জনগণের ভোটে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের আর্থিক বা প্রশাসনিক কোনা ক্ষমতা নেই। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের উপজেলা পর্যায়ের ১৭ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মকা- দেখভাল করার কথা। উপজেলা চেয়ারম্যান ওসব বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের কমিটি সভাপতি হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ের কমবেশি ১২০টি কমিটির সভাপতিই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আর কমিটির সদস্য সচিব ওসব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। ফলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েও উপজেলা চেয়ারম্যানদের কোনো আর্থিক বা প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদ্যমান আইনের ২৫ ধারা অনুযায়ী নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা হবেন এবং পরিষদ উপদেষ্টার পরামর্শ গ্রহণ করবেন। আইনের ৪২ ধারার একটি অংশে বলা হয়েছে, পরিষদ তার প্রতিটি উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের সুপারিশ গ্রহণ করে এর অনুলিপি সরকারের কাছে পাঠাবে। কিন্তু পরিষদ পরিচালনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারও (ইউএনও) প্রত্যক্ষ প্রভাব থাকে। ফলে উপজেলা পরিষদের কার্যত কোনো ক্ষমতা থাকে না। সংসদ সদস্যের কথার বাইরে এবং ইউএনও’র ইচ্ছার বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানরা কিছুই করতে পারেন না। মূলত উপজেলা চেয়ারম্যানরা স্থানীয় সংসদ সদস্য, ইউএনও’র নিয়ন্ত্রণের বাইরে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। এমনকি স্থানীয় সরকারের এ স্তরটি পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছেও অনেকাংশেই জিম্মি।
সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ স্থানীয় সংসদ সদস্যদের পরামর্শ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আবার ইউএনও পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও মূলত তারাই আর্থিক ও প্রশাসনিক অধিকাংশ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। ফলে উপজেলা চেয়ারম্যানদের চেয়ার থাকলেও হাতে ক্ষমতা নেই। এমতাবস্থায় উপজেলা পরিষদকে কার্যকর ও গতিশীল করতে সাতটি সমস্যা চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন।
সূত্র আরো জানায়, উপজেলা পরিষদের গঠন ত্রুটিপূর্ণ এবং নিয়ন্ত্রিত বলেই তা শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াতে পারছে না। কারণ স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং ইউএনওরাই পুরো পরিষদ নিয়ন্ত্রণ করেন। উপজেলা চয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান কার্যত ক্ষমতাহীন। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা নিজেদের স্বার্থে ইচ্ছা করলে উপজেলা পরিষদকে অকার্যকর করে দিতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা এমনও বলেছে- উন্নয়ন যা করার ইউনিয়ন পরিষদ করছে, উপজেলা পরিষদে কোনো কার্যক্রমের দরকার নেই। দেশে এমনও নজির রয়েছে যে, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা অনাস্থা প্রস্তাব দেয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।
এদিকে এ প্রসঙ্গে উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন অর-রশীদ হাওলাদার হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার জানান, উপজেলা পরিষদ শক্তিশালী হওয়ার প্রধান অন্তরায় বিদ্যমান আইন। আইন সংবিধানকে লঙ্ঘন করতে পারে না। আবার পরিপত্র দ্বারা আইনকে রদ করা যায় না। কিন্তু উপজেলার ক্ষেত্রে এমনই হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম বাস্তবায়নে বড় বাধা পরিপত্র দ্বারা গঠিত প্রায় ১২০টি কমিটি। অধিকাংশ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদস্য সচিব সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা। ওই কমিটিগুলোতে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।
অথচ উপজেলা পরিষদ আইনের তৃতীয় তফসিলের উপজেলাধীন ১৭টি বিভাগ, বিভাগসমূহের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের কার্যাবলি উপজেলা পরিষদের কাছে সুস্পষ্টভাবে হস্তান্তরিত। কিন্তু তাদের বিষয়ে চেয়ারম্যানদের আর্থিক ও প্রশাসনিক কোনো ক্ষমতা নেই। তবে কিছু কমিটিতে চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা রাখা হয়েছে। যার কোনো আইনি বিধান নাই। উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিল ব্যবস্থাপনার নীতিমালার ৪ ধারায় আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে করা হয়েছে। অথচ ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার দফাদারদের বেতন ভাতাদির যে অংশ এখান থেকে পরিশোধ করা তার আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলী। ওসব সমস্যা সমাধান করতে আইন সংশোধন জরুরি।