থাইল্যান্ডের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় একটি শহরে এলোপাতাড়ি গুলিতে অন্তত ২৬ জনকে হত্যা এবং অন্তত ৫৭ জনকে আহত করা এক সেনা কর্মকর্তা গুলিতে নিহত হয়েছেন। এর মাধ্যমে জনাকীর্ণ একটি বিপণীবিতানে চলা অচলাবস্থার অবসান হয়েছে বলে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা রোববার জানিয়েছেন। একটি জমি চুক্তি নিয়ে অসন্তোষ থেকে ওই সেনা কর্মকর্তা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ জানিয়েছেন। এ দিন ঘটনাস্থল নাখন রাচসিমা শহরে ওই ঘটনায় আহতদের দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। এ দিনই থাইল্যান্ডের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ওই সেনা কর্মকর্তা নিহত হন বলে পুলিশ ও সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রাজধানী ব্যাংককের আড়াইশ কিলোমিটার উত্তরপূর্বের নাখন রাচসিমা (কোরাত নামেও পরিচিত) শহরের যে বিপণীবিতানে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। “পুলিশ ওই অপরাধীকে হত্যা করে আট জিম্মিকে উদ্ধার করেছে। তাদের মধ্যে আহত কয়েকজনও আছেন,” একজন নিরাপত্তা সূত্র এমনটি বলেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নিরাপত্তা সূত্রগুলো পরিচয় প্রকাশে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি। নির্বিচার গুলিবর্ষণকারী ওই সৈন্যকে নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আনুতিন চারনভিরাকুল। “ঘটনা শেষ করায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ। গুলিবর্ষণকারী গুলিতে নিহত!!!” এক ফেইসবুক পোস্টে বলেছেন তিনি। শনিবার স্থানীয় সময় বিকাল প্রায় ৩টার দিকে একটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল উন্মত্ত ওই সৈন্য। স্থানীয় পুলিশের ভাষ্য মতে, জাক্রাফ্যান থম্মা নামে সেনাবাহিনীর এই জুনিয়র কর্মকর্তা প্রথমে শহরের একটি বাড়িতে ঢুকে দুজনকে গুলি করে হত্যা করেন। এরপর তিনি যান সেনা ঘাঁটিতে, সেখানকার অস্ত্রাগার থেকে বন্দুক নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছেন। তার গুলির মুখে পড়েছে পথচারী, বিপনীবিতানে কেনাকাটা করতে যাওয়া নারী-পুরুষ। হামলা শুরুর ১০ ঘণ্টা পরেও তাকে ধরতে শহরের কেন্দ্রস্থলের টার্মিনাল ২১ নামের বিপনীবিতানটি ঘিরে রেখেছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরমধ্যে একবার ওই বিপণীবিতানে অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী, তখন সেখানে আটকা পড়া কয়েকশ মানুষ বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। এরপরেও অস্ত্রধারী ওই বিপনীবিতানে অবস্থান করছিলেন বলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কংচিপ তন্ত্রভানিত রয়টার্সকে জানান। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বিবিসি থাইকে জানান, এই সেনা সদস্য সেনা ঘাঁটি থেকে বন্দুক ও গুলি নেওয়ার আগে তার কমান্ডিং অফিসারের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করেন। এরপর গাড়ি চালিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থলের ওই বিপণীবিতানে যান। তার গুলিতে অন্তত ২০ জন নিহত এবং কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল কংচিপ নিশ্চিত করেছেন। আহত হয়ে ওই এলাকার চারটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লোকগুলোকে বাঁচাতে রক্ত চেয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। হামলার মধ্যে ফেইসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন ওই সেনা সদস্য, তবে কেন তিনি এই হত্যাকা- চালিয়েছেন তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে থাই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমে সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, ওই সেনা সদস্য শহরের মুয়াং এলাকায় টার্মিনাল ২১ বিপণীবিতানের সামনে একটি গাড়ি থেকে নেমে গুলি করছেন আর লোকজন পালানোর চেষ্টা করছেন। “আমরা জানি না কেন সে এটা করছে। মনে হচ্ছে সে পাগল হয়ে গেছে,” বলেন কংচিপ।
অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রক্তে ভেসে যাওয়া গাড়ির চাকার ওপর পড়ে যাচ্ছেন একজন। তিনি নিহত ২০ জনের একজন কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আরেকটি ভিডিওতে গুলিবিদ্ধ চারজনকে দেখা গেছে, যাদের কোনো সাড়া নেই। বিপণীবিতনের ভেতরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে বন্দুকধারীকে কালো পোশাক পরিহিত এবং কাঁধের ওপর বন্দুক উঁচু করে ধরে রাখতে দেখা গেছে। তার আশপাশে আর কারও উপস্থিতি দেখা যায়নি। রয়টার্সঅন্যান্য ফুটেজে ভবনটির বাইরে আগুন জ¦লতে দেখা গেছে। গুলি লেগে বিস্ফোরিত একটি গ্যাস ক্যানিস্টার থেকে এ আগুনের সূত্রপাত হয় বলে কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলাকারীর পোস্ট করা কয়েকটি ছবির একটি তার সেলফি, সেখানে তার পেছনে এই আগুনের কু-লী দেখা গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা কয়েকটি পোস্টে বিপণীবিতানের কাছে গুলিবর্ষণের দৃশ্যও এসেছে। তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে ফেইসবুক। হামলা চালানোর মধ্যে ফেইসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে ঘাতক লিখেছেন, “সবার জন্যই মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী।” আরেক পোস্টে তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, তার আত্মসমর্পণ করা উচিত কি না।