বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন নারী ও দুজন পুরুষ। এদের মধ্যে দুজন ইতালিফেরত। এদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এ তিনজন ছাড়াও আরও দুজনকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে রেখে লক্ষণ-উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তারা বর্তমানে ভালো আছেন। এ মুহূর্তেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে সর্বোচ্চ সতর্কতা থাকাটা জরুরি। কেননা করোনা ভাইরাস সারাবিশে^ ছড়িয়ে পড়েছে এবং বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে এপর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮২৮ জনে। আর চীনে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১১৯ জনে। দেশটিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮০ হাজার ৭৩৫ জন। বিশ্বজুড়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৪৮ জন। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৬২ হাজার ২৭৬ জন।
করোনাভাইরাসের বিস্তার এবং প্রাণহানি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। মানুষ থেকে মানুষের দেহে এই ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় সে বিষয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। তবে সাধারণ কিছু সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এসব সতর্কতা অবলম্বন করলে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এগুলোর মধ্যে গণপরিবহন এড়িয়ে চলা কিংবা সতর্কতার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাস, ট্রেন কিংবা অন্য যে কোন ধরণের পরিবহনের হাতল কিংবা আসনে করোনাভাইরাস থাকতে পারে। সেজন্য যে কোন পরিবহনে চলাফেরার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা এবং সেখান থেকে নেমে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া যেসব জায়গায় মানুষ বেশি জড়ো হয় সেসব স্থান এড়িয়ে চলা কিংবা বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে খেলাধুলার স্থান, সিনেমা হল থেকে শুরু করে ধর্মীয় স্থানও রয়েছে। বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে জুমার নামাজের সময় বাড়ি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সৌদি আরব ইতোমধ্যেই ওমরাহ বন্ধ করেছে। তাই বাংলাদেশে যেহেতু করোনাভাইরাস দেখা গেছে সেহেতু এবিষয়ে সতর্কতা জরুরি। আমরা মনে করি অযথা আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা থাকলে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহ, লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে সরাসরি জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সেক্ষেত্রে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে ফোন করলে বিদেশে কিংবা দেশের বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে তারা। যারা আক্রান্ত দেশ থেকে ভ্রমণ করে এসেছেন এবং যাদের মধ্যে করোনার লক্ষণ জ¦র, কাশি, গলাব্যথা বা শ্বাসকষ্টের উপসর্গ রয়েছে, তারা আইইডিসিআর’র হটলাইনে যোগাযোগ করবেন অথবা নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে যাবেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, কেউ অসুস্থতা বোধ করলে বাইরে না যাওয়া। বাড়িতে যদি আইসোলেশন নিশ্চিত করতে পারে তাহলে বাড়িতেই চিকিৎসা করা সম্ভব। সুতরাং আমরা সাবধান হব, আতঙ্কিত নয়।