কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে প্রতিবন্ধী মনি এক অদম্য সাহসিকতার নাম। দু’পা অচল। হাতও চলে না তেমন। হাঁটা-চলা কিংবা কোনো প্রকার কাজ করতে একেবারেই অপারগ। নিজ হাতে খাওয়ার শক্তিটুকুও নেই। শারিরীক গঠনও বেঁটে। উচ্চতা মাত্র ৩৩ ইঞ্চি। এতএসব প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে তার অদম্য পথচলাকে এনে দিয়েছে আর দশজন প্রতিবন্ধীকে সাহস যোগানোর অনুপ্রেরণা। ইচ্ছে শক্তি এবং সাহসই তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সাফল্যের সিঁড়িতে। শত প্রতিকূলতার মাঝেও এবারের চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মনি। তার বাবা ও বড় ভাই আবদুর রাজ্জাকের কোলে চরেই পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া আসা করতে হয়। ইচ্ছে পড়াশুনা করে বড় চাকুরী করবে।
উপজেলার কুটি বাগডাঙ্গা এলাকার ফরমান আলীর মেয়ে ফারজানা ইয়াসমিন মনি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মনিই সবার ছোট। বাবা উত্তর পন্থাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
মনির বাবা জানায় একটাই মেয়ে। আদর করেই মেয়ের নাম রেখেছেন মনি। জন্ম ২০০৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। দেখতে সুন্দর হলেও জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিলেও তার উচ্চতা মাত্র ৩৩ ইঞ্চি। পা দুটোও অচল। হাত সামান্য নাড়াচাড়া করতে পারলেও কোনো কাজ করতে পারে না। তার মা রাবেয়া বেগমই তাকে হাতে তুলে খাওয়ায়। কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হলে বাবা, মা, ভাই, চাচাসহ বাড়ীর লোকজনই কোলে করে আনা নেয়া করেন। গাগলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয থেকে নাগেশ্বরী আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যায়য় কেন্দ্রে কোলে ও মোটরসাইকেলে করে গিয়েই এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মনি।
মনি জানায় ২০১৪ সালে তার বাবার কর্মরত স্কুল থেকে এ-গ্রেড পেয়ে পিএসসি এবং গাগলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে জেএসসিতে এ-গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এবারের পরীক্ষাতেও ভালো ফলাফল করার আশা করছে সে। লক্ষ্য আকাশ ছোঁয়ার। বিসিএস করে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছে তার।
মনির বন্ধুরা জানায়, মনি খুব ভালো মনের একজন মানুষ। সে লেখাপড়াতেও ভাল্ োস্বাভাবিক ছাত্রীদের মতোই নিয়মিত স্কুলের পড়া বুঝিয়ে দেয় ক্লাসে।
বাবা ফরমান আলীর সাথে কথা বলতে গিয়েই তার চোখ বেয়ে পানি ঝরতে থাকে। কান্নাজরিড় গলায় বলেন, মেয়েকে আনা নেয়া এবং তার কাজ করে দেয়াতে কোনো কষ্ট নেই। আল্লাহ যেনো মেয়ের সদিচ্ছাকে পূরণ করেন এটাই দোয়া।
গাগলা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউনূছ আলী বলেন, মনি অনেক মেধাবী ছাত্রী সে জেএসসিতেও আমাদের বিদ্যালয় থেকে ভালো ফলাফল করেছে।
কেন্দ্র সচিব, নাগেশ্বরী আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, আমি যতবার হল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম, লক্ষ্য করেছি মনি বেশ মনোযোগী হয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখছে। আর সে যেহেতু প্রতিবন্ধী তাই নিয়মানুযায়ী ওর জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট লেখার সুযোগ দেয়া হয়েছে।