অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা তরুণ-তরুণীরা সিনিয়র শিক্ষার্থীদের দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ র্যাগিংয়ের শিকার হন। জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা নতুনদের কান ধরে ওঠ-বস করানো, রড দিয়ে পেটানো, পানিতে চুবানো, উঁচু ভবন থেকে লাফ দেয়ানো, সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা দেয়া, গাছে ওঠানো, ভবনের কার্নিশ দিয়ে হাঁটানো, এমনকি দিগম্বর পর্যন্ত করে নির্যাতন চালান। এছাড়াও গালিগালাজ করা, কুৎসা রটানো, নজরদারি করা ও নিয়মিত খবরদারির মতো নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে থাকে নবীন শিক্ষার্থীদের। র্যাগিংয়ের নামে এ ধরনের নির্যাতনের কারণে অনেক শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে মেয়েদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও শিক্ষা বঞ্চিত হতে হয়েছে।
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে র্যাগিং সংস্কৃতি বন্ধে কমিটি ও স্কোয়াড গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি র্যাগিং আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের দ্রুত প্রতিকার পাইয়ে দেয়ার জন্য অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটি গঠন করতে ৩ মাসের সময় বেঁধে দিয়েছেন আদালত। সংশ্লিষ্ট কমিটি র্যাগিংয়ের অভিযোগ গ্রহণ, তা নিষ্পত্তিসহ এটি বন্ধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। জনস্বার্থে দায়ের করা এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে গত রবিবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে র্যাগিং বিষয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। রুলে শিক্ষার্থীদের জীবন ও সম্মানরক্ষায় র্যাগিং বন্ধে নীতিমালা করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্কোয়াড বিষয়টি দেখভালের পাশাপাশি কমিটির কার্যক্রম তদারকি করবে। হাইকোর্টের এ আদেশ বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। স্বরাষ্ট্র সচিব, শিক্ষা সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে র্যাগিং আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের দ্রুত প্রতিকার পাইয়ে দিতে অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটি গঠনের নির্দেশ হাইকোর্ট এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। তিন মাসের মধ্যে এ কমিটি গঠন করার শর্তসহ রুলও জারি করেছেন আদালত। গত ৯ অক্টোবর র্যাগিং বন্ধ ও র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের বরাবর লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক সহায়তায় জন্য অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটি গঠন ও মনিটরিংয়ের জন্য অ্যান্টি-র্যাগিং স্কোয়াড গঠনে ৭ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা নোটিশে বলা হয়।
আমাদের সান্তান যারা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ভর্তি হয়, তাদের বয়স ১৮ বছরের বেশি হয় না। দেশের প্রচলিত আইনে বলা যায় শিশু। এসব নবীন শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েই কতিপয় সিনিয়রের মাধ্যমে র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতনের শিকার হয়। এতে করে শারীরিক ও মানসিকভাবে ওই শিক্ষার্থী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এসব ঠেকাতেই এ কমিটি গঠনের নির্দেশনা যথোপযুক্ত বলে আমরা মনে করি। সংশ্লিষ্টদের আদালতের এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে শতভাগ আন্তরিকতা আমরা আশা করি।