কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ও কুলিয়ারচরে প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান বিষয়ক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার দুপুরে ভৈরব প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর এই সেমিনারের আয়োজন করে। অতিরিক্ত সচিব ও প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হান্নান মিয়া সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, যে জাতি বা জনগোষ্ঠীর ইতিহাস-ঐতিহ্য যতোবেশী সমৃদ্ধ, ওই জাতি বা জনগোষ্ঠী ততো উন্নত। তবে ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রতœতত্ত্ব, প্রাচীন নিদর্শন ইত্যাদি সংরক্ষণ করতে হয়। যাতে করে পরবর্তী প্রজন্ম সেগুলি দেখে তাদের পূর্বপুরুষের গৌরবগাঁথা অনুভব করতে পারে।
তিনি ভৈরবের ইতিহাস বলতে গিয়ে বলেন, প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদের অবস্থান বর্তমানের চেয়ে আর পূর্বদিকে ছিলো। মেঘনা ছিলো আরও পূর্বদিকে। দ্বাদশ শতাব্দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সরাইল ও নেত্রকোণা অঞ্চল নিয়ে যে মোমেনশাহী পরগনা গঠিত হয়েছিলো, ভৈরব যদি এর অংশ হয় তবে তো হাজার বছরেরও সুপ্রাচীন। তবে এইসব বিষয় নিয়ে অধিক গবেষণা করতে হবে। অনুসন্ধান করতে হবে। অধিদপ্তর সব রকম সহযোগিতা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভৈরববাসীর প্রয়োজন এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া। অধিদপ্তরকে সহযোগিতা করা।ভৈরব নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। সে স্বপ্নকে বাস্তবায়নে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। ভৈরবের সহকারী কমিশনার (ভূমি) যে কার্যালয়টি সেটি ছিলো একটি রাজ কাচারী। স্থানীয় জনতার দাবীর প্রেক্ষিতে এই কাচারীটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত করে একটি প্রতœতাত্ত্বিক জাদুঘরে রুপান্তরিত করার উদ্যোগ নেবো।
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক রাখী রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন ভৈরব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. সায়দুল্লাহ মিয়া, ভৈরব পৌরসভার মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ প্রমুখ।
প্রতœতত্ত্ব অধিপ্তরের সদ্য এলপিআরে যাওয়া সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ছাদেকুজ্জামান। এ সময় ভৈরবের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক আহমেদ আলী এবং অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম সেন্টু, ভৈরব প্রেস ক্লাব সভাপতি মো. জাকির হোসেন কাজল। সভার শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়োজিত সাইট পরিচারক মোঃ আমিনুল হক।
সেমিনারে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি অনুসন্ধানী দলের জরিপ ও অনুসন্ধানে ভৈরবের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত ১৪টি ঐহিতাসিক প্রাচীন স্থাপনার পরিচিতি তুলে ধরা হয়। সেগুলি হলো-ভৈরব বাজার এলাকার নবীন সাহার বাড়ি, রাজকাচারী, রাজকাচারীর আবাসিক ভবন, হামিদ মঞ্জিল, কালী মাতৃমন্দির, কাদির বক্স উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরনো বিল্ডিং। চন্ডিবের এলাকার পঁচু বেপারির বাড়ির মসজিদ, জগন্নাথপুরের কাদির বখশ সরকার বাড়ি, গজারিয়ার জগবন্ধুধর জমিদার বাড়ি, শিমুলকান্দির রেবতী মোহন বমর্ণের পুকুর, নীলকুঠি। কালিকা প্রসাদের সিদ্দিরচর বাজার জামে মসজিদ, কালিকা প্রসাদ মিয়া বাড়ি ও সাদেকপুর কর্তা বাড়ি বড় জামে মসজিদের মিনার।
বিকেলে কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদ হল রুমে কুলিয়ারচরের প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান বিষয়ে সেমিনারের আযোজন করে প্রতœত্ত্ব অধিদপ্তর। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব ও প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হান্নান মিয়া। প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক রাখী রায়ের সভাপতিত্বে ও প্রতœতত্ত্ব অধিপ্তরের সদ্য এলপিআরে যাওয়া সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ছাদেকুজ্জামান। আলোচনায় অংশ নেন কুলিয়ারচর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা রহমান, বীরমুক্তিযোদ্ধা মনজুর আহমেদ, হাবিবুর রহমান বাচ্চু, মোঃ সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
সেমিনারে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি অনুসন্ধানী দলের জরিপ ও অনুসন্ধানেনে কুয়িারচরের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত ১৯টি ঐহিতাসিক প্রাচীন স্থাপনার পরিচিতি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো, ভাটি দোয়ারিয়া বদ্ধীনাথ সাহার মঠ ও তার মায়ের মঠ, মদন মোহন জিও বিগ্রহ আখড়া, নাজির দীঘি, মহারাজ ত্রৈলোক্য নাথ চক্রবর্তী বাড়ি, রায়েরচর বিষ্ণু নাথ পালের বাড়ি ও তার স্ত্রীর মঠ, রায়েরচর সাছনী পালের বাড়ি, রায়েরচর সর্বেশ্বরী পালের মঠ, রামদি চন্দ্র কিশোর কর রায় বাহাদুরের মঠ, আগরপুর হরিশ চন্দ্র মোদকের মঠ ও তার স্ত্রীর মঠ, আগরপুর মহেশচন্দ্র মোদকের মঠ, আগরপুর গোকূল চন্দ্র মোদকের বাড়ি ও মঠ,ছয়সূতী প্রতাপ নাথের বাড়ি,পুর্ব গোবরিয়া বড়জামে মসজিদ, মধ্য সালুয়া নিমচরণ সুত্র ধরের মঠ, বাজরা ঠাকুর বাড়ির শিব মন্দির।
সেমিনারে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তা,প্রতœতাত্ত্বিক প্রকৌশলী, প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, বীরমুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি,সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ, লেখক, শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন।