বিদায়ী ২০১৯ সালের বছরজুড়েই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে অস্থিরতায় কেটেছে দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা বিরাজ করলেও প্রায় প্রতিটি ঘটনার পেছনেই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি ‘উপাচার্য’।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, নিয়োগবাণিজ্য, নারী কেলেঙ্কারি, সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনাসহ নানাবিধ অভিযোগ ওঠে। উপাচার্যের বিতর্কিত ও অনৈতিক কর্মকা- নিয়ে তাদের পদত্যাগসহ শাস্তির দাবিতে বছরের গুরুত্বপূর্ণ সময় আন্দোলনে ব্যয় করে শিক্ষার্থীরা। বলা যেতে পারে, বিশ্বিবিদ্যালয় ভেদে উপাচার্যদের দুর্নীতি, অনিয়ম, অদক্ষতা ভিন্ন হলেও অস্থিরতার পেছনে সবার ভূমিকাই ছিলো অভিন্ন। ফলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশটি বছরজুড়েই মোকাবিলা করেছে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। এতে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, অন্যদিকে ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে উচ্চশিক্ষাঙ্গনে।
পাঠকদের উদ্দেশে কতিপয় বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্যদের কা-জ্ঞানহীন কর্মকা-ের আমলনামা তুলে ধরা হলো-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি, ডাকসু নির্বাচনে পক্ষপাতমূলক আচরণ, উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে তৃতীয় হয়েও রাষ্ট্রপতি দপ্তরে পাঠানো তালিকায় নিজের নাম প্রথমে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্য কোর্সে ছাত্রলীগের ৩৪ নেতাকে অবৈধভাবে ভর্তি করায় তাকে ‘চিরকুট উপাচার্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তার পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু পদত্যাগ না করলেও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা হার মেনেছে দেশের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়ন প্রকল্পে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠে ওই উপাচার্যের বিরুদ্ধে। উপাচার্যের মধ্যস্থতায় শাখা ছাত্রলীগ নেতাদের ‘ঈদ বোনাস’ হিসেবে উন্নয়নকাজের মধ্য থেকে এক কোটিরও বেশি টাকা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন ‘ঈদ বোনাস’ পাওয়া ছাত্র নেতারাও। এ নিয়ে গত আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা চলছে। এ কারণে গত ৫ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ছিল।
ওই ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ দিয়ে ‘হামলা’ চালানোর অভিযোগও। ওই ঘটনার জের ধরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় ক্যাম্পাস। এক মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ক্যাম্পাস খুলে দিলে ফের আন্দোলন শুরু হয়। এখনো আন্দোলন চলছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুবিপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাবি ও জাবির উপাচার্য স্বপদে বহাল থাকলেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে রাতের আঁধারে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জিনিয়াকে বহিষ্কার করলে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ওই উপাচার্যের বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেঙ্কারি, স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, তুচ্ছ কারণে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন তিনি। এখন দুদক তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে। খন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ছিলো তার প্রমাণও পায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত দল। ওই উপাচার্য সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলাও করিয়েছেন। তাকে হটানোর জন্য দীর্ঘ সময় অস্থির ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। কিন্তু প্রায় তিন মাস হতে চললেও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার। একজন ডিন উপাচার্যের রুটিন কাজ করে যাচ্ছেন।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: বছরের প্রায় শেষ সময়ে এসে অস্থির হয়ে পড়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য এম রোস্তম আলী নিজেই নিয়োগবাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে গত অক্টোবরে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রভাষক পদে নিয়োগপ্রত্যাশী মনিরুল ইসলাম নামের এক প্রার্থীর কাছ থেকে আট লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা। এ সংক্রান্ত একটি অডিও প্রকাশ হয়। উপাচার্যের ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে তদন্তসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে দাবি আদায়ের লক্ষে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়: বছরজুড়েই আলোচনায় ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ। উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে না থেকে অধিকাংশ সময়ই ঢাকা থাকার অভিযোগ বেশ পুরনো। তার নানাবিধ বিতর্কিত কর্মকা-ে ‘অতিষ্ট’ হয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন শিক্ষকরা। এক মাসে ১৮ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও বিভিন্ন স্থানে ট্যুর প্রোগ্রাম দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে টিএ-ডিএ উত্তোলনের অভিযোগও রয়েছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে ট্যুর প্রোগ্রাম দেখানোর নামে এক দিনেই তিনটি চিঠি ইস্যু করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের দাবি, উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকে বেশির ভাগ সময় তিনি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকেন। এতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে সৃষ্টি হচ্ছে নানাবিধ সমস্যা। এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহকে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার চিঠি দেয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি।
ববি: উপাচার্য অধ্যাপক এস এম ইমামুল হকের কারণেও অস্থিরতায় বছর পার করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পূর্ণ সময় দায়িত্ব পালন না করে তাকে বিদায় নিতে হলেও উপাচার্য পদটিকে ‘কলঙ্কিত’ করে গেছেন তিনি। মনে হয়, তিনিই প্রথম উপাচার্য, যিনি শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দিয়েছেন। তবে ওই ‘গালিই’ তাকে উপাচার্যের পদ ছাড়তে বাধ্য করে।
আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটি: সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি অস্থির ছিলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও। নারী কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত শিক্ষককে চাকরিচ্যুত না করায় আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. কাজী শরিফুল আলমের পদত্যাগ দাবিতে অস্থির ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়টি।
রাষ্ট্রপতি মনোনীত উপাচার্য না হয়েও তিনি অবৈধভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্বেচ্ছাচারীভাবে পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-কর্মচারীদের। তার পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে।
বুয়েট: বছরজুড়ে অস্থির থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছিলো সবার শীর্ষে। এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটিও ঘটে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনায় উত্তাল পয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংসহ বিভিন্ন কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র সামনে আসে। বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দেয়। বন্ধ হয়ে যায় ক্লাসসহ প্রশাসনিক কার্যক্রমও। পরে শিক্ষার্তীদের সব দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান পদক্ষেপ ও দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য কয়েকটি দাবি বাস্তবায়নের শর্তে ১৪ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে আন্দোলন শিথিল করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখেই বুয়েট থেকে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হন উপাচার্য সাইফুল ইসলাম। সব দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে ১৬ অক্টোবর বুয়েট মিলনায়তনে গণশপথের মধ্য দিয়ে মাঠের আন্দোলনে ইতি টানেন শিক্ষাথীরা। তবে মামলার অভিযোগপত্র এলে সে অনুযায়ী অভিযুক্তদের বহিষ্কার না করা পর্যন্ত একাডেমিক অসহযোগ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন শক্ষাথীরাা। শেষ পর্যন্ত আবরার হত্যার সাথে জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। দীর্ঘ দুই মাস স্থবির থাকার পর ৪ ডিসেম্বর শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেয় প্রশাসন।
আন্দোলনে অস্থির বিশ্ববিদ্যালয় : গত নভেম্বরের শুরুতে সংঘর্ষের ঘটনায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে হয়েছিল। ১৩ জুন থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চলেছে নিয়মিত উপাচার্য ছাড়াই। ফলে তখন গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত আটকে গিয়েছিল। পরে গত ৩ নভেম্বর সহ-উপাচার্য শিরীণ আখতারকে নিয়মিত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলন হয়েছে।
ইউজিসিতে নানা অভিযোগ : বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সদ্য বিদায় নেয়া উপাচার্যের নানা অনিয়মের তথ্য রয়েছে তাদের কাছে রয়েছে ইউজিসিতে। এসব উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্তও চলমান। তাদের মধ্যে অন্যতম মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আলাউদ্দিন, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য প্রফেসর এস এম ইমামুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মো. আবদুস সাত্তার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর কামাল উদ্দিন আহাম্মদ এবং হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মু. আবুল কাশেম।
শিক্ষাবিদের অভিমত: জবাবদিহিতা না থাকায় উপাচার্যরা এমন কর্মকা- করেছেন বলে মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি গণমাধ্যমে জানান, উপাচার্যরা মূল শিক্ষাকার্যক্রমের বাইরে বিভিন্ন অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছেন। উপাচার্যদের বড় একটি অংশ উপাচার্য হওয়ার যোগ্য নন। অযোগ্যরা উপাচার্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যেকোনো মূল্যে পদ টিকিয়ে রাখতে চেয়েছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থির হলেও তারা পদত্যাগ করেননি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ না থাকা, শিক্ষক সমিতিগুলো দলীয় মত প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত থাকায় উপাচার্যদের জবাবদিহি করার মতো কেউ নেই। এ জন্য তারাও নিজেদের ইচ্ছামতো চলেছেন।
যবনিকা: বলা বাহুল্য যে, শুধু উপাচার্য নন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্থির করে রাখার পেছনে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আশীর্বাদপুষ্ট শিক্ষকদের ভূমিকাও কম ছিলো না। শিক্ষক-উপাচার্যের মেলবন্ধনে দুর্নীতি-অনৈতিক কর্মকা- চলে সমানভাবে। অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি, নিয়োগবাণিজ্য, সন্ত্রাসী কর্মকা-ে উপাচার্যদের সম্পৃক্ততার কারণে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। এ জন্য দিনের পর দিন বন্ধ থেকেছে ক্লাস-পরীক্ষাসহ প্রশাসনিক কার্যক্রমও। ফলে বছরজুড়েই দীর্ঘ সেশনজটে পড়ার শঙ্কা ছিলো।
আমরা মনে করি, জবাবদিহিতা না থাকায় দেশের অন্যান্য সেক্টরের মানুষদের মতো উপাচার্যরাও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। কারণ, তারা জানেন, অন্যায় করলেও কেউ প্রতিবাদ করবে না। এসবের দায় এড়াতে পারে না ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক