চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় ফেসবুকের মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এক প্রকৌশলীকে আটক করেছে পুলিশ। প্রকৌশলী আবু বক্কর রেজা তার ফেসবুক আইডি থেকে ‘চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত’ উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেন। কিন্তু নানাভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর কোনো অস্তিত্ব পায়নি পুলিশ। প্রকৌশলী আবু বক্কর রেজার এই পোস্ট নিয়ে স্থানীয়ভাবে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। অন্যদিকে, নেত্রকোনায় করোনা ভাইরাসের কথিত প্রতিষেধক বিক্রির কথা বলে প্রতারণার দায়ে দুই জনকে দুই বছর করে কারাদ- দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কেন্দুয়া উপজেলার গন্ডা ইউনিয়নে মাইকিং করে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক বিক্রি করার প্রচার চালায় দ-িত রুবেল মিয়া। পরে রুবেল ও কথিত ডাক্তার পরিচয়দানকারী রাশেদুল ইসলাম করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক নামে কিছু ওষুধ বিক্রি করছিল প্রতারণার মাধ্যমে। খবর পেয়ে তাদের ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছে থাকা আয়ুর্বেদ জাতীয় কিছু ওষুধ জব্দ করা হয়। পরে আটকদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক দুই জনকে দুই বছর করে কারাদ- দেন।
এদিকে, করোনাভাইরাস নিয়ে সরকার রাজনীতি করছে দাবি করে তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। তাদের দাবি, করোনা ভাইরাস যদি ব্যাপক আকার ধারণ করে, তাহলে সরকার সম্পূর্ণভাবে এটা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হবে কারণ সরকারের করোনার ব্যাপারে প্রথমে উদাসীন ছিলেন, এখন তারা যেটা করছে তা পত্রিকার কাগজ বিজ্ঞাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বলছে, করোনা ভাইরাস নিয়ে বিএনপি ‘নিকৃষ্ট’ রাজনীতি করছে। তাদের দাবি, বিএনপির রাজনীতি করার কিছু নেই বলে তারা সব বিষয় নিয়ে রাজনীতি করে। করোনাভাইরাস প্রস্তুতি শুরু হওয়ার পর থেকে সরকারের ঘাটতি ছিলো না, প্রাথমিক অবস্থায় কিছুকিছু যন্ত্রপাতির সমস্যা থাকলেও পরে সেটার সমাধান হয়ে গেছে। এখন প্রস্তুতিতে কোনো কিছুরই ঘাটতি নেই এবং সরকারের পক্ষ থেকে ‘সর্বাত্মক ব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছে।
প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মতপার্থক্য নতুন কিছু নয়। তবে করোনা ভাইরাস নিয়ে একপক্ষের অন্য পক্ষের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্বের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কেউ বলতে পারবে না যে -আমি আক্রান্ত হবো না। আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে খুব দ্রুত ছড়ানো সম্ভব। তাই এই ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবে না। যত রকম সর্তকতা অবলম্বন করা যায়, তত রকমের সর্তকতাই অবলম্বন করতে হবে। করোনা ভাইরাস একটি বৈশ্বিক সংকট। এটি নিয়ে কোনও ধরণের রাজনীতি না করে সবার মধ্যে ঐক্য থাকা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, ভাইরাস-মহামারী এগুলো কোনও দল-মত যাচাই করে না। তাই করোনা নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ, বিরুদ্ধ বক্তব্য দেয়া বাদ দিতে হবে। বরং সবার মতামত এবং পরামর্শ নিয়ে প্রতিরোধমূলক সর্বোচ্চ ব্যবস্থ নিতে হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও নেত্রকোণায় যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্খিত। আর কা-জ্ঞানহীন ও হুজুগে জাতি যে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কাউকে পিটিয়ে মারবে না সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। করোনা নিয়ে সারাবিশ^ যখন উদ্বিগ্ন, এবং করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য মরিয়া তখন বাংলাদেশে এর ভুয়া প্রতিষেধক বিক্রি প্রমাণ করে জাতি হিসেবে আমরা কতটা সুযোগসন্ধানী। কিছুদিন ধরেই করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক না ছড়াতে সরকারি বিভিন্ন দফতর থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তারপরও গুজব ছড়ানো বা ভুয়া প্রতিষেধক বিক্রির মতো ঘটনা ঘটা হতাশাব্যঞ্জক। তাই সবকিছুকে ছাপিয়ে আমাদের সতর্ক থাকা খুব জরুরি। বিশ^ব্যাপী যেভাবে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, আমরা অনেকটা সময় পেয়েছি, আমাদের এখানে যেন সেভাবে সঙ্কট তৈরি না হয়। আমাদের দেশে যাতে এই রোগটি বিস্তৃত হতে না পারে, সেজন্য যে সকলের সচেতনতা দরকার। তাই করোনা ভাইরাস নিয়ে মিথ্যা তথ্য বা গুজব যেন ছড়াতে না পারে এবং এটি নিয়ে রাজনৈতিক বিষোদগার, কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হওয়া দরকার।