বর্তমান সময়ে বিশ্ববাসীর সামনে অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হলো প্লাস্টিক পণ্য! সারা বিশে^ যখন ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ পণ্য ব্যবহারকে একেবারে কমিয়ে আনা ও নিরুৎসাহিত করা জন্য পরিবেশবাদীরা সোচ্চার। ঠিক সে সময়ে বাংলাদেশে পরিচালিত এক গবেষণায় এসেছে, দেশের তরুণ এবং যুবগোষ্ঠী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিক দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ি। গবেষণায় বলা হয়েছে, এই তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠী একবার ব্যবহার করা হয় এমন সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পণ্য বেশি ব্যবহার করে। পরিবেশ দূষণে প্লাস্টিক বর্তমানে এক আতঙ্কের নাম। হু হু করে বাড়ছে পরিবেশ বিধ্বংসী এই পণ্যের ব্যবহার। আমাদের দেশের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ যুবসমাজ। যুবকদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, মানবিক গুণাবলিতে হতে হবে অনুকরণীয়, অনুসরণীয়, তথা রোল মডেল। মানবিক ও নৈতিকতাধারী তরুণসমাজই দেশ গঠন ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সম্প্রতি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার কথা। বাংলাদেশের হাইকোর্টও সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে, আগামী এক বছরের মধ্যে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। প্লাস্টিক পচনশীল নয় বলে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য যুগের পর যুগ একইভাবে টিকে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় এসেছে, মুদি দোকান থেকে পণ্যের সাথে দেয়া প্লাস্টিক ব্যাগ প্রকৃতিতে মিশে যেতে ২০ বছর সময় লাগে। চা, কফি, জুস কিংবা কোমলপানীয়ের প্লাস্টিকের কাপ ৫০ বছর; ডায়াপার এবং প্লাস্টিক বোতল ৪৫০ বছর পর্যন্ত পচে না।
বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিয়ে গবেষণাটি করেছে বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের মধ্যে ওই গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব খাবারের সঙ্গে প্লাস্টিকের প্যাকেট রয়েছে, সেগুলোই সবচেয়ে বেশি ভোগ করছে ১৫-৩৫ বছরের তরুণ এবং যুবকেরা। এছাড়া যত সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার হয়, তার ৩৫ শতাংশ ব্যবহার করে ১৫-২৫ বছর বয়সি জনগোষ্ঠী। অর্থাৎ মোট সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ৬৮ শতাংশ ব্যবহার করছে এই জনগোষ্ঠী।
রি-সাইকেল করা যায় না বছরে এমন ৮৭ হাজার টন প্লাস্টিকের বর্জ্য হয়ে থাকে বাংলাদেশে। এগুলোর জায়গা হচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিলে। জরিপে এসেছে, পরিবেশের ওপর প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে ব্যবহারকারীদের অনেকের ধারণাই নেই। তবে ৬০ শতাংশ ব্যবহারকারী বলেছেন, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের বিকল্প দেওয়া হলে তারা সেটি গ্রহণ করতে রাজি আছেন।
আমাদের যুবসমাজকে নানা ক্ষেত্রে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিলে তারা সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক থেকে সরে আসার লক্ষ্যে এখনই কাজ শুরু করতে হবে। যেসব পণ্যের জন্য সময় প্রয়োজন সেগুলো ধাপে-ধাপে বন্ধ করার উদ্যোগের সাথে, যেসব পণ্যের জন্য প্লাস্টিকের ব্যবহার একেবারেই আবশ্যক নয়, সেগুলো এখনই বন্ধ করতে নীতিনির্ধারণী জায়গা থেকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে বলে আমরা আশা করি।