সাম্প্রতক সময়ে আশঙ্কাজনক হারে কমছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের রাশ টানতে সরকারের দেয়া কিছু শর্তের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের চেয়ে টাকা উত্তোলন হচ্ছে বেশি। গত ছয় মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় এক-পঞ্চমাংশে নেমে এসেছে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়েও ভাটার ধারা। ফলে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন কমে যাওয়ার সরকারের ব্যাংক ঋণে প্রভাব পড়েছে। ইতিমধ্যে চলতি অর্থবছরের ছয় মাসেই পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ব্যাংক ঋণ নিয়ে ফেলেছে সরকার। ফলে বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। আর ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর এবং অর্থনীতিবিদদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সঞ্চয়পত্র মানুষের বিনিয়োগকৃত অর্থ সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ। বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে মূলধন উত্তোলন করার পর বাকি অর্থ নিট বিনিয়োগ। চলতি অর্থবছর সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাবানুযায়ী, অর্থবছরের প্রথমার্ধে এ খাতে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৫ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। আর ডিসেম্বরে বিনিয়োগের উত্তোলন বেশি হওয়ায় নিট বিনিয়োগ কমে গেছে ৪০৮ কোটি টাকা। বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু আছে। আর সেগুলোর গড় সুদের হার ১১ শতাংশের বেশি।
সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চাইতেও বেড়ে গিয়েছিল। তাতে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ বেড়ে গিয়ে সুদ হিসেবে বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছিল। ওসব কারণে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে রাশ টানার উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা, সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় উৎসে কর দ্বিগুণ করা, ১ লাখ টাকার ওপরে হলে ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে অর্থ দেয়া, অনলাইনে আবেদনের পদ্ধতি, একই ব্যক্তির বিভিন্ন জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ এবং অর্থের বিবরণ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। তাছাড়া এক ব্যক্তি কত টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে, তারও সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। ওসব কারণেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমে গেছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথমার্ধে সরকারের ব্যাংক ঋণ ঠেকেছে ৪৮ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। অথচ পুরো অর্থবছরের সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে পুরো বছরব্যাপী সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছিল ২৬ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।
অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এখন সরকার চাইলেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়াতে পারছে না। কারণ চাহিদা তো থাকতে হবে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে গেছে। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে ওসব খাতের প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।