চিনির পাইকারি দাম দু’সপ্তাহ ধরেই বাড়ছে। এ সময়ের মধ্যে নিত্যপণ্যটির মণপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২৫০ টাকা। মূলত সরকারি চিনির দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়ানোর ফলে মিল মালিকরাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বিদেশ থেকে কম দামে চিনি আমদানি করেও অতিরিক্ত মুনাফা করছেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। আর আসন্ন গ্রীষ্মকালীন মৌসুম ও রোজায় চিনির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নিতে মিল পর্যায়ে চিনির দাম বাড়ানো হচ্ছে। যদিও চিনির বাজার স্থিতিশীল রাখতে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাই বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের (বিএসএফআইসি) অন্যতম কাজ। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা তা না করে চিনির দাম বাড়াতেই মূখ্য ভূমিকা রাখছে। বিএসএফআইসি সম্প্রতি আরেক দফা ডিলার পর্যায়ে চিনির দাম বাড়িয়েছে। ফলে পাইকারি বাজারে অস্থির হয়ে উঠেছে চিনির দাম। বিএসএফআইসি এবং বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার টন চিনি উৎপাদন হয়। কিন্তু এখনো পণ্যটির বাজারের ৯০ শতাংশই আমদানিনির্ভর। আর বেসরকারি উদ্যোক্তাদের নিয়ন্ত্রণে আমদানিকৃত চিনির পুরো বাজার। ফলে ১০ শতাংশ বাজারের নিয়ন্ত্রক বিএসএফআইসি পণ্যটির দাম বাড়ালে তার সুবিধা নেয় বাজারের ৯০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণকারক আমদানিকারীরা। গত ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি কেজি চিনির বুকিং মূল্য ছিল ২৯ সেন্ট। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেও চিনির দাম ছিল ৩০ সেন্ট। আগামী মার্চে সরবরাহযোগ্য চিনির বুকিং দাম হচ্ছে প্রতি পাউন্ড ১৫ দশমিক ৭৮ সেন্ট। অর্থাৎ প্রায় এক বছরের তুলনায় বিশ্ববাজারে চিনির দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়েনি। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ইতিমধ্যে অস্থির হয়ে পড়েছে দেশের চিনির বাজার।
সূত্র জানায়, দেশে প্রতি বছর ১৫ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। তবে গ্রীষ্ম ও রোজার মাসেই সবচেয়ে বেশি চিনি বিক্রি হয়। ওসব কারণে পণ্যটির দাম চাহিদা মৌসুমে দেশে অস্থির হয়ে যায়। অনেক সময় বিশ্ববাজারে দাম কম থাকলেও মুষ্টিমেয় কয়েকটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কৃত্রিম সরবরাহ সঙ্কটে চিনির বাজার লাগামহীন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় চাহিদা মৌসুমের আগে করপোরেশন দাম বাড়ানোর ফলে দেশের চিনির বাজার ফের অস্থির হয়ে পড়ছে। কারণ দীর্ঘদিনই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চিনির কেজিপ্রতি ডিলার মূল্য ছিল ৫০ টাকা। তারপর কয়েক মাস আগে ডিলারদের চিনির দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়িয়ে ৫৫ টাকা করা হয়। তবে সর্বশেষ জানুয়ারির শেষ দিকে চিনির কেজিপ্রতি মূল্য আরো ৫ টাকা বাড়িয়ে ৬০ করা হয়। আর তারপর থেকেই দেশে বেসরকারি খাতের চিনির দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়তে শুরু করে। যদিও বিশ্ববাজারে চিনির দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে যে দামে চিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে তা আমদানির পর রিফাইন্ড বা পরিশোধন করে বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়েও কম দামে বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু করপোরেশনের চিনির দাম বাড়ানোর সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরাও বেসরকারি খাতের চিনির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে মাড়াই মৌসুম চলছে। এ মৌসুমে দেশের চিনিকলগুলোতে ১ লাখ ২৫ হাজার টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চাহিদা বৃদ্ধি ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে করপোরেশন বিভিন্ন সময় চিনির ডিলার পর্যায়ে মূল্য সংশোধন করে থাকে। তাছাড়া মজুদ ফুরিয়ে এলে আপতকালে চিনি ধরে রাখতেও করপোরেশন দাম বাড়াতে পারে। কিন্তু বাজার পর্যালোচনা না করে হুটহাট দাম বৃদ্ধি বা কমানো হলে বাজারও অস্থির হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে বিএসএফআইসির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা এএসএম মুতিউল্লাহ জানান, করপোরেশন দেশের চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। উৎপাদন খরচ ও দেশীয় বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করা হয়। আসন্ন চাহিদা মৌসুম সামনে রেখে দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। তবে বেসরকারি কোম্পানিগুলো চিনির দাম বাড়িয়েছে কিনা তা জানা নেই।