মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা পর্যন্ত সব সাবজেক্টেই ছেলে মেয়েরা পড়তে পারে। মাধ্যমিকে কোন বিভাগ থাকার প্রয়োজন নেই, মাধ্যমিকে ক্লাস নাইন থেকে কে কোন বিভাগে যাবে সেটা ভাগ করে দেওয়া হয়। এসএসসি’র পরে গিয়ে যদি বিভক্তি হয় সেটা ভালো। তাহলে অন্তত মেধা বিকাশের একটা সুযোগ পায়”।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “আমেরিকা সহ পৃথিবীর অনেক দেশে এটা নাই। কাজেই আমাদের দেশে এটা না থাকাই ভালো। আমার মনে হয়, এই ভাগটা থাকার কোনো দরকার নাই।”
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত বুধবার পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের সর্বোচ্চ নম্বর/সিজিপিএ প্রাপ্তদের হাতে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৮’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এ আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ১৭২ জন কৃতী শিক্ষার্থীকে ২০১৮ ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ দেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তিনির্ভর ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “এখন তো সব সাবজেক্টই বিজ্ঞানভিত্তিক। বিজ্ঞানের বাইরে কিছু না। আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলছি। এখন থেকে আমাদের ছেলেমেয়েদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কারণ প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠছে, সেটা আরও বিকশিত হবে। এখানে আমাদের জনশক্তি লাগবেই।”
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার প্রসার হলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশকেও সহযোগিতা করতে পারবে বলেও মন্তব্য করেন তিনিবাংলাদেশের মানুষকে যদি কারিগরি শিক্ষা থেকে শুরু করে সব ধরনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা যদি দিতে পারি, আমরা অন্য দেশগুলোকে সাহায্য করতে পারব, অন্য দেশকে সহযোগিতা করতে পার। সেই অবস্থা আমরা তৈরি করতে পারব এবং আমাদের সেটাই করতে হবে। সেভাবে আমরা কাজ করতে চাই। ”
প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষা প্রসারের জন্য স্কুল, কলেজ নির্মাণের কাজ সরকার দ্রুত বাস্তবায়ন করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য যে জিনিস দরকার, সেটা আমরা করে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে আমাদে দেশের জনগোষ্ঠী কখনও অবহেলিত থাকবে না, সকলে শিক্ষিত হবে। সেভাবেই আমরা তাদের গড়ে তুলছি।
“কর্মক্ষেত্রে কাজ করার যার যে দক্ষতা আছে, সে সেভাবেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। সে সুযোগটা সৃষ্টি করে দেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।”
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষায় জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষা আধুনিক জগতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হয়ত ভবিষ্যতে নতুন নতুন প্রযুক্তি আসবে। যখনই যেটা আসবে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যেন সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে সেভাবে আমরা গড়ে তুলতে চাই।”
সমন্বিত শিক্ষা পদ্ধতিতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও পিছিয়ে থাকবে না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
“আমরা কাউকে অবহেলা করতে চাই না। মাদ্রাসাতেও কিন্তু অনার্স কোর্স চালু হয়েছে। সেখানে প্রযুক্তি শিক্ষা রয়েছে। এমনকি আমাদের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছি, দাওরায়ে হাদিস পর্যায়ে আমরা মাস্টার্স মান দিয়েছি। এ কারণে তাদেরকেও আমরা সমন্বিত শিক্ষার মধ্যে নিয়ে আসতে চাই, একই ডিসিপ্লিনে নিয়ে আসতে চাই।
“তারা তাদের মত পড়বে। সাথে সাথে আমাদের দৈনন্দিন যে শিক্ষার দরকার হয়ৃ কর্মক্ষেত্রে চাকরি পেতে, বা কাজ পেতে যে শিক্ষার দরকার হয়, সে শিক্ষা তারা গ্রহণ করবে। সেখানেও মেধাবী ছেলেপেলে আছে। তাদেরকে কেন আমরা অবহেলা করব? তাদেরকেও নিয়ে এসেছি।”
প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরিকমিশন সম্প্রসারনের প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের পরিধি আরও বৃদ্ধি করা, লোকবল বৃদ্ধি করা, দক্ষতা বৃদ্ধি করা, আমরা যে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি সেটা যেন ভালোভাবে নজরদারি করতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি এবং নেবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আমাদের মঞ্জুরী কমিশন যেন খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এটা আমাদের চাওয়া। বিশেষ করে আমাদের চাওয়া ,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত একটা অভিন্ন নীতিমালা করার । কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কত শিক্ষার্থী থাকবে । কারণ ঢালাওভাবে ভর্তি করলে পড়াশোনা কীভাবে ঠিকমতো হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যাতে মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারে সেটি নিশ্চিত করা। আর এখন এটা খুব কঠিন কাজ না।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ।