দিনাজপুরের পার্বতীপুরে আতিক, রাকিবুল, লিটন, মুনকার নাঈম ও রবিউল নামে ৫ শিশু সবে মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। এখনো দেড় মাসও হয়নি। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশমত বনভোজনের নির্দ্ধারিত ৪শ’ টাকার চাঁদা পরিশোধ করতে না পারার অপরাধে তাদের মত একই বিদ্যালয়ের ১৮ শিক্ষার্থীর হাতে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের ছাড়পত্র ধরিয়ে দিলেন প্রধান শিক্ষক। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণির দরিদ্র পরিবারের এসব শিশু শিক্ষার্থী সাদাকালো অক্ষরে লেখা এ ছাড়পত্রের মর্মার্থ না বুঝলেও শিক্ষিত প্রতিবেশীর ছাড়পত্রের ব্যাখ্যায় হতবাক এসব শিশুর অভিভাবকরা। হতবাক এলাকার সচেতন মানুষ।
ঘটনাটি ঘটেছে, আজ বুধবার দুপুরে পার্বতীপুর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের জমিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে। পূর্ব নির্দ্ধারিত ঘোষনা অনুযায়ী গত ১০ ফেব্রুয়ারী সোমবার দেশের নারী জাগরনের অগ্রপথিক মহিয়ষী নারী বেগম রোকেয়ার স্মৃতিবিজড়িত রংপুরের পায়রাবন্দে বনভোজনের আয়োজন করে জমিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়। এজন্য শিক্ষার্থী প্রতি ৪শ’ টাকা করে চাঁদা ধরা হয়। বিদ্যালয়ের ২৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে দরিদ্র বিত্তহীন পরিবারের ১৮ শিক্ষার্থী চাঁদার টাকা জোগাড় করতে না পারায় তারা বনভোজনে অংশ নিতে পারেনি। বনভোজন উপলক্ষে বিদ্যালয় দু’দিন ছুটি ঘোষনা করে। বনভোজনের ছুটি শেষে আজ বুধবার ওই ১৮ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম তাদের প্রত্যেকের হাতে ছাড়পত্রের নোটিশ তুলে দেন। তাদের মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণির-৫, ৭ম শ্রেণির-২, ৮ম শ্রেণির-৭ ও ৯ম শ্রেণির-৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
বহিস্কৃত শিক্ষার্থী ৬ষ্ঠ শ্রেণির আতিকের অভিভাবক মতিউর রহমান ও একই শ্রেণির রাকিবুল ইসলামের অভিভাবক রেজিনা বেগম বলেন, তাদের সন্তানরা চাঁদা দিতে না পারায় বনভোজনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে জমিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বহিষ্ককৃত শিক্ষার্থীরা স্থানীয় বখাটে ছেলেদের সাথে নিয়ে তিনটি মাইক্রো বাসে করে আমাদের সারাদিন অনুসরণ ও বিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত বনভোজনে অংশ গ্রহণকারী ছাত্রীদের উত্তপ্ত করায় ওই ১৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
১৮ শিক্ষার্থী বহিস্কারের ব্যাপারে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির মতামত নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, তিনি ঢাকায় থাকায় তার মতামত নেয়া হয়নি। তবে, সভাপতি ছাড়া বনভোজনে অংশ নেয়া বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সকল সদস্যের পরামর্শে ১৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়।
এ ঘটনার বিষয়ে পার্বতীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মেরাজুল ইসলাম বলেন, বহিষ্ককৃত শিক্ষার্থীরা পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র নিকট বিচার চেয়ে আবেদন করেছে। এর একটি অনুলিপি আমি পেয়েছি। প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা হলে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সিন্ধান্ত ছাড়াই তিনি নিজস্ব প্রশাসনিক ক্ষমতা বলে এ সিন্ধান্ত কার্যকর করেছেন বলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান।