সরকার বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য কঠিন শর্তে ২ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। ওই ঋণে কোরিয়ান একটি কোম্পানি থেকে ৭০টি রেলইঞ্জিন কেনা হবে। ওই কোম্পানিটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পেতে যাচ্ছে। যদিও স্পেনের একটি কোম্পানি ছিল সর্বনিম্ন দরদাতা। কোরিয়ান কোম্পানিটির ঋণের সুদের হার হবে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ। ৭০টি মিটার গেজ(এমজি) ডিজেল ইলেকট্রিক(ডিই) লোকোমোটিভ সংগ্রহ (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের জন্য এ ঋণ নেয়া হচ্ছে। ঋণ পরিশোধের জন্য সরকার সময় পাবে ১৯ বছর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঋণের জন্য অন্যান্য শর্তের মধ্যে ‘অ্যাজেন্ট ফি’ নামে একটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। তাও একবার-দু’বার নয়, ওই অ্যাজেন্ট ফি দিতে হবে ১৯ বছরে ১৯ বার। তবে তাতে আপত্তি জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ওই ঋণের জন্য ১৯ বার নয়, মাত্র একবার অ্যাজেন্ট ফি দেয়া হবে। অতিসম্প্রতি শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির (স্ট্যান্ডিং কমিটি অন নন-কনসেশনাল লোন) ৩১তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, ৭০টি মিটার গেজ (এমজি) ডিজেল ইলেকট্রিক(ডিই) লোকোমোটিভ সংগ্রহ (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১১ সালে শর্তসাপেক্ষে একনেকে অনুমোদন হয়। কিন্তু প্রকল্পে সরকারি তহবিল (জিওবি) থেকে অর্থ পাওয়া যায়নি। তারপর দুই দফায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি। তৃতীয় দফায় টেন্ডারের কাগজপত্র এবং টেকনিক্যাল বিষয়গুলো হালনাগাদ করে ২০১৪ সালে আবারো দরপত্র আহ্বান করলে ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র প্রস্তাব দাখিল করে। তার মধ্যে স্পেনের প্রতিষ্ঠান এম/এস ভোসলোহ ইস্পানা এস এ স্পেন সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়। ওই প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৮৬৪ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকার প্রস্তাব করে। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ না দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা কোরিয়ার এম/এস হুন্ডাই রোটেম কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয়। অথচ ওই কোম্পানিটি প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে ৮১৫ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ২৫০ টাকা বেশি প্রস্তাব করেছে। কোরিয়ান কোম্পানিটি আনুষঙ্গিক সব মিলিয়ে ২ হাজার ৬৭৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ৬৩৬ টাকার প্রস্তাব করে। আর দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ওই প্রতিষ্ঠানটিকেই প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত করার সুপারিশ করে।
সূত্র আরো জানায়, লোন নেগোসিয়েশন কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোরিয়া ট্রেড ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (কেএসইউআরই), এক্সিম ব্যাংক অব কোরিয়া (কে-এক্সিম) এবং কমার্শিয়াল ফ্যাসিলিটি’কে চূড়ান্ত করা হয়। ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ড ধরে ঋণ পরিশোধের সময় ধরা হয়েছে ১৯ বছর। সুদের হার ধরা হয়েছে ৬ মাস লাইবর+২ দশমিক ৪০ শতাংশ। সব মিলিয়ে সুদ হার হবে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ। তার মধ্যে লাইবর হার ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। ঋণটির গ্র্যান্ট ইলিমেন্ট ১৭ শতাংশ। তিনটি সংস্থাকে ব্যবস্থাপনা ফি বাবদ ১ দশমিক ৫০ শতাংশ করে অর্থ দিতে হবে। আর একটি সংস্থাকে দিতে হবে ১ দশমিক ৬০ শতাংশ। প্রতিশ্রুত ফি বাবদ চারটি সংস্থাকেই শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করে দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো ১৯ বছর পর্যন্ত এজেন্ট ফি বাবদ ২০ হাজার ডলার করে দাবি করেছে। তবে অর্থমন্ত্রী এতে আপত্তি জানিয়েছেন।
এদিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বলেছেন, ২০ হাজার ডলার শুধু প্রথম বছর দেয়া হবে। পরে আর কোনো অর্থ দেয়া হবে না। এ বিষয়ে কোরিয়ান কোম্পানির সাথে কথা বলার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন অর্থমন্ত্রী।