পাবনার চাটমোহর উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে সঠিক তদারকি ও পর্যবেক্ষণ না করায় কাজ শেষ হওয়ার পরও সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। উপজেলার পাশর্^ডাঙ্গা ও গুনাইগাছা ইউনিয়নে নির্মিত দুটি সেতুতে অনিয়ম ও দূর্নীতি এখন দৃশ্যমান। মাটি ভরাট ও সংযোগ সড়ক না থাকায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু-কালবার্ট নির্মাণ প্রকল্পের নির্মিত সেতু দুইটি কোন কাজে আসছে না। সেতু নির্মাণ করার পর মাটি ফেলা হয়নি। পুরাতন রাস্তায় কষ্টে যাতায়াত করছেন এলাকাবাসী। দূর্যোগ দূর করতে নির্মিত হলেও সেই সেতুগুলোই এখন দূর্ভোগের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে,গত কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চাটমোহর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে বেশ কিছু সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুগুলো স্থানীয় লোকজনের দূর্ভোগ দূর করতে এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অধীনে তৈরি করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তার সাথে মিলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অনিয়মের মধ্য দিয়ে কাজ শেষ করলেও সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ার পাশাপাশি সংযোগ সড়ক বা মাটি না দিয়েই কাজ শেষ করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কখনও এ ব্যাপারে তদারকি করেনি। মাঠের মধ্যে সেতুগুলো নিষ্প্রাণ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুরে চাটমোহর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মোঃ আঃ হামিদ মাস্টার উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের হিয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে সিএনবি রাস্তায় নির্মিত ৩২ ফুট সেতুটি পরিদর্শন করেন। এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৫ টাকা। সুজানগরের মেসার্স কনক এন্টারপ্রাইজ সেতুটি নির্মাণ করলেও সেতুর দুই পাশে কোন মাটি ভরাট করা হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যান এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় উপজেলা প্রকৌশলী রাজু আহমেদ,উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও গুনাইগাছা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে উপজেলার পাশর্^ডাঙ্গা ইউনিয়নের শ্রীদাসখালী-রাউৎকান্দি সড়কের বিলের মধ্যে অনুরুপ আরেকটি একটি সেতু নির্মাণ করা হলেও তা অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেতুটি নির্মাণের পর পরই ফাটল দেখা দেয়। স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত সচিত্র সংবাদ প্রকাশ হয়। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা পড়ে গেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা প্রকৌশলী রাজু আহমেদ জানালেন,সেতুটি নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি করা হয়েছে। কোন উপকরণই সঠিকভাবে দেওয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,এই সেতু নির্মাণে দূর্নীতির সাথে জড়িত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম শামীম এহসান কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করছেন না।
সোমবার সকালে সরেজমিনে শ্রীদাসখালী বিলের নির্মিত সেতু পরিদর্শন করে দেখা যায়,সেতুটি নির্ধারিত স্থানে নির্মাণ করা হয়নি। সেতুর দুই পাশে গত সপ্তাহে কিছু মাটি ফেলা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে বিলের খালে ধসে গেছে। সেতুতে কোন প্রকার যানবাহন উঠতে পারছে না। ঠিকাদার পিআইও এর সাথে যোগসাজসে অতি নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন। এলাকাবাসী সেতু নির্মাণে দূর্নীতি করায় এবং তা চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ রায়হান জানালেন,তিনি ১৯ ফেক্রুয়ারি সেতুটি পরিদর্শন করবেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন,প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
অভিযোগ উঠেছে,উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামীম এহসান বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রকল্পে দূর্নীতি করে চলেছেন। সেতু নির্মাণে ঠিকাদারের সাথে যোগসাজসে এই পিআইও হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। অভিযোগ হলেও কোন তদন্ত হয় না। এ ছাড়া গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার,গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষাবেক্ষণ,গ্রামীণ রাস্তায় হেরিং বোনবন্ড,অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচীসহ টিআর কাবিখা প্রকল্পে দূর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে সরকারি অর্থ। প্রতিটি প্রকল্পের ঠিকাদারদের সাথে যোগসাজসে অতি নিম¤œমানের কাজ করা তার এখন নিয়মিত কর্ম।
এসকল অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে জানার জন্য পিআইও এস এম শামীম এহসানের সাথে কথা বলার জন্য তার দপ্তরে গিয়েও দেখা মেলেনি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।