একুশে ফেব্রুয়ারিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে একসময় সাময়িকভাবে কলাগাছ, কাগজ ও বাঁশের তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হতো প্রায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। গৌরীপুরে এখন আর সে চিত্র নেই। গত ১ দশকে গৌরীপুর পৌরসভা ও ১০ ইউনিয়নে ৪ শতাধিক শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে। ২০১২ সনে তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান ফকির গৌরীপুর উপজেলার প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজার,বাসষ্ট্যান্ড প্রভৃতি স্থানে আড়াই শতাধিক শহীদ মিনার স্থাপন করেন। সে বছর শহীদ দিবসে প্রথম বারের মত শহীদ মিনার গুলোতে অর্পণ করা হয় পুষ্পাঞ্জলি। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় প্রশাসন, নিজস্ব তহবিল থেকে বাকী প্রায় সকল প্রাথমিক, মাধ্যমিক,কলেজ,কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্টান ও মাদরাসায় স্থাপন করা হয় আরও দেড় শতাধিক শহীদ মিনার। আর এ উন্নয়ন প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত মরহুম মুজিবুর রহমান ফকিরের উদ্যোগে। সরেজমিনে জানা গেছে, গৌরীপুর উপজেলাতেই ২২৫ টি শহীদ মিনারে সে বছর (২০১২) একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য প্রস্তুত করা হয়। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, গৌরীপুর থেকে টানা ৩ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত মুজিবুর রহমান ফকির স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই উপজেলার যেসব স্থানে অস্থায়ী ভিত্তিতে শহীদ মিনার স্থাপন করা হতো, সেসব স্থানে টিআর কাবিখা প্রকল্পের বরাদ্দের আওতায় শহীদ মিনার স্থাপনের নির্দেশ দেন। সে এ সময় উদ্যোগ নেয়ায় দেশব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে।
গৌরীপুর উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানা গেছে, গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের কাউরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, শ্যামগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শ্যামগঞ্জ হাফেজিয়া মাদরাসা, শ্যামগঞ্জ, গৌরীপুর ইউনিয়নের শালীহর হাজী আমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, গজন্দর, অচিন্তপুর ইউনিয়নের শাহগঞ্জ বাজার, সহরবানু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শাহগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, মাওহা ইউনিয়নের ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, নহাটা উচ্চ বিদ্যালয়, লংকাখোলা উচ্চ বিদ্যালয়, সহনাটী ইউনিয়নের ভালকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, পাছার উচ্চ বিদ্যালয়, বোকাইনগর ইউনিয়নের নাহড়া বাজার, কেল্লাবোকাইনগর ফাযিল মাদরাসা, বেতান্দর উচ্চ বিদ্যালয়, বাংলাবাজার, বাসাবাড়ী বাজার, রামগোপালপুর ইউনিয়নের রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ড, পিজেকে উচ্চ বিদ্যালয়, রামগোপালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডৌহাখলা ইউনিয়নের ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয়, কলতাপাড়া বাজার, ভাংনামারী ইউনিয়নের বারুয়ামারী উচ্চ বিদ্যালয়, সিধলা ইউনিয়নের বালিজুড়ী উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ২২৫টি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। টিআর প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন স্থানে এসব শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। রামগোপালপুর পিজেকে উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাইদুর রহমান জানান, মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে আত্মাত্যগকারী শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনে নতুন প্রজন্ম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল। ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পূর্তিতে ২০২০ সালে মজিব বর্ষে প্রয়াত ক্যাপ্টেন মুজিবের উদ্যোগে নির্মিত শহীদ মিনার গুলোতে শিক্ষার্থীরা ও এলাকাবাসী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করার জন্য প্রস্তত রয়েছে। মাধ্যমিক ও প্রথমিক শিক্ষা অফিস হতে জানা গেছে ২০১৬ সনে ক্যাপ্টেন মুজিবের মৃত্যুর পর তার দেখানো পথ ধরে সকল প্রথামিক, মাধ্যমিক ও কলেজ সমূহে পর্যায়ক্রমে নির্মাণ করে আসছে। যার সংখ্যা প্রায় চারশ’র মত। আরও প্রায় অর্ধ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ওই শহীদ মিনারগুলো নির্মাণ সম্পন্ন হলে উপজেলায় শতভাগ শহীদ মিনার স্থাপন হবে।