সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ৬ মার্চ ১৯৯৬ সনে বিএনপির একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের আন্দোলনে বিডিআরের গুলিতে নিহত ৪ শহিদের সাথে আহত ইমজিয়াজ আহমেদ জিয়া পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে আওয়ামী লীগের আন্দোলন উপেক্ষা করে তৎকালিন ক্ষমতাসিন দল বিএনপি। ৬মার্চ ১৯৯৬ নির্বাচনের দিন ধার্য করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি আদায়ের সাথে ৬ই মার্চের একদলিয় প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলনে যুক্ত হয়ে দেশে যেন যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়। সে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জনগণ তথা আন্দোলনকারি নেতাকর্মীদের সামনে উপস্থিত হয় ৬মার্চ ১৯৯৬। শক্ত অবস্থানে ক্ষমতাসিন দল বিএনপি ও বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। বিএনপির উদ্দেশ্য যেকোন মূল্যে নির্বাচন করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা। আওয়ামী লীগ চায় নির্বাচন প্রতিহত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদায় করা। ৫ই মার্চ থেকে রণসাজে সাজতে থাকে বিএনপি সরকারের বিডিআর ও পুলিশ। অন্যদিকে মৃত্যুজয়ী আওয়ামী লীগের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী। অস্ত্র তাদের লগি, বৈঠা মুখে মরণজয়ি স্লোগান “জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু”। সারাদেশের ন্যায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ ছাত্রলীগের আন্দোলন আওয়ামী লীগের দাবি আদায়ে উত্তাল নদীর কিনারে তরী ভিড়িয়ে দেয়। ৬মার্চ সকাল থেকে চান্দাইকোনা হাজি ওয়াহেদ মরিয়ম ডিগ্রি কলেজ মাঠ চত্বরে জমায়েত হয় হাজার হাজার নেতাকর্মী। সেখান থেকে বাস-ট্রাক ও মটরসাইকেল যোগে নির্বাচন প্রতিহত করতে ভূইয়াগাঁতী কেন্দ্রে উপস্থিত হয়। নির্বাচন বন্ধ করতে বিডিআর সুবেদারের সাথে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত এমপি ইসহাক হোসেন তালুকদার, প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ সরকার, বগুড়া কৃষকলীগের সহ-সভাপতি গোলাম আজম, শেখ শহিদুল ইসলাম প্রমুখ। কেন্দ্র প্রিজাইডিং অফিস কক্ষে চলছিল সুবেদারের সাথে বৈঠক আর বাইরে চলছিল ছাত্রলীগের আকাশ কাঁপানো স্লোগান। বৈঠক শেষে ইসহাক হোসেন তালুকদারের নেতৃত্বে হাজারো ছাত্রলীগ কর্মীরা মিছিল সহকারে মহাসড়কের দিকে যাচ্ছিল এমন সময় মিছিলের উপর বিডিআর বাহিনী নির্মমভাবে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এ সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ছাত্রলীগ নেতা আনন্দ, বুলবুল, জসমত ও রানা। রক্ত গঙ্গায় লাল হয়ে যায় ভুইয়াগাঁতীর মাটি। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় রায়গঞ্জ উপজেলার সিমলা গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া মরহুম আবদুল মবিন তালুকদারের পুত্র ছাত্রলীগ নেতা ইমজিয়াজ আহমেদ জিয়া, বেটখোর গ্রামের শফি সহ বেশ কয়েকজন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় জিয়াকে প্রথমে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ও পরে বর্তমান এমপি অধ্যাপক ডাঃ আবদুল আজিজের তত্ত্বাবধানে তৎকালিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। বিডিআরের গুলিতে হতাহতের এ সংবাদটি বিবিসি বাংলা ও ভয়েস অব আমেরিকা সহ বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ৬মার্চ ১৯৯৬ দিবসটি রায়গঞ্জ উপজেলাবাসি আজও রক্তাক্ত ভূইগাঁতী দিবস হিসেবে পালন করে। রায়গঞ্জের এই রক্তাক্ত ঘটনা সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলন যেন ফুঁসে ওঠে দাবানলের মত। তাঁর চিকিৎসায় বর্তমান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ফেরদৌস জামান মকুল সহ অনেকেই হাত বাড়িয়ে দেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে সভানেত্রী জননেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করেন। তারপর দীর্ঘদিন যাবত পরিবারটি আহত জিয়ার চিকিৎসা ব্যয় চালাতে গিয়ে সর্বোস্ব হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে জিয়া হাটুর উপরিভাগে উরুর হারে আটকে থাকা গুলি বহন করে চলে দীর্ঘ ৮ বছর। অবশেষে ২০০৩ সালে ডাঃ আশরাফুল ইসলামের মহানুভবতায় সিরাজগঞ্জ হাসপাতালে অস্ত্রপচার করে গুলি অপসারণ করে। শহীদ ও আহতের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আজ যে আওয়ামী লীগ সরকারে। আজ সেই সরকারের সুবাতাসে ফুঁলে ফেঁপে অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেলেও ৪ শহীদ সহ আহত পরিবারের খবর কেউ রাখে না। গত শনিবার চান্দাইকোনা হাজি ওয়াহেদ মরিয়ম ডিগ্রি কলেজে ছাত্রলীগের ছাত্রসমাবেশে বক্তাগণ ৪ শহীদকে বার বার স্মরণ করলেও মানবেতর জীবন যাপন করার আহত জিয়া সহ অন্যান্যের একবারও মনে পড়েনি। অথচ দর্শকের প্রথম সারিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাদি আলমাজি জিন্নাহ সহ অন্যান্য অতিথিদের সাথে বসে থেকে জিয়াও শ্রবণ করছিলেন বক্তাদের বক্তব্য। মাঝে মধ্যেই দেখা যায়, লুকিয়ে লুকিয়ে চোখ মুছতে। সভা শেষে মহাসড়কে দাঁড়িয়ে কথা হয় জিয়ার সাথে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন, আমাদের কেউ মনে রাখেনি। সেদিন ওদের সাথে আমার মৃত্যুই বেঁচে থাকার চেয়ে অনেক ভাল ছিল। জিয়ার ২ সন্তান সিরাজগঞ্জ পিডিবি উচ্চবিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র তোজাদ আহমেদ তালুকদার তৃষাণ, দ্বিতীয় পুত্র একই বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেনির ছাত্র তানজিদ আহমেদ তালুকদার তিতাস। যাদের পড়াশুনার ব্যয় নির্বাহ, আহার যোগানো সহ সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয় আহত জিয়াকে। ২৪ বছর আগে ১৯৯৬ সালের ৬মার্চ যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে জিয়ার জীবনে তা এখন চলছে অবিরত...