রপ্তানি খাতে সরকার বিপুল অংকের প্রণোদনা দিলেও আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। প্রণোদনার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়ছে না রপ্তানি আয়। বরং প্রতি মাসেই তা কমছে। দেশের ২৯টি রপ্তানি খাতে তিন মাসে (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। শুধু তৈরি পোশাক খাতেই দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রণোদনা দেয়া হলেও রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়েনি। তারপরও নগদ সহায়তার তৃতীয় কিস্তির এক হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা ছাড় চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরে নগদ সহায়তা বাবদ দ্বিতীয় কিস্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় ২ হাজার ৫৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ছাড় করেছে। ওই অর্থ ছাড় করা হয় গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর নাগাদ। ওই দুই মাসে ছাড়কৃত নগদ সহায়তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পেয়েছে রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাত। ওই খাতে সর্বমোট এক হাজার ৫৩৫ কোটি ৫৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে বস্ত্র খাতে ৯৭৯ কোটি ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়। নতুন বাজার সৃষ্টির প্রণোদনা বাবদ দেয়া হয়েছে ৫০১ কোটি ৯১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। আর বস্ত্র খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অতিরিক্ত সুবিধা বাবদ দেয়া হয়েছে ৫৪ কোটি ৩০ লাখ তিন হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, নগদ প্রণোদনার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অ্যাগ্রোপ্রসেসিং বা কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাত। ওই খাতে নগদ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ২৪৭ কোটি ৬৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা। তৃতীয় স্থানে রয়েছে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ। ওই খাতে দেয়া নগদ প্রণোদনার পরিমাণ ১৮৩ কোটি সাত লাখ ৫৪ হাজার টাকা। চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাট খাত। ওই খাতে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। পঞ্চম স্থানে রয়েছে ক্রাস্ট লেদার খাত। ওই খাতে রপ্তানি বাবদ নগদ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ৫৩ কোটি ২৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে হোগলা, খসড়, আখের ছোবড়া ইত্যাদি দিয়ে তৈরি পণ্য। ওই খাতে নগদ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ৩৩ কোটি ৫১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে নগদ সহায়তা বাবদ আরো এক হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা চেয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছে এক হাজার ২৭২ কোটি ১২ লাখ (১২.৭২ বিলিয়ন) ডলার। তার মধ্যে এক হাজার ৫৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের জোগান দিয়েছে তৈরি পোশাক খাত বা ৮৫ শতাংশ। তবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এ খাতে আয় কমেছে ৬.৬৭ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২.০৭ শতাংশ আয় কম হয়েছে। নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় এসেছে ৫৫৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৫.৭৩ শতাংশ কম। ওভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫০৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি কমেছে ৭.৬৭ শতাংশ। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের দাম কমেছে ৭.০৪ শতাংশ। ইউরোপের বাজারে কমেছে ৩.৬৪ শতাংশ। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি কমেছে ৭.৫৪ শতাংশ। মূলত তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমায় তা প্রভাব ফেলেছে পুরো রপ্তানি খাতে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ৮.২ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমেছে ৭.৮৪ শতাংশ। তামাক রপ্তানি কমেছে ৮ শতাংশ। তবে সব পণ্যের রপ্তানি কমেনি। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি ৮.৮৮ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নগদ সহায়তার অপরিশোধিত দাবির পরিমাণ ৫৬৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। তার মধ্যে পাট খাতে অপরিশোধিত দাবির পরিমাণ ৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বিগত মাসগুলোতে ব্যাংকগুলোর আবেদনকৃত অর্থের ধারা পর্যালোচনা করে মনে হচ্ছে চলতি অর্থবছরের তৃতীয় কিস্তি (চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত) বাবদ এক হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। তার মধ্যে পাট খাতে দিতে হবে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা।