সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি বলেছেন, শিল্পাচার্যের ২শ’টির বেশি শিল্পকর্ম বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শিত হচ্ছে। শিল্পচার্যকে স্মরণ করার জন্য তার এ সৃষ্টি সোনারগাঁয়ের এ প্রতিষ্ঠান যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য আমরা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। বর্তমান সরকারের এ মেয়াদেই সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশেন একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। যেখানে শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি ও লোকজ উৎসবের মিশ্রণ থাকবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় লোকজ ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা, প্রদর্শন এবং পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের সোনারতরী মঞ্চে মাসব্যাপী লোকজ মোলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সোনারগাঁ ইতোমধ্যে জামদানীতে বিশ^ স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি সোনারগাঁয়ের অর্জন। এটি কেউ এমনি এমনি দান করে দেননি। একসময় সোনারগাঁয়ে মসলিন কাপড় তৈরি করা হতো। কাপাসিয়া থেকে মুসলিনের তুলা ও সুতো স্থানান্তর হয়েছিল। বুড়িগঙ্গা পাড়ে শীতলক্ষ্যা মেঘনা নদি ব্যষ্টিত এ জনপদে যে তাপমাত্রা ছিল তা মসলিন বুনতে সবচেয়ে বেশি উপযোগী ছিল। তাই এখানে মুসলিন পল্লী গড়ে উঠেছিল।
মন্ত্রী বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনকে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য বর্তমান সরকার তার জন্মস্থান ময়মনসিংহে সংগ্রহ শালার জন্য ২৩৪ কোটি টাকার ব্যায়ের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ব্রক্ষপুত্রের সংযোগ হবে মেঘনা নদী দিয়ে। ফলে ময়মনসিংহের সাথে সোনারগাঁয়ের সাংস্কৃতিক সংযোগ তৈরি হবে। আমরা চাইবো এ সংযোগটি যেন সোনারগাঁকে আরও প্রসারিত ও বিকশিত করে। সোনারগাঁ থেকে আলো নিয়ে সোনা ছড়াবে ময়মনসিংহ। মন্ত্রী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে মেলার বিভিন্ন স্টল ও জীবন্ত প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।
ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. আহমেদ উল্লাহর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ-৩) থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জসীমউদ্দিন, পুলিশ সুপার মো. জাহেদুল আলম, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রকিবুর রহমান খাঁন, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, সোনারগাঁ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গণি। ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চল থেকে ৬৪ জন কারুশিল্পী মেলায় অংশগ্রহণ করছে। তাদের জন্য ৩২টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁও ও মাগুরার শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি, চট্টগ্রামের তালপাখা ও নকশী পাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের হাতি ঘোড়া পুতুল ও কাঠের কারু শিল্প, নক্শিকাঁথা, বেত ও বাঁশের কারুশিল্প, নক্শি হাতপাখা, সিলেট ও মুন্সিগঞ্জের শীতল পাটি, কুমিল্লার তামা-কাঁসা পিতলের কারুশিল্প, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর কারু পণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরা কোটা শিল্প, সোনারগাঁয়ের পাটের কারু শিল্প, নাটোরের শোলার মুখোস শিল্প, মুন্সিগঞ্জের পট চিত্র, ঢাকার কাগজের হস্ত শিল্পসহ মোট ১৫৪টি স্টল থাকছে।
এছাড়াও প্রতিদিন লোক কারু শিল্প মেলা ও লোকজউৎসবে বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালী গান, জারি-সারি ও হাছন রাজার গান, লালন সংগীত, মাইজভান্ডারী গান, মুর্শিদী গান, আলকাপ গান, গাঁয়ে হলুদের গান, বান্দরবান, বিরিশিরি, কমলগঞ্জের-মণিপুরী ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরিয়তী-মারফতি গান, ছড়া পাঠের আসর, পুঁথি পাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠি খেলা, দোক খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, লোকজ জীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনী ইত্যাদি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সোনারতরী মঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেষণ করেন বাউল শিল্পী শফি মন্ডল, নওরিনসহ বিভিন্ন শিল্পীরা। গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া মাসব্যাপী এ মেলা চলবে আগামি ১৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।