কৃষক শামছুল ইসলাম বয়স ৬২ বছর ছুই ছুই। তিনি উপলব্ধি করেছেন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদিত খাদ্য ও সবজি খেয়ে প্রতিনিয়ত নানা জটিল এবং দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। এটা থেকে মানুষকে বাঁচাতে যেন যুদ্ধে নেমেছেন তিনি। কয়েক বছর ধরে গ্রামের কৃষকদের ঔষধি বৃক্ষ রোপনের শর্তে বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের ওষুধি গাছ ও পুদিনা পাতার গাছ বিলি করছেন। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে লাগিয়েছেন ওষুধী গুন সমৃদ্ধ পুদিনা গাছ। কালীগঞ্জ জেলায় এটাই প্রথম কেউ বাণিজ্যিক ভাবে পুদিনার চাষ। আর এই চাষে সে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। কৃষক শামছুল ইসলামের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর গ্রামে।
শামছুল ইসলাম জানান, বলরামপুর গ্রামের উম্মত আলীর নিকট থেকে বছরে ৮ হাজার টাকার চুক্তিতে মাঠের মধ্যে ২৫ শতক বর্গা নিয়েছেন। জমির এক পাশে ১০ শতক জমিতে কম্পোষ্ট সার উৎপাদন কারখানা। আর বাকি ১৫ শতক জমিতে বানিজ্যিক ভাবে চাষ করেছেন জৈব পদ্ধতিতে ঔষধী বৃক্ষ পুদিনাসহ বিভিন্ন সবজির। পুদিনা ক্ষেতের অন্যপাশে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা হয়েছে লাউ, ঢেড়শ,পুইশাক,ওল,বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির। আর ক্ষেতের চারপাশে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন রকমের ঔষধী গাছের। গত ৩বছর ধরে সে এই পুদিনা চাষ করছেন। স্থানীয় ভাবে পুদিনা পাতার তেমন চাহিদা না থাকলেও যশোর,ঢাকার ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে পুদিনা পাতা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সামসুল ইসলাম জানান, পুদিনা পাতা বারো মাসই হয়। বছরে কমপক্ষে ৫ বার পুদিনা পাতা বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি ২শ থেকে ৩শ টাকায় বিক্রি করা হয়। এছাড়াও স্থানীয় বাজারে ১শ গ্রাম পুদিনা পাতা ২০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। এক বছরে ১৫ শতক জমি থেকে প্রায় ১৫ হাজার টাকার পুদিনা বিক্রি করেছেন তিনি। সামসুল ইসলাম আরো জানান, তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের মাঝে পুদিনা পাতার গুনাগুন জানিয়ে বিনামুল্যে চারা বিতরন করছেন। তিনি বলেন, কারো বাড়িতে যদি একটি টপে পুদিনার গাছ থাকে আর যদি সে প্রতিদিন একটি করে পুদিনা পাতা খাই তাহলে কোন দিন গ্যাস্টিকের ওসুধ খেতে হবে না।
গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক রেজাউল ইসলাম জানান,শামছুল তাদের গ্রামের একজন জৈবচাষী। এ বৃদ্ধ মানুষটি নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষকদেরকে বুঝিয়ে থাকেন। অনেক কৃষককে তিনি বিনামূল্যে কেঁচো দিয়ে পালন করে জৈব সার উৎপাদনের মাধ্যমে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য প্রতিনিয়ত উৎসাহিত করে চলেছেন। যা আমরা অনেকে সমাজের সচেতন মানুষ হয়েও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের জন্য কিছু করতে পারছিনা। তিনি আরো বলেন, গ্রাম্য সমাজের মানুষের বিরাট একটা অংশ এখনও ঔষধী গাছ গাছড়ার ভেষজ চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল। এ চিকিৎসায় ছোট লতা জাতীয় গাছ হলেও পুদিনার নাম সকলের কাছে অতি চেনা। কারণ এ গাছে রয়েছে নানা ঔষধী গুণ। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ঔষধী বৃক্ষ পুদিনার বানিজ্যিক ভাবে চাষ করেছেন তিনি। বাজারে এ গাছের চাহিদা ও দাম দুটিই বেশি। এছাড়াও তার রয়েছে বাসক,কালমেঘীসহ বিভিন্ন ঔষধী বৃক্ষ পুদিনা বিক্রি করে একদিকে তার পয়সা আসছে অন্যদিকে যারা বাড়িতে লাগাতে চাচ্ছেন তাদের প্রত্যেক কে বিনামূল্যে চার পাঁচটি করে লতা দিয়ে দিচ্ছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, বলরামপুর গ্রামের কৃষক শামছুলের কাজ চোখে পড়ার মত। তিনি নিজে পুদিনার বানিজ্যিক ভাবে চাষ করেছেন। এ কর্মকর্তা বলেন, নিজে একটি ভেষজ চিকিৎসা বইয়ে দেখেছেন পুদিনা পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতায় ভালো কাজ করে। এছাড়াও এ্যাজমা নিয়ন্ত্রন,শরীরের ব্যাথা দূর করা, গ্যাস্টিক রোগে,স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করা,ক্যান্সার প্রতিরোধসহ নানা রোগ নিরাময়ে কাজ করে পুদিনা। এছাড়াও বিভিন্ন নামি দামি হোটেলে বোরহানী তৈরি করতে পুদিনা পাতার প্রয়োজন হয়। ফলে বাজারে এর চাহিদা অনেক। তিনি শুনেছেন অসুস্থতার জন্য কেউ চাইলে অথবা বাড়িতে কেউ লাগাতে চাইলে শামছুল বিনামূল্যে দিয়ে থাকেন। অথচ বিক্রি করলে টাকা আসতো। এমন উদার মন মানষিকতা এবং বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের কৃষকদের মাঝে প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য শামছুলকে ধন্যবাদ দিতে হয়।