সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, নারী নির্যাতন, অপকীর্তি, উন্নয়ন কাজে লুটপাট, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা প্রজাতন্ত্রের সেবকদের অশোভন আচরণ, ভেজাল, রাজনীতির আড়ালে কৃষ্ণকর্ম, তোয়াজ, তোষণ, চাটুকারীতা, চরিত্রহীনতা, নারকীয়তা, পাশবিকতা করোনা ভাইরাসের মতো বেসামাল ও দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে দেখা যায় ১৫ মার্চ রোববার কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুলকে মধ্যরাতে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত ১ বছরের কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তাকে আরডিসির এনকাউন্টারে হত্যার হুমকি, বেধড়ক নাজেহাল ও মারপিটের কথাও জানা যায়। পরবর্তী সময় সাংবাদিকদের দাবীর মুখে আরিফুলকে মুক্তি দেয়া হয়। এরই মধ্যে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন ও আরডিসিকে প্রত্যাহার করা হয় বলে জানা যায়। আরিফুল বর্তমানে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ইতোমধ্যে জেলা উপজেলায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তদারকি চলছে বলে জানা যায় (যুগান্তর ০৫/৩/২০২০ ইং)। যে কোনো ভালো কাজে উৎসাহ ও প্রশংসা যেমন কাজের গতি বৃদ্ধি পায়, তেমনি কোনো ভালো কাজে নিরোৎসাহে যেমনি ভাটা পড়ে তেমনি কাজের গতিতেও স্থবিরতা নেমে আসে। প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতি বিরোধী আপোষহীন উচ্ছাস, দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের প্রত্যয় জনমনে যথেষ্ট আশার সঞ্চার করেছে। যদি কোনো কারণে তাতে স্থবিরতা নেমে আসে দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ, অনিয়ম, দুর্নীতি ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে গুণগত পরিবর্তন না আসে তবে দুর্নীতি লাগামহীন ঘোড়া ও সামুদ্রীক জলোচ্ছাসের মতো বাধাহীনভাবে কোথায় গিয়ে ঠাঁই হয় ইহাই ভাবার বিষয়। এ প্রসঙ্গে বিলিগ্রামের একটি ইংরেজী উক্তি হচ্ছে When wealth is lost, nothing is lost, when health is lost, something is lost, when character is lost, everything is lost. অর্থাৎ চরিত্র নষ্ট হলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। অর্থাৎ দুর্নীতিবাজ কুশীলবদের যেমন কোনো দল নেই, দর্শন নেই, আদর্শ নেই তেমনি তাদের দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ ও চরিত্রও নেই। যে কারণে এ নিবন্ধে বিলিগ্রামের উক্তিটি যোগ করা হয়েছে। একজন চরিত্রহীন মানুষ যেভাবে অন্যায়, অবিচার, অনিয়ম ও ঘুষ দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত তেমনিভাবে শত প্রতিকুলতা ও অভাব, অনটনের মধ্যেও একজন চরিত্রবান মানুষ সেদিকে প্রলুব্ধ হয় না।
যার রয়েছে অসংখ্য উপমা ও উদাহরণ। ২০০৭ সালে দুদক চেয়ারম্যান সাবেক সেনাপ্রধান লেঃ জেঃ (অবঃ) হাসান মশহুদ চৌধুরী “এখনই সময়” থীম নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লাগাম টেনে ধরতে চাইলেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লাগামকে আয়ত্বে আনতে না পেরে বিদায় বেলায় বলে গেছেন “আই এ্যাম টায়ারড, আন এব্যুল এন্ড আনডান” অর্থাৎ আমি ক্লান্ত, শ্রান্ত, অসমর্থ ও অপারগ। কিন্তু বর্তমান দুদুক চেয়ারম্যান হয়তো অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ৫টি কাজ করেছেন (ক) দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ জানাতে ১০৬ কমপ্লিন কোড চালু (খ) দুদকের ভেতরে দুর্নীতিবাজদের বিচারের ব্যবস্থা (গ) দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিতে না জড়ানোর ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন (ঘ) প্রতিটি জেলা উপজেলায় দুর্নীতি তদারকি ও নজরদারির
জন্য দুদকের গোয়েন্দা তদারকি ও নজরদারির জন্য কাউন্টার ইন্টিলিজ্যান্স গঠন (ঙ) গোয়েন্দা তদারকির মাধ্যমে জেলা উপজেলায় দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রণয়ন।
দুর্নীতি একটি সর্বগ্রাসী বিষফোঁড়া ও গ্যাংরিন। ব্রিটিশের ১৯৬ বছর, পাকিস্তানিদের ২৪ বছর ও বাংলাদেশ সৃষ্টির ৪৯ বছরের ইতিহাসে দুর্নীতি একটি ভয়াবহ ঘাতক হিসেবে পরিগণিত। অর্থাৎ ২৬৯ বছরের দুর্নীতির ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ঘাতক দুর্নীতি তো নির্মূল হয়নি বরং ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। সে জন্য কোনো আমলের সরকারকে যেমন এককভাবে সাধুবাদ দেয়া যায় না তেমনি কোনো আমলের সরকারকে এককভাবে দোষারোপের সুযোগও পরাহত। পাকিস্তানের সেনাশাসক আইয়ুব খান, ইস্কান্দর মির্জার কাছ থেকে বন্দুকের নলের মাধ্যমে ১৯৫৮ সালে ক্ষমতা নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রক্লাম্যাশন (ফরমান) জারী করলেও পরবর্তী সময় একনায়ক আইয়ুব খানের মন্ত্রী পরিষদে দুর্নীতিবাজ অনেকেরই স্থান হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এমন উদাহরণ, দৃষ্টান্ত ও উপমার কমতি থাকেনি। মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনী সবকিছু লন্ডভন্ড, হত্যা, পাশবিক অত্যাচার, লুন্ঠনসহ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে গেছে। সোনার বাংলাকে শ্মশানখলা বানিয়ে গেছে। দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে গেছে। তবে বিভিন্ন পরিসরে কিছু দুর্নীতিবাজ রেখে গেছে। প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক কুশীলব, ব্যাংক, বীমা ও সরকারি বেসরকারি পর্ষদে হাজার, হাজার কোটি টাকার অনিয়ম, দুর্নীতি, আত্মসাৎ, লুটপাটের চিত্র দেখলে শরীর শিহড়িয়ে না ওঠার কথা নয়। এসব লাগামহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির তালিকা এত বড় হয়েছে যা নিবন্ধের সংক্ষিপ্ত কলেবরে এসব কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করলে হয়তো অন্য কিছু লেখার সুযোগই হয়তো থাকবে না। যে কারণে দুর্নীতির সাথে সম্পর্কিত গডফাদার, নাটের গুরু ও তল্পীবাহকদের নাম, পরিচয় ও পদবী তুলে ধরা যায়নি।
মরা গরুর ঘ্রান পেলে তা ভক্ষণ করার জন্য শকুনের দল যেমন এসে ঘিরে ধরে তেমনি যেখানে লুটপাট ও ক্ষমতার গন্ধ থাকে দুর্নীতিবাজরা শকুনের মতো সেখানে এসে হরহামেশা এসে ভীড় জমায়। যদিও দুর্নীতিবাজদের সুনির্দিষ্ট কোনো জাত, দল, দর্শন ও আদর্শ নেই। স্বাধীনতার পর লক্ষ্য করলে দেখা যায়, যে দলই ক্ষমতায় এসেছে এ শ্রেণীটা মরা গরু খাওয়া শকুনের মতো দৌড় ঝাঁপ ও ভীড় করতে পিছপা হয়নি। অর্থাৎ মরা গরু খাওয়া শকুনও লুটেপুটে খাওয়া দুর্নীতিবাজদের মধ্যে কোনো ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়নি। আমলাদের মধ্যেও শকুনের মতো মরা গরু ভক্ষণের চিত্রও কম নহে। ওরাও এ সুযোগটা কাজে লাগাতে ভুল করেনি। ভিডিও চিত্র দেখলে দৃশ্যমান হয় এ শ্রেণীটার মধ্যে অনেকেই এরশাদকে খুশী করার জন্য সাফারি পরিধান করে ১৮ দফা ও নতুন বাংলার অনেক মিছিলেও সামিল হয়েছে। আবার ৯০ এর ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতন হলে ওরা ৭ দল ও ১৫ দলের আনন্দ মিছিলের অগ্রভাগে থাকতেও কুন্ঠাবোধ করেনি।
ক্যাসিনো সা¤্রাজ্যের গডফাদার, নাটের গুরু, আশ্রয় প্রশ্রয় দাতা ও নারী, মদ ও অবৈধ বাণিজ্যের কুশীলব পাপিয়াদের নামধাম বিভিন্ন গণমাধ্যম মিডিয়া, ফেসবুক ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় যেমনি মানুষের টনক নড়েছে তেমনিভাবে জেলা উপজেলার দুর্নীতিবাজদের তালিকাও স্বরূপ উন্মোচিত হলে হয়তো অবাক হওয়ার মতো কিছু নাও থাকতে পারে। যতটুকু জানা যায়, এবার দুুদকের তদারকি ও নজরদারি থেকে জেলা উপজেলার দুর্নীতিবাজ কুশীলবদের রেহাই পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। জেলা ও উপজেলায় দুদকের গোয়েন্দা তদারকি ও নজরদারি সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান বলেছেন, “দুর্নীতি করে এলাকায় প্রভাব খাটাবেন সেদিন ভুলে যান” (যুগান্তর ০৫/৩/২০২০ ইং)। সূত্রে আরও জানা যায়, রাজধানীতে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের পর এবার সব জেলা উপজেলায় দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে একটি তালিকা তৈরী করছে দুদক। এতে ক্ষমতার অপব্যবহার, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সাধারণ মানুষকে হয়রানী, অবৈধ দখলদারসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। যেখানে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তারকারী নেতারাও রয়েছে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট। আরও জানা যায়, দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুদকের ২২টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ২২ জন সহকারি পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে গোয়েন্দা তদারকির জন্য ০৩/০৩/২০২০ ইং নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে নজরদারি করার জন্য পরিচালক পদমর্যাদার ৮ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আরও জানা যায়, দুর্নীতিবাজদের পক্ষ নিয়ে যারা রক্ষা করতে চায়, তদন্তে তাদেরকে আনা হবে। এক সপ্তাহে ২৫টি জেলা ও ১৫৫টি উপজেলার দুর্নীতির তালিকা তৈরী করা হয়েছে। দুদকের সমন্বিত জেলা অফিস, স্থানীয় সোর্স, বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট, বিভিন্ন পর্যায় থেকে অভিযোগ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এই ৫ সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এ তালিকা করা হচ্ছে। আরও জানা যায়, জেলা উপজেলায় দুর্নীতিবাজদের যে তালিকা করা হচ্ছে তাতে শুধু দলীয় নেতাই নয়, উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতি এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যের নামও যদি ওঠে আসে, তবে তাদেরও তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। প্রায় এক ডজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা মাধ্যম থেকে দুদকের কাছে দুর্নীতি অনিয়মের তথ্য এসেছে। তাদের মধ্যে ইতোমধ্যে অনেকেরই ব্যাংক হিসাবও তলব করা হয়েছে। সব অভিযোগ একত্র করে ক্যাসিনো কান্ডের বাইরে আরেকটি তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানা যায়। তদোপরি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও এসব দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই। জেলা উপজেলায় গোয়েন্দা তদারকি ও অন্যান্য মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুদকের ইহা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে দেশের মানুষ মনে করে থাকে।
১১/৩/২০২০ ইং বুধবার, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্যা ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের (ডব্লিউ জেপি) আইনের শাসন সূচক ২০২০ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ১২/৩/২০২০ ইং প্রকাশিত হয়ে থাকে। প্রতি বছরই আইনের শাসন পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে থাকে ডব্লিউ জেপি। গত বছর ১২৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১২। আইনের শাসনের শাসন সূচকে ৮টি বিষয় বিবেচনায় আনা হয়ে থকে। এগুলো হচ্ছে (ক) সরকারের ক্ষমতা (খ) দুর্নীতির অনুপস্থিতি (গ) উন্মুক্ত সরকার (ঘ) মৌলিক অধিকার (ঙ) শৃংখলা ও নিরাপত্তা (চ) ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা (ছ) নাগরিক ন্যায় বিচার (জ) ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা। ডব্লিউ জেপির প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ মৌলিক অধিকারের দিক থেকে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১২৮টি দেশের মধ্যে ১২২তম অবস্থান রয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে নিচে। অর্থাৎ ছয় দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। নেপাল এ সূচকে ৭৬তম। বাংলাদেশের পরে রয়েছে তুরস্ক, ভেনিজুয়েলা, মোজাম্বিক, চীন, মিসর ও ইরান। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ১২৮ দেশের মধ্যে ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৭, দুর্নীতির অনুপস্থিতি সূচকে ১০২, উন্মুক্ত সরকার ৯৩, নিয়ন্ত্রনমূলক ক্ষমতার প্রয়োগ ১১১, ফৌজদারি বিচারে ১০৪, দেওয়ানী বিচারে ১১৯, শৃংখলা ও নিরাপত্তায় ১০৩ নম্বর অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে মৌলিক অধিকার সূচকে। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২২। প্রতিবেদনে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকা তিন দেশ হচ্ছে ডেনমার্ক, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড। একেবারে নীচের সূচকে রয়েছে কঙ্গো, কম্বোডিয়া ও ভেনিজুয়েলা। যদিও আইনের শাসনের দিক থেকে বেশী অগ্রগতি হয়েছে ইথিওপিয়ার।
দুর্নীতি সনাক্তে দুদকের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যে ২৫টি জেলা ও ১৫৫টি উপজেলাকে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। ইহা দুদকের একটি ভালো উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত বলে দেশের মানুষ মনে করে থাকে। দুর্নীতিবাজদের কোনো প্রকার ছাড় না দিয়ে এখনই যেমন আইনের আওতায় আনা উচিত তেমনি আরও যে সমস্ত জেলা উপজেলায় দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলদার, ভূমিদস্যু, টি.আর, কাবিখা, কাবিটা খেকো, উন্নয়ন কাজে দুর্নীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সাবরেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি অফিসের দুর্নীতি, অবৈধপন্থায় গাড়ী, বাড়ী, ব্যাংক ব্যালেন্স, কোটি কোটি টাকার মালিক রাজনীতির আড়ালে ক্যাসিনো স¤্রাট, পুলিশের বরখাস্তকৃত ডিআইজি মিজান, পাপিয়াদের মতো মদ, নারী বাণিজ্যের কুশীলব, ক্ষমতার বেধড়ক অপব্যবহারকারী কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক, আরডিসি নাজিম উদ্দিনের সীমাহীন অন্যায়, অপকর্ম, দুর্নীতির স্বরূপ উদঘাটনসহ যথাযথ আইনের মাধ্যমে দুর্নীতি অনিয়মের এখনই লাগাম টেনে ধরা উচিত। অনেকই মনে করে থাকে আর কথা নয়, আশা নয়, দরকার ডাস্টিক এ্যাকশান। স্বাধীনতার ৪৯ বছরে দুর্নীতির রাঘব বোয়াল, শকুনের মতো মরা গরু খাওয়া গড ফাদার, নাটের গুরু, রাজনীতির লেবাসে দুর্নীতি ও প্রজাতন্ত্রের সেবক হয়ে শাসন প্রশাসনের ক্ষমতায় বসে দেশের উন্নয়নেও সীমাহীন নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে। ওদের মুখোশ উন্মোচনসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই জন প্রত্যাশা। আরডিসি নাজিম উদ্দিন যেমনিভাবে সংবাদিক আরিফুল ইসলামকে এনকাউন্টারে হত্যার হুমকি দিয়েছিল, এমন নাজিম উদ্দিন আরও রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের কথাই প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সময় প্রকাশিত হয় না। ওরা যেখানে যে অবস্থাতেই অবস্থান করুক না কে ওরা দেশ, জাতি, সমাজ ও রাষ্ট্রের ঘৃনিত কুশীলব। ওদের যেমন নীতি আদর্শ নেই তেমনি ওদের কোনো দর্শন নেই। ওদের পরিচয় একটাই ওরা ক্ষমতার অপব্যবহারকারী। তদোপরি সম্প্রতি পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যে কান্ড ঘটেছে ইহাকেও হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। দেশের নির্বাহী বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের অন্যতম অর্গান। এখানেই যদি একটার পর একটা অনিয়ম পরিলক্ষিত হয় তবে মানুষের আশ্রয়ের জায়গাই বা কোথায় ? পরিশেষে বলব, দুর্নীতিবাজদের শুধু রাজনৈতিক দল থেকেই নয়, শাসন, প্রশাসনসহ সব জায়গা থেকে বিদায় বার্তা জানিয়ে আইনের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে এক সময় সব অর্জন, উন্নয়ন ব্যর্থ ও থুবড়ে পড়লে বেদনার শেষ থাকবেনা বলে দেশের মানুষ মনে করে থাকে। দুদক গোয়েন্দা তদারকির মাধ্যমে যে ২৫টি জেলা ও ১৫৫টি উপজেলায় শকুনের মরা গরু ভক্ষণের মতো জনগণের সম্পদ ভক্ষণ ও ক্ষমতার দাপটে যা ইচ্ছা তা করে যাচ্ছে তাদের রেহাই না দিয়ে শাস্তির ব্যবস্থাই জনপ্রত্যাশা। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, “দুর্নীতি করে এলাকায় প্রভাব খাটাবেন, সেদিন ভুলে যান।” দেশের মানুষ এ উচ্চারণে যেমন আস্থাশীল, তেমনি এর প্রতিফলন ও বাস্তবায়ন দেখতে গভীর আগ্রহের সাথে অপেক্ষায় আছে।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট