মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের শীর্ষস্থানীয় জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা, পরবর্তীতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ১৭৬ জনের প্রাণহানী দুঃখজনক। মূল্যত দুটি ঘটনাই ট্রাম্পের হঠকারিতায় সৃষ্ট সঙ্কট। এখনো উদ্ধত ট্রাম্পের মধ্যে শান্ত ও নমনীয় হওয়ার লক্ষণ নেই। উল্টো আরো সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইরান যদি মার্কিন স্বার্থ ও সম্পদের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুত প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করে তবে ইরানের ৫২টি গুরুত্বপূর্ণ স্থান তাদের নিশানায় রয়েছে, যেগুলোতে খুব কঠোরভাবে হামলা করা হবে।
যদিও ইউক্রেনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাকে ‘অমার্জনীয় ভুল’ বলে উল্লেখ দুঃখ প্রকাশ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিমানটি বিধ্বস্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাও হতে পারে। একই মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
সোলেইমানির হত্যাকে কেন্দ্র করে যদি মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বেধে যায়, তাহলে সমগ্র এলাকায় জ্বালানি তেল উৎপাদনে মারাত্মক ক্ষতি হবে। যার প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে। আর এ যুদ্ধ শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যেই সীমিত থাকবে না, তা ছড়িয়ে পড়বে বিভিন্ন অঞ্চলে, এমনকি সমগ্র বিশ্বেই।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ইসরায়েলের একটি বড় স্ট্র্যাটেজি রয়েছে। পেন্টাগনের কট্টরপন্থি ইসরায়েলি লবি ও অস্ত্র ব্যবসায়ীরা মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ চায়। যুদ্ধ হলেই অস্ত্রের চাহিদা বাড়বে, লাভবান হবে অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী সর্বাত্মক একটি যুদ্ধের অংশ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরের দিয়াগো গার্সিয়ায় তাদের যে সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, সেখানে ছয়টি বি-৫২ দীর্ঘ পাল্লার বোমারু বিমান পাঠিয়েছে। এর আগে সেখানে ৪ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ আবু গারাইব, কাদিমিয়া, সাইকেস, ক্যাপ তাজি, বালাদ এয়ার বেস, ভিক্টরি বেস কসপ্লেকস। বাহরাইনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ৫ম ফ্লিটের সদর দপ্তর। এ ছাড়া সৌদি আরবে রয়েছে একাধিক ঘাঁটি। যুক্তরাষ্ট্রকেও মনে রাখতে হবে, এসব ঘাঁটি সম্ভাব্য ইরান আক্রমণে ব্যবহৃত হতে পারে।
সুলেইমানি হত্যাকা-ের প্রতিশোধ হিসেবে ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ১২টি রকেট হামলা চালিয়েছিল ইরান। ধারণা করা হয়েছিল, এরপর যুক্তরাষ্ট্রও ইরানে হামলা চালাবে। কিন্তু তা হয়নি। ট্রাম্প এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, তিনি যুদ্ধ নয়, শান্তি চান। কিন্তু এটা তার মনের কথা কি না সে ব্যাপারে অনেকেই সন্দিহান। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, তার কথা ও কাজের মধ্যে কোনো মিল নেই। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি যাতে শান্ত ও যুদ্ধ যেন অপরিহার্য না হয়, সেটাই আমাদের কাম্য। দুই পক্ষকেই যুদ্ধ পরিহার করে আলোচনার পথ ধরতে হবে, তবে এ সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে। কারণ, এ সংকটের মূলে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প । তিনি যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নেন, তবে বিশ্বব্যাপী নতুন ও বিপজ্জনক সঙ্কট তৈরি হবে।