প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দিশেহারা অবস্থায় দেশের এয়ারলাইনসগুলো। কারণ করোনার বিস্তার রোধে বিশ^ব্যাপী একের পর এক স্থগিত হচ্ছে বিমান চলাচল। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের এয়ারলাইনসগুলোর জন্য মধ্যপ্রাচ্যের লাভজনক রুটগুলো ক্রমেই বন্ধ হয়ে পড়ছে। এমনকি বন্ধ হয়ে গেছে মালয়েশিয়া ও ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচলও। পাশাপাশি যাত্রী না থাকায় অভ্যন্তরীণ রুটেও এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট সংখ্যা কমাতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থায় এয়ারলাইনসগুলো বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত চার্জ মওকুফসহ সরকারি সহায়তার আশা করছে। এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এদেশের এয়ারলাইনসগুলোর রুট করোনা ভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলোয় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে ফ্লাইট শিডিউল কাট-ছাঁট ও ওমরাহ হজ বন্ধ হওয়ায় বিপুল ক্ষতি গুনতে হচ্ছে। মূলত প্রবাসী শ্রমিক ও হজকেন্দ্রিক যাতায়াতকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যের রুটই দেশের এয়ারলাইনসগুলোর সবচেয়ে লাভজনক গন্তব্য। মধ্যপ্রাচ্যের কাতার, সৌদি আরব ও কুয়েত করোনা ভাইরাসের কারণে বিমান চলাচল স্থগিত রাখায় দেশী সব এয়ারলাইনস সংস্থার ওই রুটে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া কলকাতা, দিল্লী, চেন্নাই রুটও বন্ধ। মালয়েশিয়া রুটের ফ্লাইটও বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় এয়ারলাইনসগুলো দৈনন্দিন ব্যয় সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ১৭টি আন্তর্জাতিক রুটের মধ্যে এখন চালু আছে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, লন্ডন, ম্যানচেস্টার, দুবাই ও আবুধাবির ফ্লাইট। বিমান বন্ধ হওয়া ১১টি গন্তব্যে সাপ্তাহিক অন্তত ১৬৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করতো। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ তিনটি রুটেও ২০টি ফ্লাইট কমিয়ে আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে যাত্রী কমে যাওয়ায় সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে তিনটি অভ্যন্তরীণ রুট।
সূত্র আরো জানায়, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিদেশীদের ওমরাহ পালনে স্থগিতাদেশ দেয় সৌদি আরব। ফলে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশী ওমরাহর জন্য ভিসা করেও যেতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে ১ মার্চ সৌদির ধর্ম মন্ত্রণালয় ভিসা ফি ফেরত দেয়ার ঘোষণা দেয়। তবে ওমরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছে ওই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা এয়ারলাইনসগুলো। বিশেষ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ও এয়ার অ্যারাবিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বন্ধ হওয়া চারটি রুটে ৩৪টি ফ্লাইট চলাচল করতো। চায়না গোয়াংজুতেও ফ্লাইট কমেছে ৮টি। বন্ধ হয়ে গেছে কুয়ালালামপুর রুটের সাপ্তাহিক ৭টি ফ্লাইট। নভোএয়ারের ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে প্রতিদিন দুটি ফ্লাইট চালাতো। কিন্তু তা এখন বন্ধ। আর রিজেন্ট এয়ারওয়েজকে চারটি আন্তর্জাতিক রুটের মধ্যে কলকাতা, দোহা ও কুয়ালালামপুরের ফ্লাইট বন্ধ করতে হয়েছে।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের উপ-মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম জানান, এয়ারলাইনসগুলোর যে চার্জগুলো আছে; বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সরকার যদি ওই চার্জগুলো মওকুফ করে, তবে এয়ারলাইনসের পক্ষে এ মুহূর্তে সাসটেইন করা সম্ভব হবে। পরিস্থিতি যদি আর কিছুদিন এভাবে চলে, তাহলে বিমান সংস্থাগুলোর বড় ধরনের ক্ষতি মোকাবেলা করতে হবে।
একই প্রসঙ্গে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্রধান নির্বাহী ইমরান আসিফ জানান, ভাইরাসের কারণে নিষেধাজ্ঞা এবং যাত্রী কমে যাওয়ায় বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। আপাতত পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হলেও এটি যদি দীর্ঘায়িত হয়, তবে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোকাব্বির হোসেন জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি যাত্রী কম থাকায় অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটও কমিয়ে আনতে হচ্ছে। বর্তমানে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণরূপে অনির্দিষ্ট। পরিস্থিতির উন্নতি ছাড়া এখানে আর কোনো বিকল্প নেই।