তীব্র শিক্ষক সঙ্কটে দেশের সরকারি হাইস্কুলগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক সঙ্কটে যেখানে নিয়মিত শিক্ষাদানই কঠিন হয়ে পড়েছে, সেখানে ওই শিক্ষক দিয়েই চলছে দুই শিফটের শিক্ষা। ফলে ডবল শিফট থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মক সঙ্কটের মুখে পড়েছে। কিছুটা বেশি শিক্ষক থাকায় রাজধানী ঢাকার স্কুলগুলো কোনোমতে চললেও সঙ্কটের মুখে আছে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের ডবল শিফটের স্কুলগুলো। ৮/১০ শিক্ষক দিয়ে কোনোমতে চলছে ডবল শিফট। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সদ্য জাতীয়করণের প্রক্রিয়াধীন প্রতিষ্ঠান ছাড়া বর্তমানে দেশে মোট সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৩৪৩টি। তারমধ্যে ৭০টি হাই স্কুলে আগে থেকেই ডবল শিফ্ট চালু ছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিগত ২০০৯ সালে দেশের ৮৩টি সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডবল শিফ্ট চালুর উদ্যোগ নেয়। যা ২০১০ সালে কার্যকর হয়। সেজন্য ২০১১ সালে নতুন করে এক হাজার ৯৬৮ সহকারী শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়। পরবর্তীতে এসব স্কুলে সরাসরি আর শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ কিন্তু পদ স্বল্পতায় ক্যাডার পদে নিয়োগ না পাওয়া প্রার্থীদের মধ্য থেকে নন-ক্যাডার হিসেবে সরকারী হাই স্কুলগুলোতে সীমিত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছে, যা দিয়ে সঙ্কট মিটছে না। পর্যায়ক্রমে শিক্ষক স্বল্পতা তীব্র হচ্ছে। এ কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডবল শিফ্টের স্কুল ডামি শিক্ষক অর্থাৎ বাংলার শিক্ষক দিয়ে ইংরেজী, সমাজের শিক্ষক দিয়ে গণিত ও অন্যান্য বিষয় পাঠদান করা হচ্ছে। ডবল শিফ্ট চালু থাকা ১৫৫টি স্কুলের মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে ২১টি স্কুল। কিন্তু ওসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক স্বল্পতা খুব বেশি নেই। আর ৩৪৩টি প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষকের মোট পদ রয়েছে ১০ হাজার ২৪৪টি। তার মধ্যে শিক্ষক আছেন প্রায় সাড়ে আট হাজার। আর শূন্য রয়েছে প্রায় দেড় হাজার পদ, যার বেশিরভাগই উপজেলা পর্যায়ের স্কুলের।
সূত্র জানায়, সরকারী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকার ২২৬টি পদ শূন্য রয়েছে। আর জেলা শিক্ষা অফিসারের পদ ২৪টি, সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসারের ১২টি, সহকারী প্রধান শিক্ষকের ১১৫টি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ৩৩৫টি পদ শূন্য রয়েছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সরকারী হাইস্কুল ও কলেজে বিভিন্ন স্তরের কর্মচারী, পিয়ন, এমএলএসএস-এর ৫ হাজার ৫৬৫টি পদ শূন্য রয়েছে। তাছাড়া স্কুলগুলোতে শিক্ষক সঙ্কটের পাশাপাশি কর্মচারী সঙ্কটও তীব্র হচ্ছে। বেশিরভাগ স্কুলেই অফিস সহকারী ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নেই। ওই সমস্যা সামাল দিতে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে শ্রমিক দিয়ে স্কুল জরুরী কার্যক্রম চালাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
সূত্র আরো জানায়, শিক্ষক-কর্মচারীর প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টির উদ্যোগ না নিয়ে নতুন নতুন সরকারী হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা ও ডবল শিফট চালুর কারণেই সঙ্কটের মুখে পড়েছে সারাদেশের ডবল শিফ্টের দেড় শতাধিক সরকারী হাই স্কুল। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে গড়ে প্রায় অর্ধেক শ্রেণী কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে। শিক্ষক না থাকায় বাকি অর্ধেক শ্রেণী কার্যক্রম ঠিকমতো চলছে না। তাছাড়া কর্মচারী স্বল্পতা, অবকাঠামো সীমাবদ্ধতা এবং শিক্ষকদের বিভিন্ন সরকারী প্রয়োজনে দায়িত্ব পালনে বাধ্য করার কারণেও একাডেমিক কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ছে। সেজন্য শিক্ষার্থীরা শ্রেণী শিক্ষকের বাসায় কোচিংয়ে ভর্তি, প্রাইভেট টিউটর রাখা ও বাণিজ্য নির্ভও কোচিং সেন্টারের দ্বারস্থ হচ্ছে। দেশের ১৫৫টি ডবল শিফট্রে হাই স্কুলেই প্রায় একই ধরনের সঙ্কট বিরাজ করছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে মাউশি অধিদফতরের ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস জানান, দুই শিফটের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোটামুটি শিক্ষক থাকলেও প্রাপ্যতা হচ্ছে ৫০টি পদ। তবে মহানগরের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোন ডবল শিফটের স্কুলেই ৫০ শিক্ষক নেই। সব প্রতিষ্ঠানের কম-বেশি শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে। ওই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির কারণে এখন পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হচ্ছে। এখন একটি নিয়োগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। তাতে অন্তত দেড় হাজার শিক্ষক নিয়োগ হবে। তা হলে কিছুটা হলেও সমস্যার সমাধান হবে।