বাংলাদেশ ক্রিকেটের এটাই যেন শেষ সাফল্য না হয়। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। তা হলেই বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। সব অবস্থায় দলকে সর্মথন দিতে হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর পাবলিক লাইবের্রি মাঠে জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রিড়া সংস্থা আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জয়ের অনুভূতি প্রকাশ এ কথাগুলো বলেন বিশ্ব কাপ জয়ী দলের অধিনায়ক আকবর আলী। যুব বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ এসেছে রংপুরের আকবর আলীর হাত ধরে। সকাল থেকেই আকবর আলীকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত ছিল রংপুরবাসি। বিশ্বজয়ের পর যে এটাই তার প্রথম নিজ জেলায় সফর ছিল। তার শৈশবের সোনলী দিনগুলো কেটেছে এই রংপুর শহরের পশ্চিম জুম্মাপাড়ায়। তাকে বরণ করে নিতে উৎসবের আমেজ ভরপুর ছিল পুরো রংপুর। সকাল থেকে কয়েক শত মটর সাইকেল, মাইক্রোবাস, পিকআপে কয়েক হাজার আকবর প্রেমি সৈয়দপুর বিমান বন্দরে যায়। সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে রংপুরে আসার পথে মোড়ে মোড়ে হাত উঁচিয়ে ও ফুল ছিটিয়ে আকবরকে সংবর্ধিত করেন রাস্তার দু'পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো মানুষ। দুপুর সোয়া একটায় নগরীর মেডিকেল মোড়ে এলেও তাকে সরাসরি শহরে না ঢুকিয়ে মর্ডান মোড় হয়ে নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে বেলা আড়াইটার দিকে সংবর্ধনার স্থল পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে এসে পৌছেন আকবর আলীর গাড়ির বহর। ব্যন্ডপার্টির সুরেলা বাদ্যের তালে তালে তাকে বরণ করে নেয়া হয়। ওই গাড়ি বহরের নেতৃত্ব দেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফাসহ নগরীর সুধিজন। রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত গণসংবর্ধনায় ভালোবাসার ফুল, শুভেচ্ছায় সিক্ত হয় আকবর। এসময় বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক আসিব আহসান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, রংপুরের কৃতী সন্তান আকবরের হাত ধরে যে সম্মান এসেছে এজন্য পুরো দেশবাসি গর্বিত। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক এ্যাড আনোয়ারুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মারুফ হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, মহা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডলসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আকবর আলীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জাননো। পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে গণ সংবর্ধনা শেষে আকবর জুম্মাপাড়াস্থ নিজ বাড়িতে যান। এ সময় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেকেন্দার আলীর নেতৃত্বে সেখানেও শত শত মানুষ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসময় সাংবাদিকদের সাথে সংক্ষিপ্ত কথা বলেন আকবর আলী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আকবর আলী বলেন রংপুরের মানুষ আমাকে এত ভালোবাসা দিবে এটা স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। সত্যি এখানকার মানুষের ভালোবাসায় আমি অভিভূত। বিশ্বকাপ জয়ের ১৯ দিন আগে বড় বোনের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর কি ধরনের অনুভূতি ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে আবকর আলী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবোনা। তিনি এ সময় জুনিয়র ক্রিকেটার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অধ্যবসায় ও একাগ্রতা থাকলে সাফল্য আসবে। তিনি জুনিয়র ক্রিকেটার একাগ্রতার সাথে খেলার আহবান জানান। তিনি দলকে সব সময় সমর্থন দেয়ার জন্য ক্রিকেট প্রেমিদের প্রতি অনুরোধ জানান। বৃহস্পতিবার সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওয়ানা দিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসেন যুব ক্রিকেটের অধিনায়ক আকবর আলী। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সুধিমহল। পরে সেখান থেকে তাকে কার, মাইক্রো, মোটর সাইকেলের বিশাল বহরে করে রংপুরে আনা হয়। তার নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে নগরীর কৈলাস রঞ্জন স্কুল গেটের সামনে থেকে ফুলেল বিছানো গালিচায় ফুলে ফুলে সিক্ত হন আকবর আলী। রাতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জুম্মাপাড়ায় সমবর্ধনা দেয়া হবে। সেখানে প্রস্ততি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। আকবর শুরুতে মাদরাসায় ভর্তি হলেও পরে বাড়ির পাশে বেগম রোকেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে নগরীর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হন। ক্লাস সিক্সে উঠে রংপুরের অসীম মেমোরিয়াল ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হন। সেখানে অঞ্জন সরকারের হাত ধরে রংপুর জিলা স্কুলের মাঠে তার ক্রিকেটের সত্যিকারের হাতে খড়িটাও হয়ে যায়। ২০১২ সালে বিকেএসপিতে সুযোগ পান। বিকেএসপির বয়সভিত্তিক দলে খেলে সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতাও হয় সেখান থেকে। ২০১৬ সালে তার এসএসসি পরীক্ষার সময় চলছিল প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ। তখন খেলা ও লেখাপড়া দুটিই সামলেছেন দারুণ মনোযোগে। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান তিনি। এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৪২। সব শেষে আকবর আলী দক্ষিণ আফ্রিকার আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের জন্য বয়ে আনেন বিরল সম্মান।