জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০১৯ সালে প্রায় ৭ লাখ অভিবাসী দেশের বাইরে গেছেন। যেসব অভিবাসী অবৈধ পথে দেশের বাইরে যাচ্ছেন, তারা পাচারকারীদের হাতে শোষণ ও নিপীড়নের ঝুঁকির মুখে পড়েন। সারাবিশ্বে বর্তমানে আধুনিক দাসত্বের শিকার আনুমানিক চার কোটির বেশি মানুষ এবং জোরপূর্বক শ্রমের সর্বোচ্চ বিস্তার এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিদ্যমান। একদিকে যেমন মানব-পাচারের শিকার ও ভুক্তোভোগীদের সংখ্যার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই, অপরদিকে বাংলাদেশে মানব-পাচারের অভিযোগে প্রায় ৪ হজার ৭০০ মামলা বিচার প্রক্রিয়া শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ থেকে মানব-পাচার প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা সৃষ্টিতে কাজ করার লক্ষ্যে ৫-বছর মেয়াদি একটি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বাংলাদেশ এবং কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা)। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে আইওএম। বৃহস্পতিবার আইওএম’র ঢাকার কার্যালয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান ও বাংলাদেশ জাতিসংঘের অভিবাসনবিষয়ক নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক গিওরগি গিগাওরি এবং কোইকা বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইয়ংহা ডো।
‘কোইকা-আইওএম কম্প্রিহেনসিভ প্রোগ্রাম টু কমব্যাট হিউম্যান ট্রাফিকিং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ প্রকল্প তিনটি ক্ষেত্রে কাজ করবে। এগুলো হলো- পাচারকারীদের বিচার নিশ্চিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগের দক্ষতা বৃদ্ধি, মানবপাচারে ক্ষতিগ্রস্তদের টেকসই পুনরেকত্রীকরণে সহায়তা প্রদান এবং ঢাকা, যশোর, সাতক্ষীরা ও কক্সবাজারসহ সারাদেশে ১০ লাখ মানুষের মাঝে পাচারের ঝুঁকি ও নিরাপদ অভিবাসনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি। মানবপাচার একটি বৈশ্বিক ঘটনা এবং বাংলাদেশের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। নানা কারণে বিপদাপন্ন বাংলাদেশি শিশু, নারী ও পুরুষ মানবপাচারের শিকার হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে যৌন নির্যাতন, জোরপূর্বক শ্রম, প্রতারণামূলক বিবাহ, শোষণমূলক শিশু শ্রম এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বাণিজ্য। ২০১২ সালে পাস হওয়া মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বিচারবিভাগ, আইন প্রণয়নকারী সংস্থা, মন্ত্রণালয় এবং এর বিভাগগুলোর দক্ষতা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করা হবে। মানবপাচারের শিকার ৮০০ ব্যক্তিকে আশ্রয়, পুনপ্রতিষ্ঠিতকরণ সহায়তা প্রদানের মধ্য দিয়ে তাদের বিপদাপন্নতা হ্রাস ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ৫ বছর কাজ করবে প্রকল্পটি। পুনরেকত্রীকরণ সহায়তার মধ্যে রয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষণ, জীবন-দক্ষতা প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং ক্ষুদ্র-উদ্যোগ উন্নয়নে সহায়তা প্রদান। প্রকল্পটি তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী এবং নাগরিক সমাজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে। যাতে করে তারা পাচারের শিকার ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও নির্দেশ করতে পারে। পাচারের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের শনাক্ত ও সহায়তা প্রদান এবং মানব পাচারকারীদের গ্রেফতার ও বিচারকার্যে দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে আইওএম ২,১০০ এর বেশি কর্মকর্তা। কক্সবাজার, যশোর, সাতক্ষীরা ও ঢাকায় আদালত কর্তৃক চিহ্নিত ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা সেবার ক্ষেত্রে রেফারেল পরামর্শ প্রদান করবে আইওএম। মানবপাচার অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের সহায়তা প্রদানে একটি মধ্যবর্তী স্ট্যান্ডার্ড আবাসন তৈরি করা হবে এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে। মানবপাচার একটি মানবতাবিরোধী ঘৃণ্য অপরাধ। আমরা আশা করি, এ প্রকল্পের প্রতিরোধ ও সহায়তামূলক পদক্ষেপ বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার রোধে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার মধ্য দিয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), বিশেষ করে লক্ষ্যমাত্রা ৫ (জেন্ডার সমতা), এবং লক্ষ্যমাত্রা ১৬ (শান্তি, ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছ-জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান) অর্জনে সহায়তা করবে।