গত কয়েক বছর ধরে সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং এগুলোতে হতাহতের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই গড়ে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়, যাদের প্রাণহানি হয় সড়কে বিভিন্ন যানবাহনের দুর্ঘটনায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৫৩১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মোট ৫৪৭ জন নিহত ও ১১৪১ জন আহত হন। একই সময় রেলপথে ৪৩টি দুর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত, ১০ জন আহত হন। নৌ-পথে ১৭টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, ৫৮ জন আহত এবং ৩০ জন নিখোঁজ হন। আর সড়ক, রেল ও নৌ দুর্ঘটনায় মোট নিহতের সংখ্যা ৫৯৭ জন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। দেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। আমরা জানি, পত্রিকায় শতভাগ পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব নয়। যেটুকু পাওয়া যায় তাতেই এত সংখ্যক হতাহত, প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চয়ই এর চেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ১৬১ জন পথচারী, ১৯১ চালক, ৯১ পরিবহন শ্রমিক, ১৪৬ শিক্ষার্থী, ১০ শিক্ষক, ১২ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩৯ নারী, ৫৫ শিশু, ২ সাংবাদিক, ৫ চিকিৎসক, এক প্রকৌশলী, এক মুক্তিযোদ্ধা এবং ১২ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে নিহত হন ১৪০ জন চালক, ১৩৭ পথচারী, ৮২ নারী, ৬৮ ছাত্র-ছাত্রী, ৪৩ পরিবহন শ্রমিক, ৩৭ শিশু, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৯ নেতাকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ সদস্য, ৪ চিকিৎসক, মুক্তিযোদ্ধা ১, শিক্ষক ৭ এবং প্রকৌশলী ১ জন। ১৭.৭৯ শতাংশ বাস, ২৫.৩৬ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৫.৯৭ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৯.১৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২০.৩১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৯.১৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ১২.২১ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ৫৯.১৩ শতাংশ গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৮.০৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৭.৭০ শতাংশ খাদে পড়ে, ৩.৩৮ শতাংশ বিবিধ কারণে, ০.৭৫ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ০.৯৪ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনা সব ধরণের যানবাহনের মধ্যে ঘটছে এবং সব পর্যায়ের মানুষই ঝুঁকির মধ্যে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতিরি পরিসংখ্যানে যেসব তথ্য উঠে এসেছে তা ভয়াবহ। এক মাসে অর্ধসহ¯্র মানুষের প্রাণহানি ও হাজারেরও বেশি মানুষের আহত হওয়া মোটেই স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে অনেকদিন ধরেই অনেক আলোচনা চলছে, হয়েছে আন্দোলনও। কিন্তু তারপরও এটি নূন্যতম পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়নি। এটির জন্য কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও পথচারীদের অসচেতনতা -দুটোই দায়ী। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আলাপ-আলোচনা, সমালোচনা ও পরিকল্পনা হলেও এখন পর্যন্ত কোনও কঠোর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তাই অসংখ্য মানুষের এভাবে অকালমৃত্যু বন্ধে দৃশ্যমান কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কালক্ষেপণ করার সুযোগ আর নেই।