আবার কূপ খননের সময় পানি উঠে আসায় গ্যাস উত্তোলনে যেতে পারেনি বাপেক্স। রূপগঞ্জে প্রথমদিকে গ্যাস উঠলেও পরে প্রেসার কমে যায়। এখনো সেখানে গ্যাস আছে। টাইট স্যান্ড থাকার কারণে বাপেক্স কাজ করতে পারছে না। সেমুতাংয়ে অনেক কম্পার্টমেন্ট আছে। একটি কম্পার্টমেন্ট থেকে গ্যাস শেষ হয়ে গেছে। অন্য কম্পার্টমেন্টগুলো জটিল। তাই বাপেক্স আর গ্যাস তুলতে পারিনি। বাপেক্সের ওই অভিজ্ঞতা নেই। মুলাদির দুটি কূপ অনেক আগের। প্রথমদিকে গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে আর তোলা যায়নি। সেগুলোতে এখন যৌথ ব্যবস্থায় পুনর্খননের পরিকল্পনা করছে বাপেক্স।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, গ্যাসের চাহিদা পূরণ করতে যেমন বাইরে থেকে গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে, তেমনি দেশের মধ্যে পুরনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোর কূপ থেকে এখনো গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলো রিভিজিট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশের মধ্যে এখনও এমন কূপ আছে যেখানে গ্যাস আছে, কিন্তু প্রযুক্তির সমস্যার কারণে তা উত্তোলন করা যাচ্ছে না। কিন্তু উন্নত বিশ্ব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন সব জায়গা থেকে গ্যাস তুলছে। ফলে বাপেক্স অন্য কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে সেসব জায়গায় কাজ করতে পারে এবং যদি গ্যাস উত্তোলন করতে পারে তাহলে দেশ লাভবান হবে।