নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও নৃশংসতা বন্ধ করতে বলেছেন। তার অর্থ, মায়ানমার গণহত্যার মতো অপরাধ করেছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে আইসিজে যে রায় দিয়েছে তা মানবতার বিজয়। এ রকম রায়ে বিশ্বে জাতিগত নিপীড়ন ও গণহত্যার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হবে বলে আমরা আশা করি। বিশ্বের সমস্ত নির্যাতিত ও নিপিড়ীত মানুষ ও মানবাধিকারকর্মীদের জন্য এই রায় একটি মাইলফলক। এ রায় আইসিজে, গাম্বিয়া, ওআইসি, রোহিঙ্গা এবং অবশ্যই বাংলাদেশের জন্যও একটি মহা বিজয় বলে আমরা মনে করি। আদালত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সব ধরনের সুরক্ষা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা মিয়ানমারকে পূরণ করতে বলেছে। এই সব ধরনের সুরক্ষার মধ্যে পড়ে তাদের আরাকানে বসবাসের অধিকার। এখন বাংলাদেশকে আরো বেশি জোরালোভাবে মাঠে নামতে হবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে।
আইসিজের বিচারকদের সর্বসম্মত এই রায়ে চারটি অন্তর্র্বর্তী পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে মিয়ানমারকে। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হলো, তা জানাতে মিয়ানমারকে আগামী চার মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আর প্রতি ছয় মাস পর পর মিয়ানমারের নেয়া পদক্ষেপগুলো জানাতে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এছাড়া আদালত ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করার সাথে মিয়ানমারের দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ রায় রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ অবসানে একটি বড় পদক্ষেপ। এখন রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে।
আইসিজে আদালত বলেছে, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতের আদেশ মিয়ানমারের জন্য মানা বাধ্যতামূলক। এছাড়া আদেশটি মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে। ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন অনুসারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়ার অনুরোধসাপেক্ষে বেশ কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ মঞ্জুর করেন আদালত। গণহত্যা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্র্বর্তীকালীন জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার যে আবেদন গাম্বিয়া করেছে, তা যৌক্তিক বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্র্বর্তীকালীন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কি না সেই বিচারের এখতিয়ার জাতিসংঘের এই আদালতের রয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশনের ভিত্তিতে এই মামলা করার মতো প্রাথমিক অধিকারও গাম্বিয়ার আছে। এ বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার নেই বলে মিয়ানমার যে দাবি তুলেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন এ বিচারপতি।
আদালতের আদেশগুলো হলো, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীকে সব ধরনের গণহত্যার অপরাধ ও গণহত্যার ষড়যন্ত্র থেকে বিরত থাকার নির্দেশ। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা, নিপীড়ন বন্ধ এবং বাস্তুচ্যুতির মতো পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে মিয়ানমারের বিরত থাকা। তা ছাড়া মিয়ানমারকে গণহত্যা কনভেনশন মেনে চলতে বলা হয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকটের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) রায় মিয়ানমারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের সাথে, তারা যেন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ না পায়, সে জন্য বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা আশা করি রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমিতে ফেরাতে এই রায়কে সাক্ষী করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পেতে বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে যাবে।