রাজশাহী পুঠিয়ায় ২০টি কলেজের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারি না থাকায়,শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের ঠিকমতো ক্লাস না নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে উপজেলা জুড়ে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েদের শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, পুঠিয়ায় মানুষের তুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠনের সংখ্যা অনেক বেশি। উপজেলায় মোট ২০টি কলেজ রয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে এলাকার মানুষের ভেতর মতোভেদ আছে। উপজেলার কিছু ধূর্ত শ্রেণির মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে, প্রথমে কর্মস্থানের নামে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরবর্তী সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতিক নেতা এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা মিলে টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানের সনদপত্র দিয়ে চাকরি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবার রাজনীতিক নেতাকর্মী শিক্ষক হিসাবে আছেন। এলাকার একাধিক ব্যক্তিদের অভিযোগ, পুঠিয়া সদরের সবকয়টি কলেজে শিক্ষকরা প্রতিদিন কলেজের আসার পর দুই/একটি ক্লাস নিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। পুঠিয়া লস্করপুর ডিগ্রি কলেজ এবং পুঠিয়া মহিলা কলেজে এমনো দেখা গেছে,ব্যক্তিগত গাড়ি দাঁড় করায়ে, তরীঘড়ি করে ক্লাস নিয়ে কিংবা ছাত্রছাত্রীদের ছুটি দিয়ে অথবা হাজিরা খাতাতে স্বাক্ষর করে চলে যেতে দেখা গেছে। শিক্ষকরা দীর্ঘদিন থেকে কলেজে না আসার জন্য ছাত্রছাত্রীরা ক্লাশে আসছে না। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জানা গেছে, কয়েকটি কলেজে শিক্ষকরা দীর্ঘদিন থেকে প্রতিষ্ঠানে না এসে বেতন-ভাতা উঠায়ে নিচ্ছে। ২০টি প্রতিষ্ঠানের ভেতর আবার কোনো শিক্ষকের, যে বিষয়ের তিনি শিক্ষক সে বিষয়ের কোনো ছাত্রছাত্রী নেই। শুধু এই কারণে, সে কলেজে না এসে অন্য পেশার সঙ্গে জড়িয়ে পরেছেন। শুধু মাঝেমধ্যে হাজিরা খাতাতে স্বাক্ষর করতে আসেন। বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে বেতন-ভাতার কিছু অংশভাগ দিতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একধিক শিক্ষক বলেন, শুধু রাজনীতিক ব্যক্তিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান হওয়া এবং অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর করুণপরিনীতির শিকার হয়ে পরেছে। কলেজে এমনও শিক্ষক আছে, তারা ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নেয়ার মতো যোগ্যতা পর্যন্ত নেই। আমরা যখন ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নিচ্ছি তখন তারা আমাদের সামনে দিয়ে দিয়ে হাজিরা খাতাতে সই করে কলেজ থেকে চলে যাচ্ছে। সব প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার ফলে উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ধবংসের দারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছে। এক অভিভাবক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পুঠিয়ায় এত শিক্ষা আছে। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানের সঠিকভাবে লিখাপড়া হয় না। যার জন্য আমরা যাঁরা সচেতন অভিভাবক আছি, তারা ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শহরের জলেজগুলিতে ভর্তি করানো চেষ্টা করি।
পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওলিউজ্জামান বলেন, আমি যে কলেজগুলির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আছি। সেইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে বলেছি, কোনো শিক্ষক যদি কজেলে না আসে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার নিদের্শ দেওয়া আছে। কিছুদিন আগে পুঠিয়া মহিলা কলেজে গিয়ে শিক্ষক অউপস্থিত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পরিচালক, মাধ্যমি ও উচ্চ অঞ্চলিক কর্মকর্তা রাজশাহী ড. কালাম হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দূর করার জন্য আমাদের কঠোরভাবে নিদের্শ দিয়েছেন। বর্তমানে আমার এখানে লোকবল সংকট চলছে। আমি পর্যায়েক্রমে আটটি জেলায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামীতে অনিয়মে বিরুদ্ধে অভিযান চালাব।