আশি ও নব্বইয়ের দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিএনপি রাজনীতির অন্যতম প্রাণপুরুষ নাজিম উদ্দিন আহমেদ আর নেই (ইন্নালিল্লাহি....রাজেউন)। শুক্রবার রাত আনুমানিক ১০.৩০ মিনিটে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধ্যক্যজনিত রোগে নিজের জন্মভূমি সিলেটে শয্যাশায়ি ছিলেন প্রবীন এই নেতা।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৪ বছর এবং তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র ও তিন কন্যা সন্তান ও নাতি নাতনিসহ অসংখ্যা গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মরহুম নাজিম উদ্দিন আহমেদ এর জৈষ্ঠপুত্র ও রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বাবা দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শুক্রবার রাতে সিলেটে আমাদের বাসায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। পিতার মৃত্যুতে শোকাহত মামুন, পিতার জন্য রাঙ্গামাটিবাসির কাছে দোয়া কামনা করেছেন। নাজিম উদ্দিন আহমেদ এর মৃত্যুতে শোকাহত বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাঙ্গামাটিতে অবস্থানকারি নেতাকর্মীরা নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুর খবর শুনে সিলেটে তার বাসায় ছুটে যান এবং মামুনকে সান্তনা জানান।
উল্লেখ, ১৯৭৮ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে পার্বত্য জনপদে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন নাজিউদ্দিম আহমেদ। পেশায় ঠিকাদার এই নেতা প্রথমে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। পরে সেক্রেটারি এবং সর্বশেষ ২০০৮ সাল পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি রাঙ্গামাটি-২৯৯ নং আসনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে কাজ করে গেছেন। পরবর্তীতে তিনি বার্ধ্যক্যজনিত কারণে আস্তে আস্তে রাজনীতি থেকে সড়ে গিয়ে সিলেটে তার নিজ বাস ভবনে অবস্থান করেন।
সিলেটে নাজিম উদ্দিনের অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারসহ রাঙ্গামাটির অসংখ্য বিশিষ্ট জনেরা সিলেটে অসুস্থ এই নেতাকে দেখতে গিয়েছিলেন বিভিন্ন সময়। সিলেটের আঞ্চলিক উচ্চারণে কথা বলা, সবার সাথে সহজে মিশতে পারা এবং দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ এই নেতা রাঙ্গামাটিতে শুধু বিএনপি’ই নয়, সব শ্রেণী পেশার ও মতের মানুষের কাছে সর্বজন শ্রদ্ধেয় হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। সব বয়সের বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে ‘চাচা’ নামেই ডাকতেন ভালোবেসে। তিনি রাজনীতি ছাড়াও তবলছড়ির শাহ উচ্চ বিদ্যালয়, ডিএসবি কলোনী জামে মসজিদ, হযরত আব্দুল ফকির মাজার, কবরস্থান পরিচালনা কমিটি, রাঙ্গামাটি রেড ক্রিসেট ইউনিটের আজীবন সদস্যসহ রাঙ্গামাটির বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের সাথেও জড়িত ছিলেন বিভিন্ন সময়। রাজনীতির পাশাপাশি ‘জালালাবাদ কন্সট্রাকশন’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করেছেন তিনি।
এদিকে নাজিমউদ্দিন আহমেদ এর মৃত্যুতে রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপি পরিবারে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, জাসাস, কৃষকদল, তাঁতীদল, স্বেচ্ছাসেবকদলসহ বিভিন্ন সংগঠন মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাৎ কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।