ঘূর্ণিঝড় বুলবুল চলে গেলেও শঙ্কা কাটেনি উপকুলীয় জনপদ খুলনার কয়রা উপজেলার নদী পাড়ে বসবাসরত মানুষের। নদীতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে যেকোনো মুহুর্তে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে লোনা পানি প্রবেশ করতে পারে -এমনই ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে উপকূলীয় জনপদ কয়রা উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। সম্প্রতি ২নং কয়রা গেটের গোড়ায় ভয়বহ ভাঙনের কবলে পড়েছে। প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, কয়রা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৫৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। যে কোনো মুহুর্তে ঝুঁকিপূর্ণ ঐ বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকায় লোনা পানি প্রবেশ করতে পারে এবং জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
শীত মৌসুম শেষ, এখন নিয়মিত পানি বৃদ্ধি পাবে। নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কয়েকটি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে এলাকবাসী। মূলত নদী তীরবর্তী এলাকা হওয়ায় বাঁধে ব্যাপক ধস নেমেছে। সাধারণ মানুষ ভাঙন আতঙ্গে রয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো সংস্কার করা না হলে বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হতে পারে। পাউবোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাধ সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তাড়াতড়ি কাজ শুরু করা হবে। তবে এই ‘তাড়াতাড়ি’ সময়টি অনির্ধারিত। কয়রার মানুষের জীবন মরণের সঙ্গী পাউবোর বেড়িবাঁধ। উপকূলীয় জনপদের মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ জরুরি।
খুলনার কয়রা এমন একটি জনপদ, যার বুক চিরে কয়রা, শাকবাড়িয়া ও কপোতাক্ষ বয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগর সন্নিহিত হওয়ার কারণে এই তিনটি নদীই প্রমত্তা, দেশের আর দশটা নদীর মতো মরে যেতে বসেনি। আর এই তিন নদী কয়রার ভূখ-ে এমনভাবে প্রবহমান, যাতে কিছু অঞ্চলের মানুষের জীবনে বন্যা সংরক্ষণ বাঁধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বন্যা হলেই তারা ভয়ে থাকে, তাও নয়। কয়রা উপজেলাবাসীর জীবনের আরেক বিপদ হলো বড় জোয়ার। এই জোয়ার যখন অনেক বড় আকারে আঘাত হানে, তখন তা কখনো বন্যার ক্ষতিকে হার মানাতে পারে। সুতরাং কয়রায় শক্তিশালী, টেকসই এবং যথপোযুক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়টি মানুষের জানমাল রক্ষার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশের অনেক সাধারণ এলাকায় যে আটপৌরে দৃষ্টিভঙ্গিতে বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কারকে দেখা হয়, তার থেকে অনেক বেশি মাত্রায় কয়রার মতো উপজেলার বেড়িবাঁধ সংস্কারকে দেখতে হবে। অথচ সেই অগ্রাধিকার বা সংবেদনশীলতা অনুপস্থিত। খুলনার প্রশাসনের উচিত হবে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা। এবং খুলনা অঞ্চলের অবকাঠামোগত পরিকল্পনার মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা।