চট্টগ্রামের খুলশীতে নিজকে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে একের পর এক ভূমি দখল করছেন মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী। তিনি বাঙালি হয়েও নিজকে অবাঙ্গালীদের কাতারে নিয়ে নানাভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। রেলের জায়গা দখল আর বিক্রিতেই শুধু সীমাবদ্ধ নয় তিনি। ডিপ টিউবওয়েল বসিয়ে সেখান থেকেও পানি বিক্রির টাকা আদায় করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, খুলশী থানা এবং আদালতে একাধিক মামলাও রয়েছে। তবুও প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষজন তাঁর কর্মকা-ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। খুলশীতে অবাঙ্গালীদের ক্যাম্পের সবাই তাঁর উপযুক্ত শাস্তি চায়।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, গত ১২/০৪/২০০৬ইং চট্টগ্রামের এক ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা খুলশী থানার ওসি বরাবর একটি চিঠি প্রেরণ করেন। ওই চিঠিতে উল্লেখ করেন, খুলশীর সেগুন বাগান ২নং লেইন, কোয়ার্টার নম্বর ৬৯/টি সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াজেদ (৫৫) অবৈধ দখলদার থেকে উদ্ধার করার জন্য। এরপর জৈনিক আবদুর রহমানকে এটি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। এরআগে এই ওয়াজেদ আলী সমাজ কল্যাণ কমিটির মাধ্যমে গত ২৯/০৫/০৪ইং বাসাটি দখল করে নেয়। কিন্তু ওয়াজেদ আলী এখনও ওই বাসায় বহাল তবিয়তেই বসবাস করছেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনও নীরব ভুমিকা পালন করছেন। ওদিকে বিগত ২০১৬ ইং খুলশীর ঝাউতলা কলোনীতে বাসা নং এম/৫০ মো. রফিক মিয়া ভারতের আজমীর শরীফ জিয়ারত করতে যাওয়ার সময় বাড়িটি দেখাশুনা করার জন্য ভূমিদস্যু ওয়াজেদ আলীকে দিয়ে যায়। ওই বাড়িটি এখন তাঁর স্ত্রী ইশরাতের নামে তালিকা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেন ওয়াজেদ আলী।
অথচ সেই রফিক আজও দেশে ফিরে আসেননি। এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মনে এখন প্রশ্ন মো. রফিক কোথায় গেল? নাকি ওঁর নিরুদ্দেশ হওয়ার পিছনে ওয়াজেদ আলীর কোনো গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। এছাড়াও ওই রেলের জায়গায় বাড়ির আশে পাশের খালি জায়গা বিভিন্ন লোকের নিকট বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা অবৈধভাবে আয় করছেন ওয়াজেদ আলী। ওই বাসাটিতে বর্তমানে তাঁর ছেলে বসবাস করছেন। এই ব্যাপারে গত ১৫/১২/২০১৯ইং একজন ক্যাম্পবাসী প্রধান ভু-সম্পত্তি কর্মকর্তার নিকট লিখিতভাবে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। উপর্যুক্ত বাসাটি সে তাঁর স্ত্রীর নামে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মাননীয় জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদনও করেছেন। গত ২৮/০৪/২০০১ইং চট্টগ্রামের খুলশীর সেগুন বাগানের আবদুল খালেক মাননীয় জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিতভাবে একটি আবেদন করেন। এতে উল্লেখ করা হয় যে, ওয়াজেদ আলী অবাঙ্গালীদের তালিকাভুক্ত নয়। তিনি যে আইসি আরসি কার্ড (যার নং বি- ৭৪৭৮) তাঁর নানার কার্ড বলে ব্যবহার করেন। তা আসলেই মো. আরিফের কার্ড এবং তিনি বাংলাদেশ রেলের একজন প্রাক্তন ড্রাইভার। ফরিদপুরের রাজবাড়ীতে তিনি স্থায়িভাবে বসবাস করেন। গত ২১/০২/২০০৬ইং মো. মোস্তাফিজুর রহমান রাউজান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়াজেদ আলীকে এই মর্মে চিঠি দেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে ত্রাণ সামগ্রী আত্মসাৎ ও সরকারি বিদ্যুৎ অবৈধ সংযোগের জমজমাট ব্যবসার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে।
এজন্য চট্টগ্রামের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা অফিসে তিনি যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই দুর্নীতির বিষয়ে গত ৩০/১১/২০০৫ইং ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকায়ও সংবাদ পরিবেশিত হয়। গত ২০১৬ ইং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রতিটি অবাঙ্গালী ক্যাম্পে এডহক ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটি করা হয়। সেখানে সে সুকৌশলে এবং ত্রাণের কিছু কর্মচারির সহযোগিতায় ওই এডহক কমিটির সভাপতি হয়ে যায় ওয়াজেদ আলী। আর সেই সুবাদেই তাঁর দুর্নীতির মাত্রাও এক লাফে চরমে উঠে যায়। শুধু তাই নয়; রেলের খালি জায়গাগুলো সে অবাধে বিক্রি শুরু করেন। আবার রেল কর্তৃপক্ষ যখন উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করেন তখন সে মোটা অংকের বিনিময়ে সে অবাঙ্গালী পরিবারের কাছ থেকে দরখাস্ত গ্রহণ করেন। আর ক্যাম্প ব্যবস্থাপনার চেয়ারম্যানের সিল ব্যবহার করে জেলা প্রশাসক ও ত্রাণ এবং পুনর্বাসন কর্মকর্তার নিকট তালিকা প্রদান করেন। এমনকি ক্যাম্পবাসী অবাঙ্গালীও নয় এবং বাড়িটি ক্যাম্পের এলাকায়ও নয়। এরপরেও ওয়াজেদ আলী ক্যাম্প ব্যবস্থাপনার কমিটির চেয়ারম্যানের সিল ব্যবহার করে মোটা অংকের বিনিময়ে অবাঙ্গালীদের তালিকায় নাম অন্তভুক্তির জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর সুপারিশ করেছেন। সূত্র জানায়, ওয়াজেদ আলী নিজকে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে রেলের অনেক জায়গা দখল করছেন। আবার সেগুলো গরীবদের কাছে বিক্রি করছেন। আবার রেল কর্তৃপক্ষ যখন অবৈধ উচ্ছেদ করতে যায় তখন সে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ভুয়া কাগজপত্র জেলা প্রশাসকের নিকট জমা দেয়।
এরপর তাদেরকে অবাঙ্গালী সাজিয়ে রেলের উচ্ছেদ থেকে রক্ষা করছেন। এই ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা অফিস থেকে পি আইও সরজমিনে তদন্ত আসলে এলাকার লোকজন একত্র হয়ে যায়। তারা এ সময় ওয়াজেদ আলীর নানা দুর্নীতির আমলনামা তুলে ধরেন তদন্ত কর্মকর্তার নিকট। এতে প্রথম বাড়িটিই তদন্ত কর্মকর্তা দেখতে পান যে, সে প্রকৃত অবাঙ্গালী নয়। পরে তিনি আর তদন্ত না করেই অফিসে ফিরে যান। অন্যদিকে রেলের বিদ্যুৎ এর অবৈধ ব্যবসা, ডিপ টিউবওয়েলের ব্যবসা, এলাকায় ৫/৬টি দোকান এবং ৫টি সিএনজি নামে-বেনামে রয়েছে ওয়াজেদের। আর এভাবে দুর্নীতির মাধ্যমেই ওয়াজেদ আলী সমাজের মানুষের কাছে কোটিপটি হিসেবে পরিচিত। তাঁর আয়ের প্রধান উৎস রেলের জায়গা দখল, বিক্রি এবং ভাড়া দেওয়া। তিনি নিজকে অবাঙ্গালীদের সংগঠন ইউএসপি ওয়াইআরএম (উর্দু স্পিকিং ইউথ রিহ্যাবলিটেশন কমিটির) চট্টগ্রামের সভাপতি দাবি করেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে। উপর্যুক্ত দুর্নীতির বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ওয়াজেদের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি বারবার বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর এক সহকর্মী সাংবাদিকদের বলেন, ওয়াজেদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ষড়যন্ত্র। তিনি কারও জায়গা দখল কিংবা কাউকে হয়রানি করছেন বলে আমরা জানিনা।