পঞ্চম শ্রেণী শেষ করেও ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী বাংলা ও গণিতে ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ছাড়াই প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠদান করাচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষক। তাছাড়া বেশকিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শ্রেণীকক্ষের তীব্র সঙ্কট রয়েছে। সরকার প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প-৪-এর আওতায় ২০২৩ সালের মধ্যে বেশকিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু ওই লক্ষ্য থেকে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা অনেক দূরেই রয়ে গেছে। মূলত পর্যবেক্ষণ ও পরিকল্পিত বিনিয়োগের অভাবেই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রাথমিক শিক্ষার মান যাচাইয়ে সরকার প্রতি দুই বছর অন্তর ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট (এনএসএ) জরিপ চালায়। ওই জরিপের আওতায় শিক্ষার্থীদের বাংলা ও গণিত বিষয়ে ন্যূনতম দক্ষতা যাচাই করা হয়। ২০২৩ সালের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বাংলা বিষয়ে ন্যূনতম দক্ষতা (ব্যান্ড ৫) অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৬০ শতাংশ। কিন্তু ২০১৫ সালে ওই হার ছিল ২৩ শতাংশ। ২০১৭ সালে এসে তা কমে ১২ শতাংশে দাঁড়ায়। একইভাবে ২০২৩ সালের মধ্যে গণিতে ন্যূনতম দক্ষতা (ব্যান্ড ৫) অর্জনকারী শিক্ষার্থীর হারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫০ শতাংশ। ২০১৫ সালে ওই হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। তবে ২০১৭ সালে ওই হার বেড়ে ১৭ শতাংশে দাঁড়ায়। অথচ পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম দক্ষতা অর্জনের হারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল বাংলায় ৬০ শতাংশ ও গণিতে ৫০ শতাংশ। যদিও গত কয়েক বছরের অগ্রগতি বিবেচনায় নিলে অর্জনের হার নিম্নগামী।
সূত্র জানায়, আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে ৯৪ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। যদিও ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওই হার ৭৩ দশমিক ৬ শতাংশে রয়েছে। তাছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতভাগ প্রধান শিক্ষকদের লিডারশিপ প্রশিক্ষণ থাকার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও এখনো ১৫ শতাংশ শিক্ষক ওই প্রশিক্ষণের বাইরে রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অ্যানুয়াল সেক্টর পারফরম্যান্স রিপোর্ট ২০১৮ অনুযায়ী দেশের ৭৯টি বিদ্যালয়েই মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। দুজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে ৭২১ বিদ্যালয়ে। আর তিনজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে ৭ হাজার ৭৬৪ বিদ্যালয়ে। অর্থাৎ সরকারি হিসাবেই ৮ হাজার ৫৬৪টি বিদ্যালয়ে তীব্র শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে। অথচ একটি বিদ্যালয়ে কমপক্ষে চারজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকট শিক্ষক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ের বিপুলসংখ্যক বিদ্যালয়।
এদিকে এ প্রসঙ্গে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চেšধুরী জানান, শুধু লক্ষ্য নির্ধারণ করলে হবে না, তা অর্জনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষত প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গৃহীত লক্ষ্যগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রারও পরিপূরক। দেশের জন্যসংখ্যাকে দক্ষ করে তোলার ভিত্তিমূল প্রাথমিক শিক্ষা। শিক্ষার এ স্তর পরবর্তী সব স্তরের ভিত্তি সৃষ্টি করে। তাই প্রাথমিকে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভালো শিক্ষক না থাকায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে না। কিন্তু দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শ্রেণীভিত্তিক পাঠদানের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণেও জোর দিতে হবে। তাছাড়া অবকাঠামো উন্নয়নও জরুরি। কেননা এখনো খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করার মতো খবর শোনা যায়। এজন্য সরকারকে বিনিয়োগও বাড়াতে হবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল হোসেন জানান, গত এক দশকে প্রাথমিক শিক্ষায় বেশকিছু অর্জন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হার যৌক্তিক পর্যায়ে চলে আসছে। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার প্রায় শতভাগ। মিড ডে মিল কার্যক্রম সব মহলেই প্রশংসিত হয়েছে। এখন শিক্ষার মানে জোর দেয়া হচ্ছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ, কারিকুলাম, পাঠ্যক্রম, পরীক্ষা পদ্ধতি- সব ধরনের গুণগত বিষয়গুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার মানে বড় পরিবর্তন আসবে।