আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো ইয়াবা ব্যবসায়ী ও চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও তাদের ঠেকাতে পারছে না। বন্দুকযুদ্ধে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে মাদক কারবারীরা। পাশাপাশি ধরা পড়ছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালানও। বিগত ২০১৮ সাল মে মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৪ শতাধিক মাদক ব্যবসায়ি নিহত হয়। কিন্তু থামছে না ইয়াবা ব্যবসা। বরং নগর, শহর ছেড়ে এখন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায়ও এখন তুঙ্গে ইয়াবা ব্যবসা। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, আগের চেয়ে ইয়াবা ব্যবসা অনেকটা সীমিত হয়ে গেছে। তারপরও অব্যাহত রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত হচ্ছে এদেশে ইয়াবা প্রবেশের সূতিকাগার। তবে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডে নজরদারির কারণে পাচারকারীরা রুট বদল করেছে। পাচারকারীরা এখন দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র সীমানা বেছে নিয়েছে। বিশেষ করে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বাগেরহাট ও নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকা দিয়ে পাচারকারীরা দেশে সবচেয়ে বেশি ইয়াবা প্রবেশ করাচ্ছে। পাশাপাশি বিমানে করেও ঢাকায় ইয়াবা আনা হচ্ছে। কক্সবাজার বা চট্টগ্রাম থেকে বিমানে করে পাচারকারীরা ইয়াবা নিয়ে আসছে।
সূত্র জানায়, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে ইয়াবাসহ মাদক পাচারকারী গডফাদাররা তাদের কর্মকা-ের কৌশল বদলে ফেলেছে। ইদানিং মেয়েদেরকে মাদক পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা নারী। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের হাতে যারা ধরা পড়ছে, ওরা শুধু বহনকারী মাত্র। রাঘব-বোয়ালরা অধরাই থেকে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সারাদেশে ইয়াবার ব্যবসা চলে ক্ষমতাসীন সরকারি দলের প্রত্যক্ষ মদদে। রাজধানীর ইয়াবা কারবারিদের ব্যাপারে ভিন্নতা থাকলেও উপজেলা বা গ্রামের ইয়াবা স্পটগুলো সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কম বেশি ধারণা রয়েছে। ওসব স্পট বা ইয়াবা ব্যবসায়ীরা স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় চলাফেরা করে। ফলে পুলিশ তাদের দেখেও না দেখার ভান করে। এমনও ঘটনা ঘটেছে যে, ক্ষমতাসীনদের চাপে মাদকসহ আটক কারবারীদেরকে পুলিশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
সূত্র আরো জানায়, এদেশীয় ইয়াবা কারবারিরা মিয়ানমার থেকে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার ইয়াবা আনছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, ইয়াবার বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে এখন পর্যন্ত ৩ কোটিরও বেশি সংখ্যক ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। আর সারাদেশে আটক হয়েছে ২ লাখ ইয়াবা ব্যবসায়ী। মাদক নির্মূলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিরন্তন চেষ্টা করে যাচ্ছে। এমনকি বড় বড় শহরে মাদক বিরোধী অভিযানে তারা আশানুরূপ সফলতা পাচ্ছে। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে তাদেরকে বেগ পেতে হচ্ছে।
এদিকে অতিসম্প্রতি কক্সবাজারের টেশনাফ সরকারি কলেজ মাঠে পুলিশের কাছে ২১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পন করেছে। তার আগে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পন করে। এতোকিছুর পরও ইয়াবা ব্যবসার লাগাম টানতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
অন্যদিকে এ বিষয়ে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাসেম জানান, সমাজে মাদক বিশেষ করে ইয়াবা বিক্রি বন্ধ করতে হলে এর চাহিদা আগে বন্ধ করতে হবে। সেজন্য সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। র্যাবের পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড সবাই ইয়াবার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে এবং সফলতাও পাচ্ছে। কিন্তু যতোক্ষণ পর্যন্ত সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা সম্ভব না হবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত ইয়াবা ব্যবসার লাগাম টানা সম্ভব হবে না।