পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) দেশের ২৮ শিল্প হাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। সেজন্য আরইবি এক হাজার ২৪০ কোটি টাকার একটি গ্রকল্প গ্রহণ করেছে। ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী ১২ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ওসব শিল্প হাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। ওই শিল্প হাবগুলোতে দৈনিক এক হাজার ৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। ৬ মাস থেকে ৪ বছর মেয়াদি তিন ধাপে আরইবির প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ওই শিল্প হাবগুলো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাবে। আরইবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না পাওয়াতে শিল্প উদ্যোক্তারা গ্রিডের বিদ্যুতে আস্থা রাখতে পারে না। তারা বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শিল্প পরিচালনা করে থাকে। সরকার মনে করে শিল্পে বিদ্যুতের সরবরাহ বৃদ্ধি না করা গেলে দেশের অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বসে থাকতে হবে। তাতে বিদ্যুৎ খাত বিপুল পরিমাণ লোকসানের মুখে পড়বে। সেজন্য সব বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানকে শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন দেশে ২৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক চাহিদা রয়েছে। সঙ্গত কারণেই শিল্প গ্রাহক বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, আরইবির যেসব সমিতিতে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি ওসব সমিতিতে প্রথমে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরে দেশের বেশিরভাগ শিল্প কারখানা রয়েছে। সেখানে তৈরি পোশাক কারখানার পাশাপাশি গড়ে উঠেছে টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় কারখানা। শ্রমঘন ওসব কারখানার অনেকেই গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে না। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ঢাকা-১ এর নবীনগগর, চন্দ্রা মোড়, আশুলিয়া শিল্পহাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহর উদ্যোগ নিয়েছে। শিল্পহাব তিনটিতে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৫৫ মেগাওয়াট। সেজন্য ৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া ঢাকা-৩ এ সাভার এবং ঢাকা-৪ এ শুভাঢ্যা জিঞ্জিরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের আওতায় আনা হচ্ছে। সাভার শিল্পগুলোর জন্য প্রয়োজন হয় ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেজন্য ৫৫ কোটি টাকা ব্যায়ের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আর জিঞ্জিরার জন্য ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, আরইবির নারায়ণগঞ্জ-১ এবং ২ সমিতি দুটি নিরবচ্ছিন্ন শিল্প বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আসছে। তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-১ সমিতিতে তারাবো, কাঁচপুর, সোনারগাঁও, মেঘনাঘাট এবং মদনপুর শিল্পহাব রয়েছে। ওই হাবে মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ ২১০ মেগাওয়াট আর সেখানে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-২ এ মুড়াপাড়া, ভূলতা এবং গাউসিয়া শিল্পহাবে ২৪ মেগাওয়াট নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে ৩০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া ময়মনসিংহ-২ সমিতির মাওনা এবং ভালুকা দুটি শিল্পহাবে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহে ১৪০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের আওতায় আসছে নরসিংদী-১ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২টি শিল্প এলাকা। ওই দুটি শিল্প এলাকা হচ্ছে মাধবদী এবং পাঁচদোনা। সেখানে প্রতিদিন ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। আর নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে দিতে সেখানে আরো ২০ কোটি টাকার ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নরসিংদী-২ এর তিনটি শিল্প এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হবে। ওই তিনটি শিল্প এলাকা হচ্ছে চৌয়ালা, ইটাখোলা, শিলমান্দি। সেখানে প্রতিদিন ৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। আর তাতে ২০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আসছে কুমিল্লা-৩ সমিতির গজারিয়া। সেখানে প্রতিদিনের বিদ্যুতের চাহিদা ৩৫ মেগাওয়াট। আর সরবরাহ নিরবিচ্ছন্ন করতে ২৮০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। একইভাবে ঢাকার পার্শ^বর্তী গাজীপুরের দুটি সমিতির ৬টি শিল্পহাব নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আসছে। সেগুলো হচ্ছেÑ গাজীপুর-১ সমিতির কাশিমপুর, বোর্ডবাজার, কড্ডা, জয়দেবপুর এবং কোনাবাড়ি। প্রতিদিন ওই পাঁচ শিল্প এলাকায় ১৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। সেজন্য সব থেকে বেশি ৪৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আর গাজীপুর-২ সমিতির রাজেন্দ্রপুর শিল্প এলাকায় ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিরবিচ্ছন্ন সরবরাহে ২৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া টাঙ্গাইল-১ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মির্জাপুর এলাকায় ৫০ মেগাওয়াট নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের জন্য ৫৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, শিল্পহাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য প্রতিটি বিতরণ প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প তৈরি করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগে জামা দিতে বলা হয়েছে। যতো দ্রুত সম্ভব ওসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তাতে শিল্প এলাকা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আসবে।