পৌষ সংক্রান্তির গোসাই নবান্ন উপলক্ষে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দেরআঁক গ্রামে বসেছে ২৪০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও শুভ অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া পৌষ সংক্রান্তির গোসাই নবান্ন উপলক্ষে বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে সংকীর্ত্তন।
বুধবার কাকডাকা ভোর থেকেই শুরু হওয়া ২৪০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলায় দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। মেলায় আগৈলঝাড়াসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন বয়সের হাজার-হাজার শিশু ও নারী-পুরুষ মেলার প্রধান আকর্ষণ ‘মারবেল খেলা’য় অংশগ্রহণ করেন।
রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দেরআঁক গ্রামের মা সোনাই চাঁদ আউলিয়া মন্দির আঙ্গিনায় অনুষ্ঠিত ২৪০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক সংকীর্ত্তন ও গোসাই নবান্ন উৎসব উপলক্ষে অন্যান্য বছরের মতো এবছরও সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী মারবেল খেলার প্রতিযোগিতা।
মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (নিওনেটোলজি) শিশুবিশেষজ্ঞ ডাঃ বিধান চন্দ্র (বিসি) বিশ্বাস বলেন, ওই গ্রামের ছয় বছর বয়সে সোনাই চাঁদ নামে এক মেয়ের বিয়ের বছর না ঘুরতেই তার স্বামী মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুর বাড়িতে একটি নীম গাছের নিচে সদ্য বিধবা কিশোরী দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনা ও পূজার্চনা শুরু করেন। পূজার্চনা থেকে সাধনা। একসময় সাধনার উচ্চ মর্গে সিদ্ধ হলে সোনাই চাঁদের অলৌকিক কর্মকাণ্ড এলাকা ছাপিয়ে বাইরেও প্রচার পায়। সোনাই’র জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ খ্রিঃ ‘সোনাই চাঁদ আউলিয়া মন্দির’ স্থাপন করা হয়। সোনাইর মৃত্যুর পরেও তার স্থাপিত মন্দির আঙ্গিনায় চলে নাম সংকীর্ত্তন ও নবান্ন উৎসব। স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১২ সালে ওই মন্দিরটি পুনঃমির্মাণ করা হয়।
পঞ্জিকা মতে, প্রতিবছরের পৌষ সংক্রান্তির দিন নাম সংকীর্ত্তন ও গোসাই নবান্ন মহাউৎসবকে সামনে রেখে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আর এই উৎসবকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক মারবেল খেলা প্রতিযোগিতা।
মারবেল খেলার মূলরহস্য সম্পর্কে স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, শীতকালে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের পূর্ব পুরুষরা মেলার এইদিনে মারবেল খেলার প্রচলন শুরু করেছিলেন। যা ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে আজও অব্যাহত আছে। উত্তরসূরী হিসেবে এখন তারাও গ্রামীণ ঐতিহ্যর মারবেল খেলা ধরে রেখেছেন। এ দিনটিকে সামনে রেখে রামানন্দেরআঁক গ্রামে কয়েকদিন পর্যন্ত উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মন্দির এলাকার আশপাশের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মারবেল খেলার আসর পেতেছে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশুরা। মেলার নিরাপত্তায় পুলিশ প্রশাসনরে উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়। বাড়ির আঙ্গিনা, অনাবাদী জমি, বাগান ছাপিয়ে রাস্তার উপরেও বসেছে মারবেল খেলার আসর। এর সাথে অনাবাদী জমিতে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্প সামগ্রী, মনোহরী, খেলনা, মিষ্টি, ফল, চটপটি, ফুচকাসহ হরেক রকমের খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানের পসরা।